শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:২১ পূর্বাহ্ন
সবুজ হোসেন, ঝিনাইদহ : সময়মত বৃষ্টি না হওয়া, মৌসুমের শুরুতে কৃষক পাট বিক্রি করে ভালো দাম না পাওয়া, খরচের তুলনায় লাভ না হওয়ায়, অল্প সময়ের মধ্যে অধিক লাভবান ফসলের উৎপাদনসহ নানাবিধ প্রতিকুলতায় পাট চাষ করতে আগ্রহ হারাচ্ছে ঝিনাইদহের কৃষকরা। গত মৌসুমের তুলনায় চলতি মৌসুমে ১’ হাজার ৬৬ হেক্টর জমিতে কম পাট চাষ হয়েছে। এরপরও আষাঢ়, শ্রাবণে এখনও ভারি বৃষ্টি না হওয়ায় পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছেনা কৃষক।
কৃষকরা জানান, আষাঢ় শেষ, চলছে শ্রাবণ মাস, তাও শেষের দিকে। গেল মাসে কম বেশি বৃষ্টি হলেও চলতি মাসে এখন পর্যন্ত তেমন বৃষ্টির দেখা যায়নি। শ্রাবনের শরুতে কিছুটা গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হলেও পাট চাষ করা কৃষকের তেমন একটা লাভ হয়নি। পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টি না হওয়ায় খালবিল নদীতে তেমন পানি নেই। পানির অভাবে কৃষক পাট কেটে জাগ দিতে পারছেনা। আবার আষাঢ়ে ধান লাগানোর ভরা মৌসুমে পানির অভাবে চারা রোপণ করতে পারছেনা কৃষক। ফলে বীজতলাতেই চারাগাছ বড় হয়ে তামাটে রুপ নিয়েছে। কিছু কৃষক বিদ্যুৎ চালিত মোটর এবং স্যালো- ইঞ্জিনের মাধ্যমে সেচের মাধ্যমে ধানের চারা রোপণ করলেও পানির অভাবে চারা মারা যাচ্ছে।
কেউ কেউ সেচ দিয়ে জমির চারাগাছ ঠিক রাখার চেষ্টা করছে। তবে বেশি পরিমাণ সমস্যার সম্মুখীন পাট চাষ করেছেন এমন কৃষক। জেলার পদ্মপুকুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রহিম মোল্লা জানান, পাট চাষ করতে বীজ, চাষ, শ্রমিকসহ বিঘা প্রতি জমিতে প্রায় ২৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। পাট কেটে জাগ দিতে পারছেনা পানির অভাবে। আবার ধানের চারা বীজতলায় বড় হয়ে যাচ্ছে। পানির অভাবে চারা রোপণ করতে পারছেনা।
একই গ্রামের খোরশেদ আলম জানান, পানির অভাবে পাট কেটে জাগ দিতে না পারলেও জমির পাশে রেখে, ধানের চারা রোপণ করছে কোন কোন কৃষক। মহেশপুর উপজেলার নেপা বাজারে পাট ব্যাবসায়ি হারুন বলেন, গত দুই বছর পাটের ব্যাবসার তার লোকসান গুনতে হয়েছে। কয়েক’শ মন পাট কিনে লাভের আশায় বান্দায় করে সেখানেও বড় ধরনের লোকসান গুনতে হয়েছে তার।
এবছর বাজারে কম বেশি পরিমাণ পাট আসতে শুরু হয়েছে। বর্তমান পাটের রংসহ বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে প্রতিমন পাট ২’ হাজার থেকে ২২’শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে এই বছর পাট কিনবেন কি- না সিদ্ধান্ত এখনও করেননি তিনি। কৃষি সম্প্রসারন অধিদফতর জানান, চলতি মৌসুমে ২২’ হাজার ৫২৪ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ করেছেন কৃষক। আর গত মৌসুমে জেলায় ২৩ হাজার ৫৯০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছিল।
যা গত মৌসুমের তুলনায় চলতি মৌসুমে ১’ হাজার ৬৬ হেক্টর জমিতে কম চাষ করেছেন কৃষক। বৃষ্টি সম্পর্কে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুল হাসান বলেন, এসময়ে দেশের সর্বত্র মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। কিন্তু কয়েকদিন থেকে তুলনামূলক বৃষ্টিপাত কম।
তিনি আরও বলেন, আমরা জানি যে, আষাঢ়-শ্রাবণ বর্ষাকাল। কিন্তু বর্ষার এইদিনে তাপপ্রবাহটা অস্বাভাবিক ব্যাপার। এমনটা এর আগে খুব কমই দেখেছি। এবছরে আবহাওয়ার আচরণ ব্যতিক্রম। এই সময় বৃষ্টি থাকার কথা। কিন্তু তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে। এটা আশা করা যায় না। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আগামী কয়েকদিন সর্বত্র ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। তবে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হতে পারে, আবার অঞ্চল ভেদে একটু বেশি পরিমাণ হতে পারে বলে জানান এই কর্মকর্তা।