শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১০:২৮ অপরাহ্ন

আপডেট
নিজ গ্রামে ন্যানো বিজ্ঞানীকে বিরল সম্মাননা

নিজ গ্রামে ন্যানো বিজ্ঞানীকে বিরল সম্মাননা

মো. আব্দুল মান্নান:  নিজ গ্রামে ন্যানো বিজ্ঞানী মালয়েশিয়ার সানওয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিশ্বসেরা গবেষক ড. সাইদুর রহমানকে বিরল সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। ১৯ নভেম্বর ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার রামভদ্রপুর ইউনিয়নের চরনিয়ামত গ্রামে অবস্থিত চরনিয়ামত আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে তাকে এ সম্মাননা দেওয়া হয়। তিনি ওই গ্রামের মো. আব্দুল হাকিম ও বাদরুল আরা বেগম দম্পতির বড় ছেলে। কখনো কখনো অনেক বড় মাপের মানুষও নিজ এলাকায় মূল্যায়ন পান না। কিন্তু সাইদুর রহমান এর ব্যতিক্রম। তিনি ২৬ বছর ধরে দেশের বাইরে থাকলেও তাকে তার এলাকার আবাল, বৃদ্ধ বণিতা সবাই ভালবাসেন। কারণ, তিনি প্রায় প্রতি বছরই দেশে আসেন। ময়মনসিংহ শহরে তার বহুতল ভবন রয়েছে। ভবন থাকলেও তিনি শুধু বাসায় বসে থাকেন না। গ্রামে আসেন। পাড়ায়, মহল্লায় বের হন।

সাধারণ মানুষের সাথে কুশল বিনিময় করেন। তাদের ডেকে ঘরে আনেন এবং আদর আপ্যায়ন করেন। খাওয়ান। তাদের সুখে দুখে পাশে থাকেন। অভাবী মানুষের খোঁজ খবর নেন। হাসিমুখে কথা বলেন। অসুস্থদের দেখতে যান। যাদের ওষুধ কেনার টাকা নেই তাদের ওষুধ কিনে দেন। যাদের ঘরে খাবার নেই তাদের সাধ্যমত খাবারের ব্যবস্থা করেন। অসহায়দের সহায়তা করেন। পথশিশু, টোকাইদের পাশে দাঁড়ান। এতিম অসহায়দের ভালবাসেন। মেধাবী দরিদ্র শিক্ষার্থী যারা টাকার জন্য ভর্তি হতে পারে না তাদের ভর্তির ব্যবস্থা করেন। তিনি পত্রিকা পড়েন। ‘অর্থাভাবে মেধাবী ছাত্রের পড়ালেখা বন্ধ’ এ ধরনের খবর তার দৃষ্টি গোচর হলে তিনি তা যাচাই বাছাই করেন। যাচাই বাছাইয়ের পর সত্যিকারের অসহায়দের পাশে দাঁড়ান তিনি। তার আর্থিক সহায়তায় বেশ কয়েকজন মেডিকেল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীর পড়াশোনা চলছে।

শুধু মুসলিম নয় বা নিজ এলাকার নয় বরং যে কোন জায়গার হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টানদেরকেও তিনি সহায়তা করেন যদি সে সহায়তা পাওয়ার উপযুক্ত হয়। এ ব্যাপারে তিনি কোন ভেদাভেদ করেন না। সৃষ্টি কূলের প্রতি তার রয়েছে অগাধ ভালবাসা। উপজেলা সদর থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে তার গ্রামের বাড়ি অবস্থিত। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে উঠে আসা এ ন্যানো বিজ্ঞানীর গ্রামের প্রতি রয়েছে প্রচুর টান ও ভালবাসা। কিছু মানুষ এমন আছেন যারা একটু উপরে উঠলে তার কাছের আত্মীয়কেও ভুলে যান কিন্তু ড. সাইদুর রহমান এর সম্পূর্ণ বিপরীত। তিনি উচ্চ পর্যায়ে চলে গেছেন বলে যারা তার কাছে যেতে সাহস পান না তিনি তাদের কাছে ছুটে যান। তাদের সাথে তিনি আগে কথা বলেন। বসেন। খোশ আলাপন করেন। মা বাবার খেদমত করেন। আত্মীয়দের বাসায় বেড়াতে যান। আন্তরিকতা গড়ে তুলেন। যে কারণে তিনি গ্রামে আসলে গ্রামের মানুষ তার কাছে ছুটে আসেন। এক নজর দেখার জন্য। তখন তিনি তাদের আদর আপ্যায়ন করেন। খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করেন।

এবার তিনি ১টি ষাঁড় ও ৩টি খাশি জবাই করে তার কাছে আসা মেহমানদের খানা খাওয়ায়েছেন। আমাদের সমাজে এমন ধনী লোকও আছেন যারা এক কাপ চা খাওয়াতে হবে বলে মানুষের সাথে বসেন না। মনখুলে কথাটা পর্যন্ত বলেন না। এঁড়িয়ে চলেন। দেখেও না দেখার ভান করেন। সম্পদের যাকাত দেন না। কিন্তু ড. সাইদুর রহমান এর সম্পূর্ণ বিপরীত। তিনি সবসময় গরিব দুঃখি মানুষের পাশে থাকতে চান। যেখানেই দুঃখ দুর্দশাগ্রস্ত লোকের সন্ধান পান সেখানেই তিনি কম করে হলেও সহায়তা করার চেষ্টা করেন। যাকাত দেন। বগুড়ার একটি এতিমখানায়ও অনলাইনে খবর পেয়ে তিনি সহায়তা করেছেন। বিভিন্ন মসজিদ মাদরাসায় তার দান সাদকা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু এগুলো মানুষের প্রশংসা পাওয়ার জন্য নয় বরং আল্লাহর শোকরিয়াস্বরূপ তিনি এসব দান করে থাকেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এসব তথ্য জানালেও তিনি তা প্রকাশ করতে নারাজ। তবে এ প্রতিবেদক মনে করেন ধনীদের উদ্বুদ্ধ করতে কিছু কিছু প্রকাশ করা প্রয়োজন রয়েছে। তিনি একজন রেমিট্যান্স যোদ্ধা। সম্প্রতি তিনি সিআইপি নির্বাচিত হয়েছেন। আরেকটি বিষয় হলো, আমাদের সমাজে মানুষ মানুষের দুর্নাম করতে ভালবাসে; প্রশংসা করতে চায় না। গ্রামে কারো ছেলে বড় হলে এটি আরেকজন মেনে নিতে চায় না। বিশেষ করে কাছের কারো ছেলের প্রশংসা শুনলে তিতা লাগে। কিন্তু ড. সাইদুর রহমানের ক্ষেত্রে এর ভিন্নতা দেখেছি। তাকে গ্রামের প্রায় সবাই ভালবাসেন। কারণ, ছোটবেলা থেকে তিনি সৎ ও আদর্শ ছিলেন। বিনয়ী ও নম্রভদ্র ছিলেন। বড়দের সম্মান ও ছোটদের স্নেহ করতেন। সমবয়সীদের সাথেও রয়েছে তার মধুর সম্পর্ক।

ফলে সর্বমহল থেকে তিনি সমাদৃত। ১৯ নভেম্বর তাকে দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে গিয়ে সচক্ষে তা দেখে ও অনুধাবন করে এসেছি। নিজ কানে শুনছিলাম তার প্রশংসা। উপস্থাপক মাইকে চিৎকারে করে তার প্রশংসা করছিলেন। মাল্যদানের যে সিরিয়াল লেগেছিল আমার দেখা মতে এত পরিমাণ মালা রাজনৈতিক নেতা নেত্রী ব্যতীত আর কারো গলায় পরাতে দেখিনি। কতক্ষণ পর পর তার গলা থেকে মালা সরাতে হয়েছিল। তার ছোটবেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চরনিয়ামত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রচুর শিক্ষার্থী জনে জনে তাকে মালা পরাচ্ছিল। স্কাউট গ্রুপ, চরনিয়ামত আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ২০২৪ ব্যাচের বিদায়ী শিক্ষার্থীরা, চরনিয়ামত আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকমন্ডলী, ইসলামনগর সাইলামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক, গ্রামের ও আশপাশ এলাকার মুরুব্বিরা, প্রধান শিক্ষক ও সর্বশেষ তার প্রিয় শিক্ষক মাওলানা আবু তালহা তার গলায় মাল্যদান করেন। দীর্ঘ সময় ধরে তাকে বরণ অনুষ্ঠিত হয়। সে এক স্মরণীয় বরণানুষ্ঠান। এর আগের বছরও তার মা বাবার সামনে তাকে সম্মাননা দেওয়া হয়েছিল। ড. সাইদুর রহমান বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সম্মাননা পেয়েছেন। তবে আমার মনে হয়, এতে তিনি এতটা আনন্দ পাননি যতটা পেয়েছেন নিজ গ্রামের মানুষের পক্ষ থেকে দেওয়া সংবর্ধনায়। এ ছাড়া ফুলপুর সরকারি কলেজে ও ফুলপর মহিলা ডিগ্রি কলেজে মোটিভেশনাল স্পীচ দিতে গেলে কলেজ কর্তৃপক্ষ তাকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করেন। এগুলো সবই তার গুণের উপহার। এজন্য আমাদেরকে গুণ অর্জন করতে হবে। শুধু মানুষ নয় বরং গুণী মানুষ হতে হবে। ড. সাইদুর রহমানদের অনুসরণ করতে হবে। তাহলে আমরা সম্ভবত: সফল হতে পারবো, ইনশাআল্লাহ।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |