শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৪৮ পূর্বাহ্ন

আপডেট
রাজশাহীতে টমেটোর ভালো ফলন, দামে খুশি চাষিরা

রাজশাহীতে টমেটোর ভালো ফলন, দামে খুশি চাষিরা

ফরিদ আহমেদ আবির, রাজশাহী:

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সোনাদীঘি গ্রামের টমেটো চাষীরা শীতকালীন টমেটো চাষ করে কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। ভালো ফলন ও বেশি দাম পাওয়ায় কৃষকেরা খুশি।

শীতকালীন টমেটো চাষে মৌসুমের শুরু থেকে মাঝামাঝি সময়ে এসে তাদের খরচের টাকা উঠে গেছে। এখনও জমি থেকে টমেটো উঠছে। আরও মাসখানেক টমেটো উঠবে। এই সময়ের মধ্যে আরও লাভের আশা করছেন চাষিরা।

গোদাগাড়ীর সোনাদীঘি গ্রামের চাষি কুদরত আলী দেড় বিঘা জমিতে টমেটো চাষে খরচ করেছেন ২০ হাজার টাকা। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে টমেটো উঠছে তার জমি থেকে। এরমধ্যেই হাসিবুলের হাতে এসেছে ৫০ হাজার টাকা। বাজার ভাল থাকলে আরও ৪০ হাজার টাকার টমেটো বেচার আশা করছেন তিনি। কুদরত আলী বলেন, ‘গতবারের চেয়ে এবার ভাল ফলন ও হয়েছে বাজারে দামও ভালো আছে। অন্য ফসলের তুলনায় টমেটো চাষে লাভ বেশি।

কুদরত আলীর মতো গোদাগাড়ীর আরও কয়েক হাজার চাষি এবারও শীতকালীন টমেটো চাষ করে লাভবান হয়েছেন। মৌসুম এখনও শেষ হয়নি, কিন্তু এরই মধ্যে খরচের টাকা উঠে গেছে চাষিদের।

কৃষি বিভাগের হিসাবে, প্রায় দুই দশক আগে গোদাগাড়ীতে শীতকালীন হাইব্রিড জাতের টমেটো চাষ শুরু হয়। বরেন্দ্র অঞ্চলের লাল মাটিতে টমেটো ফলিয়ে প্রথম দিকে প্রতিবছরই চাষিরা লাভ করতেন। মাঝে কয়েকবছর নিম্নমানের বীজের কারণে চাষিদের ক্ষতি হয়েছে। এখন আবার কয়েকবছর ধরে চাষিদের লাভ হচ্ছে। এবার শীত মৌসুমে রাজশাহীতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে। এর প্রায় সবটাই চাষ হয়েছে গোদাগাড়ীতে। অল্প কিছু টমেটো চাষ হয়েছে পাশের পবা উপজেলায়।

এখানকার চাষিরা জমি থেকে পরিপক্ক টমেটো কাঁচা অবস্থায় তোলেন। তারপর এসব টমেটো রোদে দিয়ে স্প্রে করা হয় ইথিফন গ্রুপের রাসায়নিক। এতেই পেকে লাল হয়ে যায় টমেটো। প্রথম দিকে ইথিফন ব্যবহার নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে আপত্তি এলেও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর কৃষি বিভাগ নিশ্চিত হয়, নির্দিষ্ট পরিমাপে ইথিফন ব্যবহার মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর নয়। তাই বছরের পর বছর এভাবেই টমেটো লাল হচ্ছে গোদাগাড়ীতে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এসে এখানকার টমেটো কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

বসন্তপুর গ্রামের চাষি মোজাম্মেল হক বলেন, ‘এবার টমেটোর দাম খুব ভাল আছে। এক সপ্তাহ পর পর জমি থেকে টমেটো তোলা যায়। নভেম্বরের শুরু থেকেই টমেটো উঠছে। জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত ফলন হবে। কৃষকের খরচের টাকা প্রথম দুই চালানেই উঠে গেছে। এখন যে রকম দাম পাওয়া যাচ্ছে, বাকি সময়টাও পাওয়া গেলে কৃষক লাভে লাল হয়ে যাবে।’

ঢাকা থেকে আসা টমেটো ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ খান জানান, প্রতিবছরই যখন প্রথম টমেটো ওঠে, তখন দামটা একটু বেশি থাকে লাভও হয়। কিন্তু শেষের দিকে ভারত থেকে টমেটো আমদানির কারণে। লাভের পরিমান কমে আসে।

গোদাগাড়ীতে এবার কয়েক ধরনের হাইব্রিড জাতের টমেটো চাষ হয়েছে। বর্তমানে কৃষকেরা ব্যবসায়ীদের কাছে কাঁচা টমেটো বিক্রি করতে পারছেন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা মণ দরে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এসব টমেটো পাকিয়ে বেপরীদের কাছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করছেন। কোন কোন ব্যবসায়ী নিজেই শ্রমিক নিয়ে কাঁচা টমেটো পাকাচ্ছেন।

জেলা কৃষি কর্মকর্তা মোজদার হোসেনের জানান, এবার চাষিদের ভাল লাভ হচ্ছে। উপজেলার লাল মাটি শীতকালীন টমেটো চাষের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। এ কারণে শীতকালে এখানে প্রচুর টমেটো হয়। কম-বেশি প্রতিবছরই চাষিরা লাভ করে থাকেন। কৃষকদের টমেটো চাষে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে থাকে কৃষি অফিস।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |