মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:১৮ পূর্বাহ্ন

রেললাইন ঘেঁষে বহুতল ভবন নির্মাণ, ট্রেন দূর্ঘটনার আশঙ্কা, কর্তৃপক্ষ নির্বিকার

রেললাইন ঘেঁষে বহুতল ভবন নির্মাণ, ট্রেন দূর্ঘটনার আশঙ্কা, কর্তৃপক্ষ নির্বিকার

রাশেদুল ইসলাম আপেল, নীলফামারীঃ নীলফামারীর সৈয়দপুরে রেললাইন ঘেঁষে নির্মাণ করা হচ্ছে বহুতল ভবন। ভবনটি নির্মাণ সম্পন্ন হলে ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন হওয়া সহ দূর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। অথচ আরসিসি পিলার দিয়ে প্রকাশ্যে এই কাজ করা হলেও নির্বিকার রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

শহরের অত্যাধুনিক সৈয়দপুর প্লাজা সুপার মার্কেটের সামনে সৈয়দপুর-পার্বতীপুর রুটের রেল লাইনের পাশে রেলওয়ের জায়গায় গড়ে তোলা হচ্ছে একটি বহুতল দোকানঘর। লাহোর টেইলার্স নামের এই দোকানটি টিনসেড ছিল। সেটি ৩৫ লাখ টাকায় কিনে নিয়ে আরসিসি পিলার দিয়ে দোতলা বিল্ডিং করছে সাজু ইলেকট্রিক এর মালিক।

স্থানীয় একটি সূত্র মতে, ইতোমধ্যে এই দোকানটি ৫ লাখ টাকা জামানত ও মাসিক ২২ হাজার টাকা ভাড়ায় নিয়েছে নান্না বিরিয়ানি নামে এক ব্যবসায়ী। সে কারণে দিন রাত কাজ করা হচ্ছে ভবনের। রেলওয়ের জায়গায় এবং রেললাইন ঘেঁষে পূর্বের চেয়েও দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে ভিত্তি। কিন্তু নির্বিকার সৈয়দপুর রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), ভূসম্পত্তি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (এইএন) ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী (আইওডাব্লু)।

এব্যাপারে ভবন নির্মাণকারী সাজু মিয়ার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, দোকানটি কিনে নিয়ে যথারীতি রেলওয়ের পাকশি স্টেট অফিস থেকে নিজ নামে বরাদ্দ লাইসেন্স নিয়েছি। তাই ভবন নির্মাণ করছি। স্থানীয় রেলওয়ের সবাই জানে। ভবন নির্মাণ অবৈধ হলেতো কর্তৃপক্ষই বাধা দিতো। তারা নিরব থাকলেও সাংবাদিকরা অহেতুক হয়রানি করছেন কেন?

সৈয়দপুর রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোমিনুল ইসলাম বলেন, রেলওয়ের জায়গায় কোন স্থাপনা নির্মাণ হলে তা দেখার দায়িত্ব মূলতঃ পাকশীর রেলওয়ে এস্টেট ডিপার্টমেন্টের এবং স্থানীয় এইএন, আইওডাব্লু বিভাগের। তারা অবৈধ কাজ বন্ধ করতে প্রয়োজন হলে আমাদের সহযোগিতা নিতে পারে। তাহলে আমরা তাদের সাথে যাবো। নয়তো আমাদের করার কিছু নাই।

সৈয়দপুর রেলওয়ে ট্রাফিক বিভাগ তথা ওপেন নাইন কর্তৃপক্ষ পিডাব্লিউ অফিসের কর্মকর্তা সুলতান মৃধার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ট্রেন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী রেল লাইনের দুই পাশের অবৈধ দোকান পাট নিয়মিত অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করা হয়। বিশেষ করে সিগন্যাল দেখতে বিঘ্ন হওয়া অবকাঠামো কোনভাবেই রাখা হয়না। তারপরও নির্ধারিত সীমানার মধ্যে এসে অনেকেই স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করে। খবর পেলে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে আমরা ব্যবস্থা নেই। কিন্তু উল্লেখিত ভবন বা দোকান নির্মাণ বিষয়ে আমরা কিছু জানিনা।

রেলওয়ে ভূসম্পত্তি বিভাগের সৈয়দপুরে দায়িত্বরত উপ-সহকারী প্রকৌশলী (আইওডাব্লু) শরিফুল ইসলাম বলেন, দোকানটি নির্মাণের খবর পেয়ে নিষেধ করা হয়েছে। তারপরও কাজ চলছে। লোকবলের অভাবে এই অবৈধ কাজ বন্ধ করতে পারছিনা। উপর মহলে জানিয়েছি। প্রয়োজনীয় নির্দেশ পেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। তার আগে আমাদের আর কিছুই করার নাই।

অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট রেলওয়ের সকল কর্মকর্তাকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সহযোগিতায় রেললাইন ঘেঁষে এই বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। যে কারণে নানা অজুহাতে কর্তৃপক্ষ তাদের দায়িত্ব অবহেলা করে নির্বিকার ভূমিকা পালন করছে। ভবনটি নির্মাণ সম্পন্ন হলে দক্ষিণ দিকের আউটার সিগন্যাল দেখার ক্ষেত্রে ট্রেন চালকদের সমস্যা হবে। এতে যে কোন সময় বড় ধরনের দূর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। তাই বিষয়টি নিয়ে রেলওয়ের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি ও হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন এলাকার দোকানমালিক ও ব্যবসায়ীরা।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2025 Protidiner Kagoj |