গনতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িকতার বিকাশ দরকার

মোঃ আল শাহারিয়া সুইট , ডিআইইউ সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ১৬ জুন, ২০২৫, ০১:৪৪ পিএম

গণতন্ত্রের চর্চা ও অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধের বিকাশ আজ সময়ের অপরিহার্য প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে সামাজিক পরিমণ্ডল সর্বত্রই মুক্তচিন্তা, সহনশীলতা ও সমঅধিকারের সংস্কৃতি গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা। তাঁদের মতে, একটি শান্তিপূর্ণ, উন্নয়নমুখী ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে গণতান্ত্রিক রীতিনীতির যথাযথ বাস্তবায়ন এবং অসাম্প্রদায়িক সমাজব্যবস্থা নিশ্চিত করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেছেন- মোঃ আল শাহারিয়া সুইট 

গণতন্ত্রের বিকাশের পূর্বশর্ত হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন।

বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার ভিত্তিতে। এ চেতনার মূল শক্তি হলো জনগণের ক্ষমতায়ন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার এবং ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল নাগরিকের সমান অধিকার। যদিও নির্বাচনকে গণতন্ত্রের প্রবেশদ্বার বলা হয়, তবুও গণতন্ত্র মানে কেবল নির্বাচন নয়; বরং এটি জবাবদিহিতা, আইনের শাসন এবং ন্যায়ের প্রতিষ্ঠার একটি পূর্ণাঙ্গ প্রক্রিয়া। অসাম্প্রদায়িকতা অর্থ ধর্মীয় ও জাতিগত ভেদাভেদ ভুলে মানবিক পরিচয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া।

তবে বাস্তবতায় রাজনৈতিক সংকীর্ণতা ও সাম্প্রদায়িক উস্কানির কারণে এসব মূল্যবোধ মাঝেমধ্যে বাধাগ্রস্ত হয়। এই বাধা অতিক্রমে শিক্ষা, সামাজিক সচেতনতা এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল মনে করে, গণতন্ত্রের বিকাশের পূর্বশর্ত হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। তাদের মতে, একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই এমন নির্বাচন সম্ভব, যেখানে জনগণের প্রকৃত রায় প্রতিফলিত হবে। একইসঙ্গে তারা একটি এমন সমাজ গঠনের পক্ষে, যেখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল নাগরিক নিরাপদ, সম্মানিত ও সমান সুযোগপ্রাপ্ত।

ছাত্রদলের বিশ্বাস, তরুণ প্রজন্মকে গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ করাই হচ্ছে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের টেকসই ভিত্তি গড়ার অন্যতম পথ।

মোঃ শাহরিয়ার সাগর

যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ছাত্রদল শাখা।

 

 

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি ঐতিহাসিক ও নৈতিক দায়িত্ববোধ থেকে জন্ম নেওয়া আন্দোলন, যার মূল লক্ষ্য সমাজে বিদ্যমান সব ধরণের বৈষম্য হোক তা সামাজিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় কিংবা রাজনৈতিক এর বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজকে ঐক্যবদ্ধ করে, একটি ন্যায়ভিত্তিক, মানবিক ও সমানাধিকারের সমাজ গড়ে তোলা।

এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িকতা এই দুটি পথই অপরিহার্য ও একে অপরের পরিপূরক। একটিতে থেকে অন্যটিকে এড়িয়ে গেলে, প্রকৃত সমাধান সম্ভব নয়।

বর্তমান সময়ে শুধু স্বচ্ছতার অভাব নয়, বরং নির্বাচনী ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতার সংকট, কার্যকর বিরোধী দলের অনুপস্থিতি, এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সংকোচনের মধ্য দিয়ে একটি জবাবদিহিহীন রাষ্ট্রব্যবস্থা তৈরি হচ্ছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিশ্বাস করে, গণতন্ত্রকে একটি "দৈনন্দিন সংস্কৃতি" হিসেবে প্রতিষ্ঠা না করতে পারলে ছাত্রদের অধিকার, মতপ্রকাশ ও অংশগ্রহণ সবকিছুই হুমকির মুখে পড়ে।

একইভাবে, সমাজে ধর্মীয় বৈষম্য, সংখ্যালঘু নির্যাতন, এবং ধর্মের কৌশলগত অপব্যবহার শুধু একটি ধর্ম নয় বরং গোটা মানবতাবোধকেই আঘাত করে। এই সংকটের মূল রয়েছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও সামাজিক প্রতিরোধের দুর্বলতায়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মনে করে, ধর্মনিরপেক্ষ চেতনা ছাড়া কোনো সমাজ প্রকৃত অর্থে সমান ও মানবিক হতে পারে না।

গণতন্ত্র কেবল ভোট নয়, বরং সব মানুষের স্বাধীন মতপ্রকাশ ও অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা। অন্যদিকে, অসাম্প্রদায়িকতা শুধুমাত্র ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থাই নয়, বরং সব ধর্ম-বর্ণ-জাতির মানুষের প্রতি সমান শ্রদ্ধা ও ন্যায়ের প্রতিশ্রুতি।

তাই, একটি বাদ দিয়ে আরেকটি গ্রহণ করলে, বৈষম্যের মূল শিকড় থেকে সমাজকে মুক্ত করা সম্ভব নয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিশ্বাস করে নাগরিকদের ও প্রতিষ্ঠানগুলোর পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে, রাষ্ট্রকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা দেখাতে হবে।

এই নীতিগুলোকে বাস্তবায়ন করার মাধ্যমেই একটি সমানাধিকারভিত্তিক, গণতান্ত্রিক এবং অসাম্প্রদায়িক সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব।

 

মোঃ শফিকুল ইসলাম

বৈছাআ সদস্য, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি শাখা

 

 

ছাত্র সমাজে মতের বৈচিত্র্যের সম্মান বজায় থাকে এবং সহিংসতা, ঘৃণা, বিভাজনের পথ বন্ধ হয়।

বর্তমান সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শুধু শিক্ষা ও জ্ঞানের কেন্দ্রীকরণ নয়, বরং সমাজের বৃহত্তর পরিবর্তনের এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য গনতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িকতার বিকাশ নিশ্চিত করা বিশেষভাবে জরুরি। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয় হলো আগামী প্রজন্মের নেতাদের পাড়া, যারা দেশ ও জাতির ভবিষ্যত গঠন করবে।

গনতন্ত্র অর্থাৎ জনগণের সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা এবং অসাম্প্রদায়িকতা অর্থাৎ ধর্ম, সম্প্রদায়, জাতি কিংবা বর্ণের ভেদাভেদ ছাড়াই সকলের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সমঅধিকারের প্রতিষ্ঠাই একটি প্রগতিশীল সমাজ গঠনের মূলে নিহিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক দলগুলো যদি নিজেদের কর্মসূচি ও কার্যক্রমে এই দুই মূলনীতিকে অগ্রাধিকার দেয়, তবে তা সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।

এক্ষেত্রে দলগুলোর দায়িত্ব হলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে মুক্তচিন্তা, সহিষ্ণুতা এবং পারস্পরিক সম্মান বাড়ানো। রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব থাকলেও তা যেন গনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ও মানবিক মর্যাদা রক্ষা করে পরিচালিত হয়। এছাড়া অসাম্প্রদায়িক মনোভাব গড়ে তোলা এবং ধর্ম, বর্ণ কিংবা জাতিভিত্তিক বিভাজন এড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল রাজনৈতিক দলকে একযোগে কাজ করতে হবে যাতে ছাত্র সমাজে মতের বৈচিত্র্যের সম্মান বজায় থাকে এবং সহিংসতা, ঘৃণা, বিভাজনের পথ বন্ধ হয়। গনতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িকতা প্রতিষ্ঠা না হলে দেশের উন্নয়ন অসম্ভব। তাই বর্তমান প্রজন্মের ছাত্র নেতাদের জন্য এই মূল্যবোধগুলি ধারণ করা একান্ত প্রয়োজন।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সমগ্র জাতির মধ্যে গনতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িকতার বিকাশ ঘটাতে হলে সকল রাজনৈতিক দল এবং শিক্ষার্থীকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে।

 

আবু সাঈদ

সাধারণ সম্পাদক, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি শাখা

 

 

 

খিলাফাহ শুধু ধর্ম নয়, বরং দীন ও দুনিয়ার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রব্যবস্থা

গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িকতা আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার একটি জনপ্রিয় ধারণা, যেখানে জনগণের মতামতের ভিত্তিতে শাসন চলে এবং ধর্ম বা বর্ণের ভিত্তিতে কোনো বৈষম্য রাখা হয় না। এতে মানুষ স্বাধীনভাবে ভোট দিতে, মত প্রকাশ করতে এবং নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারে। অসাম্প্রদায়িকতা সমাজে ধর্মীয় সহনশীলতা, শান্তি ও সম্মান বজায় রাখার কথা বলে।

অন্যদিকে, খিলাফাহ হলো ইসলামী শাসনব্যবস্থা, যেখানে একমাত্র আল্লাহর বিধানই রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি। খলিফা জনগণের অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, কিন্তু তিনি নিজের ইচ্ছামতো শাসন করেন না; বরং কুরআন ও সুন্নাহ অনুসারে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করেন। খিলাফাহ শুধু ধর্ম নয়, বরং দীন ও দুনিয়ার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রব্যবস্থা।

দুয়ের মধ্যে মূল পার্থক্য হলো উৎস ও উদ্দেশ্যে। গণতন্ত্র মানুষের তৈরি মতবাদের ওপর ভিত্তি করে চলে, যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতই আইন হয়ে ওঠে যদি তা অন্যায় হয়। অসাম্প্রদায়িকতা ধর্মকে ব্যক্তিগত করে ফেলে এবং সমাজ থেকে ইসলামী বিধানের স্থান সংকুচিত করে। অথচ খিলাফাহ আল্লাহর দেওয়া বিধানকে সর্বোচ্চ রাখে এবং সমস্ত ধর্মাবলম্বীর নিরাপত্তা ও ইনসাফ নিশ্চিত করে।

খিলাফাহ কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর নয়; এটি সমস্ত মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের প্রতীক। এটি দুনিয়ার রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি—সবকিছু আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী পরিচালনা করে। গণতন্ত্র যেখানে বিভাজন, দলাদলি ও মতের সংঘাত সৃষ্টি করে, সেখানে খিলাফাহ একটি নৈতিক, ঐক্যবদ্ধ ও জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থা প্রদান করে।

সাজেদুর রহমান 

বৈছাআ কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য

Link copied!