সত্য প্রকাশের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সাংবাদিকদের ওপর হামলা, নির্যাতন, মামলা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের ঘটনা দেশে উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনস্বার্থের তথ্য সংগ্রহ, দুর্নীতি ও অনিয়ম উদ্ঘাটন কিংবা ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর অপকর্ম তুলে ধরলেই অনেক সাংবাদিক প্রতিনিয়ত হুমকি, হামলা বা হয়রানির মুখে পড়ছেন। প্রশ্ন উঠছে এই পরিস্থিতি কি কেবল দুর্বৃত্তচক্রের দায়, নাকি প্রশাসনেরও কোনো কাঠামোগত ব্যর্থতা রয়েছে?
প্রথমত, অভিযোগ উঠছে অনেক ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারে গড়িমসি দেখা যায়। কোথাও কোথাও উল্টো ভুক্তভোগী সাংবাদিকই হয়রানির শিকার হন। এতে হামলাকারীরা পুনরায় উৎসাহিত হয়, আর সাংবাদিকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন।
দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক প্রভাব ও স্থানীয় চাঁদাবাজ-প্রভাবশালী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে অনেক মামলাই তদন্ত পর্যায়ে থমকে থাকে। সাংবাদিকেরা ন্যায়বিচার পান না, বরং তাদের পেশাগত কাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়। ফলে ‘দায়মুক্ত সংস্কৃতি’ ক্রমেই শক্তিশালী হচ্ছে।
তৃতীয়ত, প্রশাসনের একটি বড় ব্যর্থতা হলো সাংবাদিকদের নিরাপত্তা রক্ষায় কোনও কার্যকর নীতিমালা বা সমন্বিত ব্যবস্থা গড়ে না ওঠা। অনেক দেশেই মিডিয়া সুরক্ষা আইন, হুমকি ব্যবস্থাপনা ইউনিট বা বিশেষ প্রসিকিউশন টিম রয়েছে। অথচ আমাদের দেশে সাংবাদিকরা এখনো ব্যক্তিগত ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।
এছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে পুলিশ-প্রশাসন ও সাংবাদিক সমাজের মধ্যে পেশাগত সহযোগিতা দুর্বল হওয়ায় ভুল বোঝাবুঝি ও সংঘাতও বেড়ে যায়। প্রশাসনের যথাযথ ভূমিকা না থাকলে সাংবাদিকতা থাকবে ঝুঁকির মুখে আর জনস্বার্থের তথ্য সংগ্রহ হবে কঠিন।
কী করতে হবে এখন?
১) দ্রুত বিচার ও গ্রেফতার: সাংবাদিকদের ওপর হামলার প্রতিটি ঘটনার দ্রুত তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
২) মিডিয়া সুরক্ষা সেল: কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিশেষ সেল গঠন করতে হবে।
৩) প্রশাসন-গণমাধ্যম সমন্বয়: পেশাগত সম্পর্ক উন্নয়নে নিয়মিত আলোচনা ও প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।
৪) হামলার বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’: সরকারি পর্যায় থেকে স্পষ্ট বার্তা দিতে হবে সাংবাদিকদের ওপর হামলা মানে রাষ্ট্রের ওপর হামলা।
সাংবাদিকতা শুধু একটি পেশা নয়; এটি জাতির বিবেক। এই বিবেককে যদি ভয়, হামলা ও দমনপীড়নের মধ্যে আটকে রাখা হয়, তবে জনগণের অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়, রাষ্ট্র দুর্বল হয়। তাই সাংবাদিকদের ওপর হামলা বন্ধে প্রশাসনের প্রমাণিত ও কার্যকর ভূমিকা এখন সময়ের দাবি।
মোঃ খায়রুল আলম রফিক
চেয়ারম্যান
সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ সেল বাংলাদেশ
কেন্দ্রীয় ইউনিট।
আপনার মতামত লিখুন :