কাবুলে বিস্ফোরণ, সম্পর্কের টানাপোড়েনে পাকিস্তান-আফগানিস্তান

অনলাইন ডেস্ক , প্রতিদিনের কাগজ

প্রকাশিত: ১১ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:৪৪ এএম

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল ও পূর্বাঞ্চলীয় পাকতিকা প্রদেশে সাম্প্রতিক বিস্ফোরণের ঘটনায় পাকিস্তানকে সরাসরি দায়ী করেছে তালেবান সরকার। বৃহস্পতিবারের এ ঘটনায় দুই দেশের পুরোনো বৈরিতা আবারও সামনে এসেছে। তালেবান সরকারের মতে, পাকিস্তান তাদের ভূখণ্ডে হামলা চালিয়েছে, যদিও ইসলামাবাদ আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগটি স্বীকার বা অস্বীকার করেনি।

আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানায়, কাবুল ও পাকতিকায় সংঘটিত বিস্ফোরণের জন্য পাকিস্তান দায়ী। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো প্রমাণ বা তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। এর আগের দিন তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ কাবুলে একটি বিস্ফোরণের ঘটনা নিশ্চিত করে বলেন, বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে এবং জনগণের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

পশতু ভাষায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মুজাহিদ লিখেন,‘কাবুল শহরে একটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে, তবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কোনো প্রাণহানি বা ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।’ যদিও তখন তিনি কারও নাম উল্লেখ করেননি বা কোনো দেশকে দায়ী করেননি।

এরপর পরদিন আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পাকিস্তানকে দায়ী করে বিবৃতি দিলে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ঘটনাটি এমন এক সময় ঘটেছে, যখন তালেবান সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ক্রমেই উষ্ণ হচ্ছে, যা পাকিস্তানের জন্য কূটনৈতিকভাবে অস্বস্তিকর।

বৃহস্পতিবারই তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে পৌঁছান ছয় দিনের সফরে। তালেবান ক্ষমতায় আসার পর এটি ছিল তার প্রথম ভারত সফর। মুত্তাকির সফরের দিনই কাবুলে বিস্ফোরণ ঘটে, যা ইসলামাবাদের উদ্দেশ্য নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে আফগান মহলে।

বিস্ফোরণের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা জল্পনা শুরু হয়। অনেকের মতে, পাকিস্তান তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর প্রধান নুর ওয়ালি মেহসুদসহ শীর্ষ নেতাদের টার্গেট করেই এ হামলা চালিয়েছে। তবে আফগান কর্মকর্তারা পরবর্তীতে জানান, মেহসুদ নিরাপদে আছেন।

পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল আহমদ শরিফ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হামলার জন্য আফগান ভূখণ্ড ব্যবহার করা হচ্ছে। আমাদের হাতে পর্যাপ্ত প্রমাণ রয়েছে। জনগণের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে এবং তা অব্যাহত থাকবে।’ তবে তিনি আফগানিস্তানে হামলা চালানো হয়েছে কি না- সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো মন্তব্য করেননি।

অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে বিস্ফোরণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য জানায়নি।

আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনাপূর্ণ। ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর ইসলামাবাদ অভিযোগ করে, কাবুল টিটিপি-কে আশ্রয় দিচ্ছে— যারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ওপর হামলার জন্য দায়ী। অন্যদিকে, তালেবান নেতারা দাবি করেন, পাকিস্তান আফগান ভূখণ্ডে হামলার অজুহাতে তাদের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করছে।

দুই দেশের সীমান্তে সহিংসতা ও হামলার পরিমাণ বাড়তে থাকায় বিশ্লেষকেরা আশঙ্কা করছেন, দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন করে এক কূটনৈতিক অস্থিরতার জন্ম নিতে পারে- বিশেষ করে ভারত-তালেবান ঘনিষ্ঠতা ও পাকিস্তানের নিরাপত্তা-উদ্বেগের প্রেক্ষাপটে।

Advertisement

Link copied!