বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ০২:২৭ অপরাহ্ন
বিশেষ প্রতিনিধি: ইয়াবার জোয়ারে ভাসছে কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরসদর। চকরিয়া পৌরসভা সদর থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লায় ও গ্রামের প্রতিটি এলাকায় মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে ইয়ারা ব্যবসা। রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হওয়ার স্বপ্নে বিভোর উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণী ও যুবকরা।
প্রভাবশালী ও পুলিশের ছত্রছায়ায় এ ব্যবসার পরিধি প্রতিনিয়ত বেড়ে উঠলেও তা বন্ধে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছে প্রশাসন। ফলে চকরিয়া পৌরশহর ইয়াবার স্বর্গরাজ্যে পরিনত হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে জনপ্রতিনিধি ও নারীদের বড় একটি অংশও এখন ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে রাতারাতি কোটিপতি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাৃহিনীর কঠোর নজরদারি থাকা সত্তেও কোনোভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না ইয়াবা পাচার।
মাঝেমধ্যে থানা ও ফাঁড়ি পুলিশের টহলরত টিমের হাতে ইয়াবার চালান ধরা পড়লেও জব্ধ তালিকায় উদ্ধারকৃত ইয়াবার সাথে জব্ধ তালিকায় দেখা যায় বড় ধরনের ফাঁক-ফোকর। হিসেবে গোজামিল রেখে উদ্ধারকৃত ইয়াবা গুলো পুনরায় ইয়াবা পাচারকারীদের কাছে বিক্রি করে অনেক পুলিশ কর্মকর্তা অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। এবিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকে গতকাল (২৫ ডিসেম্বর) একটি অভিযোগ জমা হয়েছে । ইয়াবা বহনকারীর জব্দকৃত প্রাইভেট কার গুলো নিয়ে অনেক পুলিশ কর্মকর্তা যথেচ্ছ ব্যবহার করছে নিজের খরিদাকৃত গাড়ির মতো।
কক্সবাজার জেলায় প্রতিনিয়ত বিজিবি, কোস্টগার্ড, র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের জালে ধরা পড়ছে ইয়াবার বড় বড় চালান। পাশাপাশি থানা পুলিশও বসে নেই। তাদের হাতেও নিয়মিত ধরা পড়ছে ইয়াবা ব্যবসায়ী ও ইয়াবার চালান। এরপরও প্রতিযোগিতামূলকভাবে পাড়া-মহল্লায় চলছে ইয়াবা বিকিকিনি। চকরিয়া পৌরশহর জুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কয়েক শতাধিক শতাধিক মাদক ব্যবসায়ী।
কোন ভাবেই তাদের দমানো যাচ্ছে না। এলাকা ভিত্তিক এসব ইয়াবা ব্যবসায়ী গড়ে তুলেছে মাদকের শক্তিশারী সিন্ডিকেট। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একাধিক অভিযানের পরও অবাধে চলেছে তাদের মাদকের বাণিজ্য। বর্তমানে শহরে বিভিন্ন স্পটে ইয়াবাসহ মাদকের আগ্রাসন বেড়েই চলছে। ফলে মাদকাসক্ত হয়ে এলাকায় যুব সমাজ প্রতিনিয়ত বিপদগামী হচ্ছে। এতে উদ্বিগ্ন রয়েছেন অভিভাকসহ সচেতন মহল।
বিশেষ করে চকরিয়া উপজেলা ও পৌরসদরসহ বিভিন্ন এলাকার কাউন্সিলার, চেয়ারম্যান, মেম্বার, রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ ডজনের অধিক জনপ্রতিনিধি সরাসরি ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার পরও পুলিশ প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করে রয়েছে। চকরিয়া পুলিশ প্রশাসন মাঝে মধ্যে লোক দেখানো ইয়াবা উদ্ধারের অভিযান চালিয়ে গেলেও অধরাই থেকে যায় প্রকৃত গডফাদাররা। পুলিশ প্রশাসন ও সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা চকরিয়া পৌরসদরসহ পাড়া-মহল্লায় কারা ইয়াবা ব্যবসা ও সেবন করে তা জানার পর রহস্যজনক কারণে নিরব রয়েছে।
তবে পুলিশ প্রশাসন মাঝে মধ্যে নামমাত্র অভিযান চালিয়ে কিছু কিছু মাদকদ্রব্য ও ইয়াবা উদ্ধার করে অপরাধীদের আটক করা হলেও আইনের ফাক-ফোঁকর দিয়ে আটককৃতরা ৩/৪ মাসের ব্যবধানে জেল থেকে জামিনে বেরিয়ে ফের মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে।
চকরিয়া পৌরসদরসহ ও আশপাশের এলাকা সমুহে সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে ইয়াবা বিকিকিনির নিয়মিত হাট বসে। সদরের ফুটপাত, ফলের দোকান, বিড়ি সিগারেটের দোকান, ফুটপাতের রাস্তা ও মার্কেটের অলিতে গলিতে ১৫ থেকে ৩৫ বছর রয়সের অর্ধশতাধিক যুবক প্রকাশ্যে এসব মরণ ঘাতক ইয়াবা ব্যবসা ও সেবনের সাথে জড়িত রয়েছে। চকরিয়া পৌরসদরের চিরিঙ্গা বাস ষ্টেশন, হালকাকারা বটতলী, মৌলভীরচর, জনতা মার্কেট, ঘনশ্যামরাজার, চৌমহনী, হিন্দুপাড়া, সবুজবাগ আবাসিক, নিরিবিলি আবাসিক, বিজয় মঞ্চ সংলগ্ন এলাকা, ফুলতলা, বাসটার্মিনাল, ভাঙ্গারমুখ, মৌলভীরকুম, ভেন্ডীবাজার, মগবাজার, কোর্ট সেন্টার, থানা সেন্টার, থানা রাস্তার মাথা, মাষ্টার পাড়া, তেলীপাড়া, কসাইপাড়া, ফুলতলা, হিন্দুপাড়া, ওয়াপদা সড়ক, কাঁচাবাজার সড়ক, চিরিঙ্গা পুরাতন বাসষ্টেশন, পুরাতন এস আলম কাউন্টারসহ পৌরসদরের ছোট বড় অর্ধশতাধিক মার্কেট ও সড়কের অলিতে গলিতে চলছে খুচরা ইয়াবা ব্যবসা।
চকরিয়া পৌরসদরের রয়েছে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের মধ্যে ডজন খানেক নামধামী গডফাদার। ওই গডফাদাররাই পৌরসদরসহ চকরিয়া-পেকুয়ার ২৫টি ইউনিয়নের ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। গত কয়েক বছর আগেও যাদের কিছুই ছিলনা! ইয়াবা ব্যবসা করে তারা এখন জনপ্রতিনিধি হওয়ার পাশাপাশি গাড়ি ও বাড়ির মালিক। ওইসব ইয়াবার গডফাদাররা সমাজসেবক ও জনদরদি সেজে প্রতিনিয়ত মসজিদ-মন্দিরে দান-সৎকা করতেও দেখা যায়।
গোয়েন্দা সংস্থা ও দুদক কর্মকর্তারা এসব রাতারাতি কোটিপতি হওয়া এসব গাড়ি-বাড়ির মালিক ও নব্য দানবীরদের প্রকৃত আয়ের উৎস খোঁজে বের করে জবাবদিহিতার আওতায় আনার জন্য চকরিয়ার সতেচন মহল দাবি জানিয়েছেন