বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৯ অপরাহ্ন

আপডেট
একাত্তরের ভুল প্রমাণিত হলে জাতির কাছে ক্ষমা চাইব: জামায়াত আমির রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের বিধান থাকছে না সংসদ ও স্থানীয় নির্বাচনে একবারে ভোটগ্রহণের প্রস্তাব সাবেক সিইসি রউফের দুর্যোগে সশস্ত্র বাহিনী দুর্গত জনগণের শেষ ভরসার স্থান জাতি গঠনমূলক কাজে সশস্ত্র বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে শিখা অনির্বাণে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা ঢাকার সড়কে অটোরিকশা চালকরা, বন্ধ যান চলাচল জেনারেল ওয়াকারের সঠিক সিদ্ধান্তে সশস্ত্র বাহিনী আবারও আস্থার প্রতীক ময়মনসিংহে ট্যুরিস্ট পুলিশের “National Integrity Strategies” বিষয়ক কোর্স এর সমাপনী অনুষ্ঠানে রেঞ্জ ডিআইজি বিভাগের শিক্ষার্থীদের ১১ দফা: জাবি ক্যাম্পাসে মোটরচালিত যানবাহন বন্ধ
ইবিতে ফের নবীন শিক্ষার্থীদের র‍্যাগিং, থানা হেফাজতে অভিযুক্তরা

ইবিতে ফের নবীন শিক্ষার্থীদের র‍্যাগিং, থানা হেফাজতে অভিযুক্তরা

ওয়াসিফ আল আবরার,  ইবি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আবাসিক হল লালন শাহ হলের গণরুমে ফের নবীন শিক্ষার্থীদের র‍্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। র‍্যাগিং চলাকালে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের হাতেনাতে ধরে থানায় সোপর্দ করেছে সিনিয়র শিক্ষার্থীরা। এসময় তাদের উপর শারীরিক ও মানষিক অত্যাচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

১৮ নভেম্বর (সোমবার) মধ্যরাতে লালন শাহ হলের ৩৩০ নং কক্ষে (গণরুম) এঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা হলেন আমির হামজা, শামীম রেজা, রাকিবুল হাসান, আবু সাইম; এরা প্রত্যেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২৩-২৪ বর্ষের নবীন শিক্ষার্থী।

অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা হলেন ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের সাব্বির হোসেন, লিমন হোসেন, শিহান শরীফ, কান্ত বড়ুয়া, সাকিব  শফিউল্লাহ, তরিকুল, মুকুল, জিহাদ এবং ল এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী সঞ্চয় বড়ুয়া। অভিযুক্ত সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। শফিউল্লাহর নেতৃত্বে ৯ জন শিক্ষার্থী মিলে নবীন ব্যাচের ১৬ জন শিক্ষার্থীকে মানসিক ও শারীরিক ভাবে নির্যাতন করে আসছিলো বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের হাতেনাতে ধরে থানায় সোপর্দ করে হলের শিক্ষার্থী হাসানুল বান্না অলি।

র‍্যাগিং এর শিকার ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা তাদের উপর অসহনীয় নির্যাতনের বিষয়টি তুলে ধরেন। শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ভুক্তভোগী সাইম, রাকিবুল, শামীম, রাকিব, হামজা, রিশান, মামুন, তারেক ও তানভীরকে রাত সাড়ে ৯ টার দিকে দেখা করতে বলেন অভিযুক্ত শিহান শরীফ। পরে তাদেরকে লালন শাহ হলের ৩৩০ নং কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। কিছুক্ষণ পরে ভুক্তভোগী শামীম, সাইম, হামজা ও রাকিবুলকে রুমে রেখে বাকীদের রুম থেকে বের করে দেয় অভিযুক্ত সাব্বির ও সঞ্চয় বড়ুয়া। এরপর তাদের উপর শুরু হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। চুপচাপ থাকায় ভুক্তভোগীদের একজনকে ৫ রকমের হাসি দিতে বলা হয়, অপর একজনকে সিনিয়র ভাইকে কল দিয়ে বাজে ভাষায় কথা বলতে বলা হয় এবং আরেকজনকে নাচতে বলে অভিযুক্তরা৷ এছাড়া এক বন্ধুকে দিয়ে আরেকজনকে গালি দেয়ানো হয়।

এছাড়াও, নবীনদের পরিচয় পর্ব শেখানোর নামে বিকৃত যৌনতা মূলক আচরণ করানো হয় বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ১৬ নভেম্বর রাতে নবীন শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী সাদী অ্যান্ড হাদী ছাত্রাবাসে নিয়ে যেয়ে রাত আড়াইটা পর্যন্ত র‍্যাগিং করা হয়েছে বলে জানা গেছে৷ সেদিন কয়েক শিক্ষার্থীকে পর্ণ তারকাদের নাম জিজ্ঞাসা ও তাদের রোল প্লে করতে বলা হয়, অশ্লীল কবিতা পাঠ করানো এবং গালিগালাজ করে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা।

সিনিয়র শিক্ষার্থী হাসানুল বান্না অলি বলেন, আমাকে এক জায়গা থেকে সংবাদ দেওয়া হয় যে আমার হলে র‍্যাগিং চলতেছে। খবর পেয়ে আমি ৩৩০ নাম্বার রুমে যেয়ে ৩ অভিযুক্ত ও ৪ ভুক্তভোগীকে তাদের হাতেনাতে ধরি। এসময় তারা প্রথমে ঘটনার ব্যাপারে অস্বীকার করলেও পরবর্তীতে চাপ দিলে তারা র‍্যাগিংয়ের ঘটনা স্বীকার করে। পরবর্তীতে অভিযুক্ত বাকিদেরও নিয়ে আসা হয়। গভীর রাত হওয়ায় প্রক্টর স্যার ও প্রভোস্ট স্যারের সাথে কথা বলে তাদের থানায় দিয়ে আসা হয়েছে।

অভিযুক্ত সঞ্চয় বলেন, ‘আমাদের ছোটভাই হামজার সাথে সন্ধ্যায় দেখা হলে মন খারাপ দেখতে পাই। পরে আসলে আমি তাকে আলাদাভাবে রেখে দেই। তখন তার সাথে খারাপ ব্যবহার করা হয় নাকি তাঁকেই জিজ্ঞেস করেন।’

এসময় উপস্থিত আমীর হামজা বলেন, ‘আমাকে ভাইরা ডেকে বলেন আমার মন খারাপ কেনো? তখন আমাকে পাঁচ রকমের হাসি দিতে বলেন।’

তবে, যৌন বিকৃত মূলক আচরণের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা বিষয়টি অস্বীকার করেন।

লালন শাহ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আকতার হোসেন বলেন, র‍্যাগিংয়ের ঘটনা শুনে আমি তাৎক্ষণিকভাবে অভিযুক্তদের থানা হেফাজতে দিতে বলেছি। যেহেতু আমার হলে ঘটনা ঘটেছে, আমার পক্ষ থেকে আমি এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সর্বাত্মক সহযোগীতা করবো। তারা আমার হলের শিক্ষার্থী হলে আমি নিঃসন্দেহে আবাসিকতা বাতিল করতাম। এখন, লিখিত অভিযোগ পেলে প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে তদন্ত কমিটি গঠন করে যথাযথ প্রক্রিয়ায় অভিযুক্তদের শাস্তির সুপারিশ করা হবে।

এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো: শাহীনুজ্জামান বলেন, নবীন শিক্ষার্থীদের র‍্যাগিং করার ঘটনা অবগত হয়েছি। যেহেতু একটা মব তৈরী হওয়ার আশংকা রয়েছে তাই আপাতত তাদের পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়েছে। সকালে ক্যাম্পাসে এসে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

এবিষয়ে ইবি থানার ডিউটি অফিসার জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫ শিক্ষার্থীকে নিয়ে আসা হয়েছে।  আপাতত তারা আমাদের হেফাজতে আছেন। আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সাথে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |