বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৩১ অপরাহ্ন
শহিদুল্লাহ মনসুর, জাবি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ছাত্রদলের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ছাত্রত্ব শেষ হওয়া অনেক আগের নেতাকর্মীরাই সংগঠনের পদ প্রত্যাশির অভিযোগ উঠেছে। দলীয় কমিটিতে পদ প্রত্যাশীদের মধ্যে বেশিরভাগই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, যাদের ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে প্রায় অর্ধযুগ বা তারও আগে।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জাবি শাখার পদ প্রত্যাশিদের বিস্তারিত তথ্যাদি (সিভি) জমা দিতে বলা হয়।
পদ প্রত্যাশিদের মধ্যে রয়েছে ৩৯ ব্যাচের নবীনুর রহমান নবীন, জহিরউদ্দিন মোহাম্মদ বাবর, ফয়সাল আহমেদ, আফফান আলী। এবং ৪০ ব্যাচের পদ প্রত্যাশিরা হলেন ওয়াসিম আহমেদ অনিক, আব্দুল কাদের মার্জুক, রাকিবুল হাসান শুভ, সেলিম রেজা, হুমায়ুন হাবিব হিরণ, মেহেদী হাসান, মশিউন রহমান রোজেন। এছাড়া ইকবাল হোসেন (৪১), জুবায়ের আল মাহমুদ (৪২), জর্জিস ইব্রাহীম, নাঈমুল হাসান কৌশিক (৪৩), শফিকুল ইসলাম (৪৫), রেজাউল আমিন, সোহানুর রহমান সুইট (৪৫) পদ প্রত্যাশি।
তাছাড়া পদ প্রত্যাশিদের মধ্যে রয়েছে মাহবুবুর রহমান মুরাদ (৪৬), সাদিকুর রহমান (৪৬), শরিফুল ইসলাম (৪৬), নিশাত আবদুল্লাহ (৪৬), জাকিরুল ইসলাম (৪৬), আবদুল্লাহ অন্তর (৪৭), আবদুল গাফফার জিসান (৪৭), রিফাত মাহমুদ (৪৮), নাঈম (৪৯)।
পদ প্রত্যাশি নবীনুর রহমান নবীন বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে ছাত্রদলের ব্যানার টিকিয়ে রেখেছি আমরা। এখন দেখা যাচ্ছে সুসময়ে ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার ও ছাত্রলীগের অনেকেই ছাত্রদলে ভীড় করছে। আমরা চাই না জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল জিয়ার আদর্শ থেকে বিচ্যুত হোক। আমরা চাই জাহাঙ্গীরনগর ছাত্রদলকে সুশৃঙ্খল একটা পর্যায়ে নিয়ে যেতে। আর যারা এ ধরনের অভিযোগ তুলছে তাদের অধিকাংশই দেখা যাবে বিগত দিনে স্বৈরাচারের দোসর ছিলো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীরা বলছেন, “ছাত্রদল তো শিক্ষার্থীদের সংগঠন। কিন্তু এখনকার কমিটিতে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাদের অধিকাংশই আর শিক্ষার্থী নন। তারা ক্যাম্পাসের পরিবেশ নষ্ট করছেন এবং প্রকৃত শিক্ষার্থীদের রাজনীতির সুযোগ আটকে দিচ্ছেন।”
ছাত্রদলের একটি সূত্র জানিয়েছে, পুরনো নেতারা সংগঠনে প্রভাব বিস্তার করায় নতুনদের জায়গা করে দেওয়ার প্রক্রিয়াটি থমকে গেছে। ফলে সংগঠনের ভেতরে দ্বন্দ্ব বাড়ছে।
একজন পদপ্রত্যাশী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা এখনো সংগঠনে সক্রিয়, যদিও আমাদের ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে। নতুনদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করাই আমাদের লক্ষ্য। তবে অভিজ্ঞতার কারণে আমরা এখনো দলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছি।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধান না হলে সংগঠনটির প্রাসঙ্গিকতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে জরুরি ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বর্তমান শিক্ষার্থীদের দিয়ে নতুন কমিটি গঠন ও শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
এদিকে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দাবি, তারা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন এবং খুব শিগগির একটি কার্যকরী কমিটি গঠনের পরিকল্পনা করছেন। তবে সংগঠনের পুরনো নেতারা কীভাবে এতে সাড়া দেবেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়।