শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:১৭ পূর্বাহ্ন

আপডেট
ত্রিশালে বিলুপ্তির পথে মৃৎশিল্প : কুমারপাড়ায় নেই কর্মচাঞ্চল্য

ত্রিশালে বিলুপ্তির পথে মৃৎশিল্প : কুমারপাড়ায় নেই কর্মচাঞ্চল্য

এস এম মাসুদ রানা ,ত্রিশাল :

ময়মনসিংহের ত্রিশালে বাঙালি জীবনের হাজার বছরের ঐতিহ্য বহনকারী মাটির তৈরি সামগ্রীর চাহিদা কমতে থাকায় প্রাচীন শিল্পটি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। আধুনিক জিনিসপত্রের ভিড়, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকা এবং মাটির দাম বৃদ্ধিসহ নানা সংকট এ শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে বলে জানান মৃৎ শিল্পের কারিগররা।

মৃৎশিল্প বাঙালির শত বছরের পুরনো ঐতিহ্য এখন তা আর আগওে মত চোখে পড়েনা কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে। কিন্তু কালের বিবর্তনে ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে এই শিল্পের প্রসার। উপজেলার ১২ টি ইউনিয়নে কুমারপাড়ায় প্রতিটি ঘরে মৃৎশিল্প তৈরির কর্মব্যস্ততা দেখা যেত। এখন অনেকে এ পেশায় থাকলেও মাটির তৈরি সামগ্রীর চাহিদা না থাকায় অভাব-অনটনে সংসার চালাতে পারছেন না তারা। একবেলা আধবেলা খেয়ে দিনানিপাত করছেন অনেক মৃৎশিল্পী। এক সময়ের কর্মব্যস্ত কুমারপাড়ায় এখন শুনসান নীরবতা।

উপজেলার পৌরসভা, বালিপাড়া, মূখ্যপুর, আমারাবাড়ী, বৈলর, কানিহারী,ধানীখোলা, হরিরামপুরএলাকার কুমারপাড়ার অসংখ্য পরিবার এ পেশার সঙ্গে জড়িয়ে থাকলেও দিনের ব্যবধানে প্রায় ৫০-৬০টি পরিবারেরও বেশি পরিবার এ পেশা ছেড়ে ভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়েছে। ত্রিশাল উপজেলার মাটি বেলে ও দো’আঁশ হওয়ায় মাটি সংগ্রহ করে এসব সামগ্রী তৈরির কাজে ব্যস্ত থাকতেন মৃৎশিল্পীরা। উপজেলার মূখ্যপুর ইউনিয়নের নিপেন চন্দ্র কুমার বলেন, যুগ যুগ ধরে বংশ পরম্পরায় আমরা মাটির জিনিস তৈরি করে আসছি।

এ পেশার সঙ্গে আমরা জড়িত থাকলেও আমাদের উন্নয়নে বা আর্থিক সহায়তায় সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। সরকারি ও বিভিন্ন এনজিও বা সমিতি থেকে সহযোগিতা পেলে হয়তো বাপ-দাদার আমলের স্মৃতিকে ধরে রাখা সম্ভব হতো। মৃৎশিল্পী সুদ্বিপ পাল বলেন, এ শিল্পের জন্য মাটি ধরকার, এখন মাটির পাওয়া যায় না পেলেও তার দাম বেশি।। তার পরেও এই মাটি অনেকেই দিতে চায় না। তিনি আরো বলেন, প্রথমে মাটি তৈরি করে তার পর বিভিন্ন আসবাপত্র তৈরি করতে হয়।

মাটির তৈরি এসব সামগ্রী শুকানো, রং করাসহ পুরোপুরি ভাবে প্রস্তুত করতে এক সপ্তাহ সময় লাগে। পরে এসব সামগ্রী বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হয় উপজেলার বিভিন্ন বাজারে। সংশ্লিষ্টরা জানান, নানামুখী সংকটের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এ শিল্প। ফলে এর ওপর নির্ভরশীল পরিবারগুলোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। স্টিল, চিনামাটি, মেলামাইন ও প্লাস্টিকের জিনিসপত্র বাজারে আসার পর মানুষ আর মাটির তৈরি হাঁড়ি, থালা, গ্লাস, মসলা বাটার পাত্র, মাটির ব্যাংক ও খেলনা সামগ্রী ইত্যাদি ব্যবহার করছেন না।

এখন শুধু গবাদিপশুর খাবারের জন্য গামলা, কলস, মাটির ব্যাংক, মাটির পাতিল ও সংখ্যালঘুদের পূজার জন্য নির্মিত কিছু সামগ্রীর চাহিদা রয়েছে। গ্রামাঞ্চলের অনেক মানুষ অবশ্য এখনও দৈনন্দিন প্রয়োজনে কিছু মাটির তৈরি পাত্র ব্যবহার করেন। কিন্তু মাটির তৈরি সৌখিন জিনিসপত্রের বাজার চাহিদা তেমন একটা নেই বললেই চলে। এক সময় কম দামে মাটি সংগ্রহ করা গেলেও এখন মাটি কিনতে হয় অনেক বেশি দামে। এছাড়া মাটি ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বাড়ছে উৎপাদন ব্যয়। ফলে কুমার সম্প্রদায়ের সদস্যরা বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়ছেন।

কবি ও শিল্প প্রেমিক জোবায়ের হোসাইন জানান, মাটির জিনিসের চাহিদা কমতে থাকায় এবং দূরের এলাকা থেকে বেশি দামে মাটি কিনতে হয় বলে মৃৎশিল্পীরা দিন দিন এ ঐতিহ্য থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে। তবে কিছু সংখ্যক পরিবার বংশ পরম্পরার কারণে এ শিল্প ধরে রেখেছে। এ শিল্পের জন্য সরকারিভাবে যদি কোনো সহযোগিতা করা হয় তবে বাঙালির ঐতিহ্যময় এ শিল্প ধরে রাখতে পারবে মৃৎশিল্পীরা।

প্রভাষক মোল্লা মমিনুল ইসলাম প্লাবন জানান, আগে ছাত্রছাত্রীরা স্কুলের বার্ষিক পরিক্ষা শেষে সৃজনী হিসেবে মাটির তৈরি পন্য উপহার দিত। এ যুগে তা আর চোখে পরেনা। এ মৃৎশিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। আমাদের ঐতিহ্য হিসেবে এটি সংরক্ষণ করা উচিত।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |