নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার বারমারী উচ্চ বিদ্যালয়ের জনপ্রিয় প্রধান শিক্ষক চন্দন দাস রাখাল (৫৭) এর রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে থানায় মামলা হয়েছে। বুধবার (১৫ অক্টোবর) রাতে নিহতের বড়বোন ফুলন রানী দাস বাদী হয়ে দুর্গাপুর থানায় এ মামলা দায়ের করেন। চন্দন কুমার দাস পৌরশহরের ৪নং ওয়ার্ডের আমলাপাড়া এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মৃত চন্দ্র শেখর দাসের বড় ছেলে।
মামলা সুত্র ও মামলার সাক্ষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিবাহিত জীবনে চন্দন দাসের কোন সন্তানাদি না থাকায়, ওনার স্ত্রী শেলী দাস সব সময় ওই প্রধান শিক্ষককে মানুষিক নির্যাতন এবং উশৃঙ্খল আচরণ করে গায়ে হাত তুলে মারপিট করতো। চন্দন দাস ভদ্রোচিত জীবন যাপন করতেন বিধায়, মামলায় বর্নিত সাক্ষিদের সাথে এই বিষয়ে মত বিনিময় করতেন। চন্দন দাসের আপন ছোট ভাই টুকন চন্দ্র দাস গত ছয় পুর্বে আকষ্মিক মৃত্যুবরণ করেন। একমাত্র ছোট ভাইয়ের মেয়ে টুম্পা দাস কে নিজের মেয়ের মতো লালন পালন করতেন। এটি দেখেও তার স্ত্রী, ঈর্ষান্বিত হয়ে প্রায়ই ওই শিক্ষকের সাথে ঝগড়া বিবাদ করে সংসারে অশান্তি লাগিয়ে রাখতেন।
এ বিষয় গুলো নিয়ে গত বৃহস্পতিবার (০৯ অক্টোবর) রাতে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে প্রচন্ড বাগ-বিতন্ডতা ও ঝগড়া হয়। এছাড়া ওই ঝগড়ার সময় বেশকিছু জিনিষপত্র ভাংচুরেরও শব্দ শুনতে পায় এলাকাবাসীরা। তবে মাঝে-মধ্যে স্ত্রীর এমন আচরণ করে বিধায়, ওইদিন রাতে ঝগড়া থামাতে ওই বাড়িতে কেউই যাইনি। পরদিন সকালে ওই স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক প্রধান শিক্ষককে অচেতন অবস্থায় দুর্গাপুর সরকারি হাসপাতালে নেয়ার সময় স্যারের শরীর প্রায় ঠান্ডা হয়ে আছে দেখতে পায় এছাড়া ওনার বাম হাতে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে কাঁটাচিহ্ন রয়েছে, কিছু অংশদিয়ে তখনো রক্ত ঝড়ছিলো। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগীকে দ্রুত ময়মনসিংহে নেয়ার পরমর্শ দেন। পরবির্ততে ময়মনসিংহের সিবিএমসি হাসপাতালে পাঁচদিন নিবিড় পর্যবেক্ষনে থেকে মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সন্ধ্যা ০৭ ঘটিকায় মৃত্যুবরণ করেন। পরবর্তিতে বুধবার (১৫ অক্টোবর) রাতে স্থানীয় শশ্মানঘাটে ওই প্রধান শিক্ষকের মরদের দাহ করা হয়।
হাতে ও গলায় বিভিন্ন কাটা চিহ্ন থাকায় এই মৃত্যু রহস্যজনক দাবী করে, এলাকাবাসী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, শিক্ষার্থী অভিভাবকদের আয়োজনে বুধবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে বিভিন্ন এলাকায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এনিয়ে প্রধান শিক্ষকের সহকর্মী মোজাম্মেল মাস্টার বলেন, চন্দন স্যার অসুস্থ্য, ওনার স্ত্রীর ফোন পেয়ে স্যারের বাসায় যাই। বাসা থেকে অচেতন অবস্থায় স্যার কে হাসপাতালে নেয়ার পর দেখতে পাই তার গলায় এবং বাম হাতে কোন কিছু দিয়ে কাটা হয়েছে এবং কাটার ক্ষতস্থান দিয়ে তখনো রক্ত ঝরছিলো, সেইসাথে মুখ দিয়ে গন্ধযুক্ত লালা বেরোচ্ছে। তিনি আরও বলেন, প্রধান শিক্ষককে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন সহ চেতনানাশক কোন কিছু খাওয়ানো হয়ে থাকতে পারে। আমাদের স্যারকে হয়তো অজ্ঞান করার পর, নির্যাতনও করা হয়েছে। স্যারের মৃত্যু রহস্যজনক, আমরা শিক্ষক সমাজ, এ হত্যাকান্ডের সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে দোষিদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি চাই।
এ নিয়ে দুর্গাপুর থানার ওসি মাহমুদুল হাসান বলেন, বুধবার সন্ধ্যার পরে প্রধান শিক্ষকের মরদেহ তার আত্মীয়রা দুর্গাপুর নিয়ে আসেন। পরবর্তিতে প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী, স্থানীয় গন্যমান্য ব্যাক্তি ও মিডিয়াকর্মীদের উপস্থিতিতে ওনার বাসা থেকে বেশ কিছু আলামত সংগ্রহ করেছি। ময়না তদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিষটি পরিস্কার হবে। এ হত্যাকান্ড নিয়ে অভিযোগের ভিত্তিতে থানায় মামলা হয়। পরবর্তিতে প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী শেলী দাস ওই মামলার প্রধান আসামী থাকায় তাকে আটক করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হলে, আদালত জামিন না মঞ্জুর করে তাকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
আপনার মতামত লিখুন :