শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:২০ অপরাহ্ন
মতিউর রহমান খান : শিক্ষাভবনে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের তাৎক্ষণিক আন্দোলন কর্মসূচি চলাকালীন সময়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা হামলা চালিয়েছে। এতে অনেকে শিক্ষক আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন সহকারী শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল নাহিয়ান, সিনিয়র শিক্ষক হারুনুর রশিদ, আবুল কালাম আজাদ। এতে সারাদেশের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন । এই ন্যাক্কারজনক হামলার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষকরা । এই ঘটনার প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দার ঝড় উঠেছে।
দেশের কোথাও কোথাও মানববন্ধন ও কর্মবিরতি পালন করেছেন শিক্ষকরা । এই ন্যাক্কারজনক হামলার বিচারের দাবিতে আগামীকাল সারাদেশে নানা কর্মসূচি পালনের ঘোষনা দিয়েছেন শিক্ষক নেতারা। । কর্মসূচী হিসাবে তারা কর্মবিরতি ও প্রতিবাদ সমাবেশ করবেন বলে জানা গেছে। বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষক ও নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে দীর্ঘদিনের বঞ্চনার কারণে তাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। যেমন, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সমগ্রেডের বদলি যোগ্য সমপদ। সিনিয়র শিক্ষক/ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পদোন্নতির নীতিমালায় ৫০% পদ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকদের জন্য সংরক্ষিত। সিনিয়র শিক্ষক পদে পদোন্নতি হয়েছে ২০২০ সালে। অথচ অজানা কারণে তাদের প্রাপ্য ৫০% ভাগ পদে আজ পর্যন্ত পদায়ন করা হয়নি! উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা প্রজেক্ট থেকে রাজস্বে এসেছেন। তাদের পদ ব্লক পোস্ট।
এখন তারাই সহকারি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা/জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মতো ক্যাডার পদে চলতি দায়িত্ব পেতে তদবির, আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছেন। যা তাদেরকে আরো ক্ষুব্ধ করেছে। তারা বলছেন এটা আইনসম্মত নয়। ১৩ থেকে ২০ বৎসর চাকরি করেও শিক্ষকরা টাইমস্কেল/সিলেকশনগ্রেড থেকে বঞ্চিত। টাইমস্কেল/সিলেকশনগ্রেড মামলায় শিক্ষকরা রায় পেলেও শিক্ষা ভবন ৯ মাস পর আজান কারনে আপিল করে। সেই আপিলে স্থগিতাদেশ না থাকলেও কর্তৃপক্ষ তাদেরকে টাইমস্কেল সিলেকশনগ্রেড থেকে বঞ্চিত রেখেছে। সহকারী শিক্ষক পদে ১৪ বছর যাবৎ চাকরি করছেন, সিনিয়র শিক্ষকের পদ খালি অথচ সিনিয়র শিক্ষক পদে পদোন্নতি দিচ্ছেন না। কর্তৃপক্ষ অজুহাত দেখাচ্ছেন জ্যেষ্ঠতা তালিকা নিয়ে মামলা আছে। শিক্ষকরা দাবি করছেন কর্তৃপক্ষ চাইলে পদোন্নতি দিতে পারে।কারণ ২০২০ সালে সিনিয়র শিক্ষক পদে যে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে সেই তালিকা নিয়ে কারোর আপত্তি নেই, মামলাও নেই। চাইলে সেই তালিকা দিয়ে আপাতত পদোন্নতি দিতে পারে। পরবর্তীতে মামলার রায় আসলে সে অনুযায়ী জ্যেষ্ঠতা তালিকা নির্ধারিত হবে। এরকম নানা কারণে সরকারি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের মধ্যে হতাশা আর ক্ষোভ বিরাজ করছে।
তারা দাবী করছেন এই কারনেব তারা মানসিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। সারাদেশে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষক কর্মরত।বিসিএস নন ক্যাডার থেকে নিয়মিত তাদের পদায়ন দেয়া হচ্ছে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তারা পাঠদান করেন। তারপরও ন্যায়সঙ্গত এবং যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়া হচ্ছে না। যদি মেনে না নেয় তবে তারা কর্মবিরতি দেয়ার মতো কঠোর কর্মসূচিতে যাবেন বলে জানিয়েছেন।তারা দাবী জানিয়েছেন আগামী ১০ কর্মদিবসের মধ্যে শিক্ষকদের উপর হামলাকারী দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। মাধ্যমিক শিক্ষা প্রশাসনের যে যে পদে সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের পদায়নের নীতিমালা রয়েছে সে অনুযায়ী তাদের পদায়ন দিতে হিবে। যেমন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পদে সিনিয়র শিক্ষক থেকে পদায়ন,সরকারি শিক্ষক থেকে সহকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পদে পদায়ন ও প্রধান শিক্ষক থেকে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পদে পদায়ন দিতে হবে। আগামী এক মাসের মধ্যে সহকারী শিক্ষক থেকে সিনিয়র শিক্ষক পদে পদোন্নতি দিতে হবে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা না থাকায় বিভিন্ন ব্যাচের বকেয়া টাইমস্কেল/ সিলেকশনগ্রেড বাস্তবায়ন করতে হবে।