বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৪১ পূর্বাহ্ন

আদা রসুনেই সারবে পোল্ট্রির ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ !

আদা রসুনেই সারবে পোল্ট্রির ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ !

আলিফ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়: পোল্ট্রির ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ এবার সারবে আদা রসুনের নির্যাসের সাহায্যেই ! বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মাহমূদুল হাসান শিকদার, সাবেক শিক্ষার্থী ও বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. জাকারিয়া আল নোমান এবং তাদের গবেষক দল দাবি করেছেন যে আদা ও রসুন, পোল্ট্রির রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ই-কোলাই এবং সালমোনেলার বিরুদ্ধে কার্যকর।

গবেষণাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ফেলোশিপের অর্থায়নে পরিচালিত হয়েছে।

গবেষণাটি নিয়ে অধ্যাপক ড. মো. মাহমূদুল হাসান শিকদার বলেন, ‘অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যাপক ব্যবহার এবং মানুষ ও প্রাণী উভয়ের জন্যই সহজলভ্যতার কারণে বাংলাদেশ মাল্টি ড্রাগ রেজিস্টেন্সের (এমডিআর) প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। ফলে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্টেন্সের (এএমআর) ক্রমবর্ধমান হুমকি এবং অ্যান্টিবায়োটিকগুলোর কার্যকারিতা হ্রাসের কারণে নতুন ধরনের এবং প্রতিশ্রতিশীল অ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।’

প্রাথমিক গবেষণায় আদা ও রসুনের নির্যাসে পোল্ট্রির রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ই-কোলাই এবং সালমোনেলার বিরুদ্ধে কার্যকারিতা পাওয়া গিয়েছে।

অধ্যাপক জানান, ‘এই নির্যাস তৈরির প্রক্রিয়াটি খুবই সহজ। প্রথমে আদা ও রসুন ধুয়ে টুকরো করে নিতে হবে, তারপর পিষে ছাকনি দিয়ে ছেঁকে নির্যাস আলাদা করতে হবে, যা পোল্ট্রির জন্য ব্যবহার করা যাবে। তবে কতটুকু নির্যাস প্রয়োগ করা উচিত, তা নির্ধারণে আরও গবেষণা প্রয়োজন। গবেষণাগারে থিন-লেয়ার ক্রোমাটোগ্রাফি (টিএলসি) পদ্ধতির মাধ্যমে আদা ও রসুনের বায়োঅ্যাকটিভ অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল যৌগ শনাক্ত করা হয়েছে।

পোল্ট্রির এমডিআর ব্যাকটেরিয়ার ওপর আদা ও রসুনের নির্যাসের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়েছে। অধ্যাপক জানান, ‘রসুনের নির্যাস শুধুমাত্র সালমোনেলার বিরুদ্ধে কার্যকর হলেও আদার নির্যাস ই-কোলাই ও সালমোনেলা উভয়ের বিরুদ্ধেই কার্যকর।’

‘অ্যান্টিবায়োটিকের বিকল্প হিসেবে কেন আদা ও রসুন ব্যবহার করা হয়েছে’— এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক বলেন, ‘যেসকল প্রাকৃতিক উপাদানে ফাইটো কেমিক্যাল থাকে তারা খরচ সাশ্রয়ী, সহজ প্রস্তুতপ্রণালী, সহজে ব্যবহারযোগ্য, কম বিষাক্ততা, দ্রুত জীবাণু বিনষ্ট করার কার্যক্ষমতা ও পরিবেশগতভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ হিসেবে পরিচিত। এক্ষেত্রে আদা ও রসুন অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে ভূমিকা রাখে।’

এ বিষয়ে গবেষকদলের অন্যতম সদস্য বিসিএসআইআর এর সাইন্টিফিক অফিসার মো. জাকারিয়া আল নোমান বলেন, ‘বাংলাদেশি ও ভারতীয় আদা রসুনের মধ্যে ভারতীয় জাতে বেশি কার্যকারিতা পাওয়া গেছে। গ্রোথ প্রোমোটার হিসেবে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতার চেয়ে প্রাকৃতিক উপাদানের কার্যকারিতা সব সময় বেশি পাওয়া যায়।’

প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে অ্যান্টিবায়োটিকের বিকল্প উদ্ভাবন খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) হ্রাস করতে এবং অযাচিত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের খরচ কমাতে কার্যকর হতে পারে। স্থানীয়ভাবে আদা ও রসুনের মতো উপাদান দিয়ে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল পণ্য তৈরি খামারিদের জন্য অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হতে পারে। তবে এই লক্ষ্য অর্জনে চলমান গবেষণা এবং সরকারি সহায়তা প্রয়োজন।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |