শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১০:২৩ অপরাহ্ন

আপডেট
ইউজিসির তদন্ত মানেন না নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য

ইউজিসির তদন্ত মানেন না নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য

নিজস্ব প্রতিবেদক,ময়মনসিংহ :
ময়মনসিংহে ত্রিশালের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সুপারভাইজার নিয়োগ নিয়ে উঠেছিল প্রশ্ন। নিয়োগে অনিয়মের কথা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) অভিযোগ জানায় বঞ্চিত এক নারী চাকরিপ্রার্থী। তদন্তে নামে ইউজিসির তদন্ত কমিটি। অনিয়মের প্রমাণ পেয়ে চিঠি দিয়ে নিয়োগটি ‘ক্রটিপূর্ণ’ বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে ইউজিসি। তবে ইউজিসির তদন্ত মানতে নারাজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। উপাচার্য বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্ত সঠিক নয়, নিয়োগে কোনো ক্রটি নেই।

 

এদিকে নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে উপাচার্য জড়িত বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মহামান্য রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ইউজিসিতে অভিযোগকারী ওই নারী চাকরিপ্রার্থী। জানা গেছে, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল সুপারভাইজার পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয় ২০২১ সালের ৮ নভেম্বর। এতে শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি চাওয়া হয় তিন বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতা। এই পদে পরীক্ষা দেয় ১৪ প্রার্থী। চাকরি হয় সোহেল রানা নামে এক ব্যক্তির। ত্রিশালের আমিরাবাড়ী ইউনিয়নের গুজিয়াম আলিম মাদ্রাসা থেকে কম্পিউটার অপারেটর কাম হিসাবরক্ষক (খন্ডকালীন) কাজের অভিজ্ঞতার সনদ দাখিল করে এই পদে নিয়োগ পান সোহেল। তবে এই অভিজ্ঞতা সনদ ও যোগ্যতা নিয়ে উঠে প্রশ্ন। হল সুপারভাইজার নিয়োগের সময় অনিয়ম টের পেয়ে আরেক আবেদনকারী জাহানারা মুক্তা লিখিত অভিযোগ নিয়ে দারস্ত হন উপাচার্যের কার্যালয়ে। মুক্তা দাবি করেন, উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখরের কাছে গেলেও দেখা করতে দেয়া হয়নি তাকে। এমনকি রাখা হয়নি তার অভিযোগপত্রও। পরে এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। নিয়োগের তথ্য চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেও পাননি তথ্য।

মুক্তার অভিযোগ, নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তোলায় তদন্ত না করে উল্টো আমাকেই উকিল নোটিশ দেন উপাচার্য। তবে হাল ছাড়েননি মুক্তা। গত ২০২৩ সালের ২৬ অক্টোবর নিয়োগে অনিয়মের কথা জানিয়ে বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করে শিক্ষামন্ত্রী ও ইউজিসির উপ-পরিচালক বরাবর নিয়োগ জালিয়াতির লিখিত অভিযোগ করেন মুক্তা। তিনি কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী। অভিজ্ঞতা সনদটি যাচাইয়ের জন্য গত ২৯ ফেব্রুয়ারি গুজিয়াম আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে চিঠি দেয় বিশ্ববিদ্যাল মঞ্জুরি কমিশন। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ আল মামুনের দেয়া জবাবে ইউজিসির বিশ্লেষণে প্রতীয়মান হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘হল সুপারভাইজার’ পদে নিয়োগটি ত্রুটিপূর্ণ।
গত ১৭ এপ্রিল ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ জামিনুর রহমান স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত খাত হতে সম্মানি দেয়া হয় এমন খন্ডকালীন কাজের অভিজ্ঞতার সনদের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত/স্থায়ী পদের বিপরীতে জনবল নিয়োগ দেয়ার সুযোগ আছে কিনা সেটি বিবেচ্য। এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন্ন সিন্ডিকেটে বিষয়টি উপস্থাপন করে সিদ্ধান্ত গ্রহনপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং কমিশনকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করা হলো।’

ইউজিসির এই চিঠির সূত্র ধরে অভিজ্ঞতা সনদ নেওয়া সেই গুজিয়াম আলিম মাদ্রাসায় গেলে মাদ্রাসা অধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, সোহেল রানা নিয়ম মাফিক মাদ্রাসার নিয়োগপ্রাপ্ত খ-কালীন কর্মচারী ছিলেন। মাদ্রাসার প্রয়োজন অনুযায়ী তাকে মাঝেমধ্যে কাজ করানো হতো। যে কাজ করানো হতো সেই উৎস থেকে তাকে পারিশ্রমিক দেয়া হতো। এসময় তার কাছে হাজিরা খাতা দেখতে চাইলে তিনি জানান, খণ্ডকালীন কর্মচারীর জন্য হাজিরা খাতার প্রয়োজন নাই। এমনকি তাকে দেয়ার অর্থের কোনো প্রমাণ তিনি দেখাতে পারেননি। তবে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মাদ্রাসা) জনবল কাঠামো নীতিমালা বলছে- অনুমোদিত জনবল কাঠামোর অতিরিক্ত শিক্ষক কর্মচারী নিয়োজিত রাখলে তাদের বেতন-ভাতা ও আনুষাঙ্গিক সুবিধা শতভাগ দিবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নীতিমালা দেখিয়ে সোহেল রানার বেতনের তথ্য জানতে চাইলে সুর পাল্টান মাদ্রাসা অধ্যক্ষ।

তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে সোহেলের খরচ দিয়েছেন তিনি। অর্থাৎ তার কথা অনুযায়ী সোহেল রানার নিয়োগের ক্ষেত্রে মানা হয়নি কোনো বিধিই। ইউজিসিতে অভিযোগকারী চাকরিপ্রার্থী জাহানারা মুক্তা বলেন, নিয়োগের ফলাফলের পর থেকেই উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে অভিযোগ দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোনোভাবেই উপাচার্য সৌমিত্র শেখর স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। সর্বক্ষেত্রে এ ব্যাপারে নীরবতা আমি দেখতে পেয়েছি। তার এই নীরবতায় বুঝাচ্ছে যে এই অনিয়মটা উপাচার্যের সজ্ঞানেই হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, আমাদের দৃষ্টিতে আমরা মনে করছি যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তই সঠিক। ইউজিসির করা তদন্ত সঠিক নয়। সোহেল রানার সকল কাগজপত্রই আমরা সঠিক পেয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, নিয়োগ ত্রুটিপূর্ণ হয়নি। তারপরও ইউজিসি বলেছে এটি সিন্ডিকেটে নিয়ে যেতে, ইউজিসির কথা মতো আমরা সিন্ডিকেটে নিয়ে যাবো। সিন্ডিকেট সদস্যদের মতামত অনুযায়ী যদি তাতে কারো চাকরি থাকে থাকবে, না থাকলে থাকবে না। কারও প্রতি আমাদের আলাদা পক্ষপাত নেই।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |