বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৪৭ অপরাহ্ন

জলাবদ্ধ ৮০ বিলে বোরো আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে দুশ্চিন্তায় কৃষক

জলাবদ্ধ ৮০ বিলে বোরো আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে দুশ্চিন্তায় কৃষক

হারুনার রশীদ বুলবুল, কেশবপুর (যশোর): যশোরের কেশবপুরে পৌর এলাকাসহ পূর্বাঞ্চলের ৮০ বিল পানিতে ডুবে থাকায় কৃষকরা বীজতলা তৈরি করতে পারছে না। এতে বেড়েছে উঁচু জমির কদর। বীজতলা তৈরিতে প্রতি শতাংশ জমির দর হাকা হচ্ছে ২ হাজার টাকা করে। চার মাস ধরে কৃষকরা লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে জলাবদ্ধ বিলের পানি সেচপাম্প দিয়ে নিষ্কাশন চালিয়ে গেলেও পানি কমছে ধীর গতিতে।

দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকা প্রতিনিধি হারুনার রশীদ বুলবুল উপজেলার বিভিন্ন জলবদ্ধ এলাকা ঘুরে তথ্য চিত্র সংগ্রহ করেন এবং কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায় উঁচু এলাকার কৃষকরা যখন বোরো বীজতলায় চারা তৈরি করে রোপণে ব্যস্ত, তখন জলাবদ্ধ এলাকার কৃষকরা বিলের পানি নিষ্কাশনে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। এছাড়া ঘের মালিকরা ৩০ পৌষের মধ্যে বিলের পানি নিষ্কাশন করে বোরো আবাদ করে দেয়ার শর্তে ঘের করলেও তাদের স্বেচ্ছাচারিতায় শেষ পর্যন্ত বিলের পানি নিষ্কাশন নিয়ে রয়েছে সন্দিহান।

কৃষকরা জানায়, গত জুলাই- আগস্টে এ উপজেলায় ভারি বর্ষণ হয়। প্রধান নদ-নদী ও সংযোগ খালের নাব্যতা না থাকায় পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে পৌরসভাসহ সদর ইউনিয়নের ৮ বিল, পূর্বাঞ্চলের পাঁজিয়া, সুফলাকাটি ইউনিয়নের ৬২ বিল ও গৌরিঘোনা ইউনিয়নের ১০ বিলসহ ৮০ বিল এলাকার ১০৪ গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়। গত সেপ্টেম্বর থেকে কৃষকরা বছরের একমাত্র ফসল বোরো আবাদের লক্ষ্যে বৈদ্যুতিক ও ডিজেল চালিত সেচপাম্প দিয়ে বিলের পানি নিষ্কাশন চালালেও পানি কমছে ধীর গতিতে। আগামী এক মাসের মধ্যে যদি চাষ শুরু করা না যায়, তাহলে বিলে বোরো আবাদ হবে না।

বিদ্যানন্দকাটি ইউনিয়ন পানি নিষ্কাশন কমিটির সদস্য সচিব গাজী কামরুল ইসলাম বলেন, তার ইউনিয়নসহ মঙ্গলকোট, মজিদপুর ইউনিয়নের ২৫ বিলের পানি তরুর খাল দিয়ে ভদ্রা নদীতে নিষ্কাশন হয়। এ লক্ষ্যে নরনিয়ায় অস্ত্রা নদীর পাড়ে ২২টি সেচপাম্প লাগানো হয়েছে। এছাড়া, বুডুলি, পাথরা গেটে ৬২ বিল, কন্দর্পপুর ফ্লুইসগেটে ২৭ বিলসহ গরালিয়া বিলের পানি নিষ্কাশনে শত শত সেচপাম্পে চলছে। নারায়নপুর গ্রামের কৃষক আবদুল মালেক জানান, এখনো গ্রামের রাস্তা পানিতে তলিয়ে আছে। বিলের পানি নিষ্কাশন চলছে। উঁচু জমির অভাবে বীজতলা তৈরি করতে পরছি না। বীজতলা তৈরিতে উঁচু জমির কৃষকরা প্রতি শতাংশে দর হাকাচ্ছে ২ হাজার টাকা করে। তাই আত্মীয় বাড়িতে বীজতলা তৈরির চেষ্টা করছি। পানির যে অবস্থা তাতে এবার বিলে ধান আবাদ হবে না। উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বোরো আবাদের মৌসুম ধরা হয়। চলে মধ্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। কেশবপুরে এবার ১৩ হাজার ১ শত ২৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার অর্ধেকই পানির তলে।

উঁচু এলাকায় জমি রোপণ চলছে। বুডুলি, পাখরা, কন্দর্পপুর, গরলিয়াসহ জলাবদ্ধ বিলের পানি নিষ্কাশন চলছে। পানি নিষ্কাশন সম্ভব হলে দেরিতে হলেও এ সব বিলে বোরো আবাদ হবে। হরি, ঘ্যাংরাইল পানি নিষ্কাশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বিলের গানি খাল দিয়ে নদীতে নিষ্কাশন হয়। পলি জমে বুড়িৎদ্রা, হরিহর, আপারভদ্রা, হরি ও তার সংযোগ খাল নাব্য হারিয়েছে। যে কারণে পানি নিষ্কাশন হয়নি। পাথরা খালে পানি না থাকায় নিষ্কাশন বন্ধের উপক্রম হয়েছে। এখনো ২৭ বিলের সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর জমিতে অথৈই পানি। ২৭ বিল পানি নিষ্কাশন কমিটির আহ্বায়ক মাস্টার মকবুল হোসেন মুকুল বলেন, হরি নদীর সংযোগ বিল খুকশিয়ার ভায়ের খালের ৮ ব্যান্ডের সুইস গেট ও কাটাখালি বাজারের ৪ ব্যান্ডের ড্রইস গেট ভরাটের কারণে পূর্বাঞ্চলের পাঁজিয়া, সুফলাকাটি ইউনিয়নসহ মনিরামপুরের ৩ ইউনিয়নের ২৭ বিল ডুবে আছে।

বিল খুকশিয়ার ডায়ের খালের ৮ ব্যান্ডের সুইস গেটের পাশে সেচপাম্প বসানোর কাজ চলছে। এখনো শুরু করতে পারেনি পানি নিষ্কাশন কাজ। উপজেলা কৃষি অফিসার মাহমুদা আক্তার বলেন, চলতি বছর ভয়াবহ বন্যার কারণে কৃষিতে ব্যাপক লোকসান হয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে পূর্বাঞ্চলের কৃষকরা এখনো বোরোর বীজতলা তৈরি করতে পারেননি। এতে বোরো আবাদ বিলম্বিত হতে পারে। আমনের লোকসান কমাতে এবার বোরো আবাদে জোর দেয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকির হোসেন বলেন, জলাবদ্ধ বিলের পানি নিষ্কাশন চলছে।

গত ৩০ ডিসেম্বরের আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় কৃষকদের সেচ সহায়তা হিসেবে ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা খুব তাড়াতাড়ি বিতরণ করা হবে।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2025 Protidiner Kagoj |