শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:১৬ পূর্বাহ্ন
ইমাম হোছাইন,তিতাস: কুমিল্লার তিতাসে ঐতিহ্য রক্ষায় যুগ যুগ ধরে সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে নানা ভাবে বাবার আবেদন ও আকুতি জানিয়েছিল এলাকার সর্বস্তরের লোকজন। কিন্তু কোন ফলাফল পায়নি। ফলে দিন দিন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে উপজেলার ঐতিহ্যবাহী নিদর্শনগুলো। ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা গৌরীপুর বাসস্টান্ড থেকে গৌরীপুর হোমনা সড়কের সাড়ে ৬ কিলোমিটার উত্তরে কড়িকান্দি বাজার। এই বাজার থেকে পশ্চিম দিকে সাড়ে ৩ কিলোমিটার গেলেই ইতিহাস ঐতিহ্যের সাক্ষী মজিদপুর গ্রামে অবস্থিত মজিদপুর জমিদার বাড়ি।
শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়,পরিত্যাক্ত জমিদার বাড়িটি সংস্কারের অভাবে এবং গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে অবশেষে দ্বিতল ভবনের পূর্ব পাশের একটি অংশ ধ্বসে পড়ে যায়। এ সময় জমিদার বাড়ির পাশেই বসবাসরত পাকঘরে রন্ধনে ব্যাস্ত ছিলেন এক গৃহিণী অল্পের জন্য তিনি বেচে যান। তিনি বলেন আল্লায়ই আমারে বাচাইছেন মাত্র ১ মিটার ভেতরে ভবনটি যদি আছড়ে পড়ত তহলে আমি স্তুপের নীচে চাপা পড়ে মারা যেতাম। ভাগ্য ভালো বৃষ্টির জন্য বাচ্চার সে সময় ঐ যায়গায় খেলাধুলা করতে যায়নি। নতুবা কিযে হত? স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি ছিলো এই ঐতিহ্যবাহী জমিদার বাড়িটি যেন সংস্কার করা হয়। আর জমিদার বাড়িটি রক্ষার জন্য তারা নানা রকম কর্মসূচিও পালন করেছিলো। পর্যটকদের আনাগোনাও বেড়েছিলো এই কিছুদিন আগেও। ভারী বর্ষণে সম্প্রতি জমিদার বাড়িটি ধসে যাওয়ায় দুখের ছাপ পড়েছে সেইসব পর্যটকদের চোখে মুখে।
জানা যায়, ১৮০০ শতকের দিকে শ্রী রামলোচন রায় বাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিতাস, হোমনা, মেঘনা ও মুরাদনগর এলাকা ছিল তার জমিদারির আওতাধীন। এই বাড়িতে মোট ১৭টি ভবন ছিল। এখন মাত্র হাতেগোনা কয়েকটি অবশিষ্ট আছে। বাকিগুলো ধস ও দখলে নিমজ্জিত হয়ে গেছে । এছাড়া ১টি দিঘি ও ২০টি পুকুর খনন করা হয়েছিল। সেগুলো এখন নামেমাত্র আছে। ইতিহাসে এই বংশের কয়েকজন জমিদারের নাম পাওয়া যায়। তারা হলেন শ্রী কালীচরণ রায়, ব্রজেন্দ্র কুমার রায়, শিবচরণ রায়, পিয়ারী মোহন রায়, বিহারী মোহন রায়, শশী মোহন রায়, শরৎচন্দ্র রায়, মোহিনী মোহন রায়, ক্ষিতিষ চন্দ্র রায়, গিরিশ চন্দ্র রায়, শিরিশ চন্দ্র রায়, হরলাল রায়, যোগেশ চন্দ্র রায়, শ্রী নারায়ণ চন্দ্র রায়, শ্রী দুর্গাচরণ রায়, ক্ষেত্র মোহন রায়, কুঞ্জ মোহন রায় ও উপেন্দ্র চন্দ্র রায়।
তাদের মধ্যে, ক্ষেত্র মোহন রায় তিতাস উপজেলার প্রথম এন্ট্রাস পাস, প্রথম গ্র্যাজুয়েট এবং আইনজীবী। উপেন্দ্র চন্দ্র রায় তিতাস উপজেলার প্রথম গ্র্যাজুয়েট ডাক্তার। রামলোচন রায়ের মতো আরো দুজন নামকরা জমিদার হলেন রাম সুন্দর রায় ও রামগতি রায়। শ্রী রামলোচনের পরে তার বংশধররা ২০০ বছর এই জমিদারি দেখ শোনা করতেন। জমিদারি প্রথার অবসান ঘটলে তার বংশধররা সম্পত্তি রেখে ভারতে পাড়ি জমান। সেই থেকে পড়ে আছে জমিদার বাড়িটি। এ বাড়িতে এখন আর জমিদারদের কেউ থাকেন না। এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার ভুমি আশিক উর রহমান সাংবাদিকদের জানান,জমিদার বাড়িটি সংস্কারের ব্যাপারে আমরা প্রত্নতত্ত্ব দপ্তারে চিঠি দিয়েছিলাম এতে আমরা কোন সাড়া পাইনি। তাই এ ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নিতে পারিনি।