অস্ট্রেলিয়ার এক নির্জন সমুদ্র সৈকতে শত বছর পর ভেসে উঠেছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেওয়া দুই সৈন্যের লেখা বোতলবন্দি চিঠি। ১৯১৬ সালে লেখা এই চিঠিগুলো যুদ্ধযাত্রা শুরুর আনন্দে পূর্ণ থাকলেও, এর এক জন যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ হারান।
এক শতাব্দীরও বেশি সময় পর দুজন অস্ট্রেলিয়ান সেনার লেখা বোতলবন্দি এই চিঠি দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে সম্প্রতি ভেসে আসে। বুধবার (২৯ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯১৬ সালে লেখা এই চিঠিগুলো সেনারা যুদ্ধের উদ্দেশে ফ্রান্সগামী জাহাজে ওঠার কয়েক দিনের মধ্যেই লিখেছিলেন। চিঠিতে তাদের হাসিখুশি কথাবার্তা ছিল। আর তাতে মিশে ছিল যুদ্ধযাত্রার শুরুতে তারুণ্যের উত্তেজনার ছোঁয়া।
সেনাদের একজন ছিলেন ২৮ বছর বয়সি প্রাইভেট ম্যালকম নেভিল। চিঠিতে তিনি তার মাকে লিখেছিলেন, জাহাজের খাবার দারুণ ভালো এবং তারা ভীষণ খুশি। কিন্তু কয়েক মাস পরই তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত হন। অপর সেনা ছিলেন ৩৭ বছর বয়সি প্রাইভেট উইলিয়াম হার্লি। তিনি অবশ্য যুদ্ধ থেকে জীবিত ফিরে আসেন।
সম্প্রতি পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার দূরবর্তী হোয়াইটন সৈকতে বোতলটি খুঁজে পান স্থানীয় নারী ডেব ব্রাউন ও তার পরিবার। নিয়মিতভাবে সৈকত পরিষ্কারে বের হলে বালুর ভেতর পুরু কাচের বোতলটি চোখে পড়ে তাদের।
ব্রাউন বলেন, আমরা প্রায়ই সৈকত পরিষ্কার করি, তাই ময়লা দেখলে কখনও ফেলে যায় না। ছোট্ট এই বোতলটাও এমনভাবেই খুঁজে পাই আমরা।
বিবিসির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, চিঠির কাগজ ভেজা থাকলেও লেখাগুলো পরিষ্কারই ছিল। তাই তিনি সেনাদের পরিবারের খোঁজ শুরু করেন যাতে চিঠিগুলো তাদের হাতে পৌঁছে দেওয়া যায়।
নেভিলের চিঠিতে তার মায়ের ঠিকানা লেখা ছিল। এর ফলে ব্রাউন অনলাইনে নেভিলের আত্মীয় হার্বি নেভিলকে খুঁজে পান। তিনি বলেন, এটা আমাদের পরিবারের জন্য অবিশ্বাস্য এক অভিজ্ঞতা, বিশেষ করে আমার খালা মারিয়ান ডেভিসের জন্য। কারণ তিনি শৈশবে তার চাচাকে যুদ্ধে যেতে দেখেছিলেন, কিন্তু তিনি আর ফেরেননি।
অন্য চিঠিটি লিখেছিলেন প্রাইভেট উইলিয়াম হার্লি। যেহেতু তার মা তখন বেঁচে ছিলেন না, তাই তিনি ওই চিঠিটি লিখেছিলেন যে এই বোতলটি পাবে তাকে সম্বোধন করে। হার্লির নাতনি অ্যান টার্নার বলেন, এটা যেন এক অলৌকিক ঘটনা। মনে হচ্ছে দাদু যেন সমাধি থেকে আমাদের উদ্দেশে হাত বাড়িয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, অন্য সেনাটি মাকে চিঠি লিখেছিল, আর আমাদের দাদু তার মা অনেক আগেই মারা গিয়েছিলেন বলে তিনি চিঠিটি লিখেছিলেন অজানা খুঁজে-পাওয়া মানুষের উদ্দেশে। এটা ভীষণ আবেগের।
হার্লি তার চিঠিতে লিখেছিলেন, বোতলটি নিক্ষেপ করা হয়েছিল ‘দ্য গ্রেট অস্ট্রেলিয়ান বাইট’-এর কোথাও থেকে। এটি দেশটির দক্ষিণ উপকূলবর্তী বিশাল সাগরীয় অঞ্চল।
অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশনের (এবিসি) এক সমুদ্রবিজ্ঞান অধ্যাপক জানিয়েছেন, বোতলটি হয়তো প্রথমে মাত্র কয়েক সপ্তাহ পানিতে ভেসেছিল, এরপর হোয়াইটন সৈকতের বালুর নিচেই শত বছর ধরে চাপা পড়ে ছিল।
আপনার মতামত লিখুন :