সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:৪৬ পূর্বাহ্ন

চলনবিলে ক্যানেল বন্ধ করে পুকুর খনন শত শত হেক্টর কৃষি জমি জলাবদ্ধতা

চলনবিলে ক্যানেল বন্ধ করে পুকুর খনন শত শত হেক্টর কৃষি জমি জলাবদ্ধতা

শাহাদত হেসেন, চলনবিল প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের চলনবিলে অপরিকল্পিতভাবে অবৈধ পুকুর খননে দীর্ঘ ছয় বছর ধরে জলাবদ্ধতায় তিন থেকে চার ফসলি জমিগুলো বছরে সাত থেকে আট মাস পানিতে ডুবে থাকে। এ কারণে ওই ফসলি মাঠে রোপা আমন ধান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা। ব্রিজ কালভার্ট ও ক্যানেল মুখ বন্ধ কওে পুকুর খননে শস্য ভান্ডার খেত চলনবিলের চরহাজার বিঘা কৃষি জমিতে ভয়াবহ কৃত্তিম জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এ সমস্যা নিরসন না হলে প্রন্তিক কৃষক পরিবারগুলোতে একবেলা ভাত জুটনো কষ্টকর হয়ে যাবে।

জানা গেছে, চলনবিলে তাড়াশ উপজেলার মাধবপুর, বোয়ালিয়া, সরাপপুর, ঝুরঝুরী, ভিকমপুর, জাহাঙ্গীরগাঁতী, মথুরাপুর, বিদি মাগুড়া, শ্রী কৃষ্ণপুর, সান্তান এবং উল্লাপাড়া উপজেলার আগরপুর, খুদ্রশিলার,পুকুরপাড়সহ ১৫ থেকে ১৭ টি গ্রামের আশপাশের এ কৃষি জমিগুলোর মাটি ছিল খুব উর্বর। যেখানে ভাদ্র মাসে এ এলাকার জমিতে পানি থাকে না। সেখানে কার্তিকেও শতশত বিঘা জমিতে পানি আটকে আছে। আগাছায় ভরে আছে ফসলি মাঠ। কোনো ফসলের আবাদ চোখে পড়ে না। শুধু বোরো মৌসুমে একটি ফসলের আবাদ হয়। পানি নামতে দেরি হওয়ায় নাবী আবাদের ফলনও ভালো হয় না।

তাড়াশের কৃষক মুনসুর আলী বলেন, এক দশক পূর্বেও এসব জমিতে সরিষার আবাদ তুলে আলুর আবাদ করতাম। আবার আলু তুলে ধানের চাষ। এভাবে পর্যায়ক্রমে কমপক্ষে তিনটি আবাদ হতো। কিন্তু সর্বনাশা পুকুর খননের কারণে এখন ফসলি জমিগুলো খন্ড-খন্ড বিলে রূপ নিয়েছে। যেখানে পানি নামার পথ নেই। তাই একটির বেশি আবাদও হচ্ছে না। আর এভাবে চলতে থাকলে এ অঞ্চলের কৃষকদের আর্থিক মেরুদন্দ বলতে কিছু থাকবে না।

উল্লপাড়ার কৃষক এমদাদুল হক লাবু জানান, এসব জমিতে সরিষা, গম, আলু, ধান, পাটসহ বছরে তিন থেকে চারটি ফসল ঘরে তুলতেন এ এলাকার শতশত কৃষক। এতে করে তাদের সংসারে অন্তত ডাল-ভাতের অভাব ছিল না। অথচ অতি উর্বর এসব ফসলি জমিতে ধানের চেয়ে মাছ চাষে অধিক লাভ হয় এ ধরনের লোভে আট থেকে দশ বছর পূর্বে কিছু কৃষককে ফুসলিয়ে অবৈধভাবে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে পুকুর খননে উৎসাহিত করে কিছু অসাধু মাছ ব্যাবসায়ী ইট ভাটার মালিকেরা । এরই মধ্যে চলনবিল এলাকায় তিন ফসলি জমিতে পুকুরের সংখ্যা দিন দিন বেরেই চলছে। এতে আবাদি জমি কমার সঙ্গে সঙ্গে খাদ্য শস্যের উৎপাদনও কমছে।

কৃষক নেতা শামিম হায়দার বলেন,যত্রতত্র পুকুর খননে পানি প্রবাহের জন্য সরকারি অর্থায়নে করা পানি নিষ্কাশনের জন্য গুরুত্বপৃর্ণ ব্রিজ ও কালভার্টের মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। যে কারণে ফসলি জমির পানি বের হতে না পেরে স্থায়ীভাবে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বিঘা জমিতে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। যার মাশুল দিচ্ছেন এ অঞ্চলের নিরীহ খেটে খাওয়া কৃষকরা।

তাড়াশ সদর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শাহ রেজা সেতার বলেন, অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র অবৈধ পুকুর খননের কারণে আমাদের পূর্ব তাড়াশের পাঁচটি গ্রাম এক বুক পানির নিচে হাজার-হাজার বিঘা উর্বর আবাদি জমি বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে। এসব জমির জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। নইলে আগামী রবি শস্য ও বোরো চাষাবাদ হুমকির মুখে পড়বে।

জলাবদ্ধতার ভয়াবহতা নিয়ে চলনবিলের কৃষক বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক মীর শহিদুল ইসলাম বলেন, চলনবিল এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে মানববন্ধন, কৃষক সমাবেশ সবই হয়েছে। পাশাপাশি পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং বিএডিসি খাল খননের উদ্যোগও নিয়েছে। কিন্তু কেউ খাল খননের জমি দিতে চান না। তার পরও আমি এ অঞ্চলের তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার বিঘা জমির ভয়াবহ জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।

পুকুর খনন বন্ধ না করলে ওই এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব না বলে প্রতিদিনের কাগজকে জানান তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আবব্দুল্লাহ আল মামুন।
উল্লাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবর্ণ ইসমিন (সুমি) প্রতিনিদিনের কাগজকে বলেন, উপজেলার আগরপুরে বেশি পারিমান কৃষি জমি জলাবদ্ধতা রয়েছে । এ বিষয় ইউএনও স্যারের সাথে কথা বলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।

এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুইচিং মং মারমা বলেন, পুকুর খনন তাড়াশ উপজেলায় একটি বড় সমস্যা। আর পুকুর খননের ফলে যে জলাবদ্ধতা হয়েছে, তা সরেজমিন দেখে নিরসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সালে মোহাম্মাদ হাসনাত প্রতিদিনের কাগজকে বলেন, কৃষকগণের অভিযোগের ভিত্তিতে আমাদেও অফিসারগণ মাঠ পরিদশন করেছে এবং কৃষি জমি জলাবদ্ধতা নিরাসনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2025 Protidiner Kagoj |