শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩২ অপরাহ্ন

জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে কুরআনের আয়াত পড়ে বক্তব্য দিলে হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষক

জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে কুরআনের আয়াত পড়ে বক্তব্য দিলে হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষক

রাশেদুল ইসলাম আপেল, নীলফামারীঃ কুরআন শরীফের ৯৬ নং সূরা আলাক এর প্রথম আয়াত ‘ইকরা বিসমি রব্বিকাল্লাজি খলাক’ তেলাওয়াত করে বক্তব্য দেন আকাশকুঁড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামিনী কুমার রায়। শনিবার সকালে ইসলামীয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আয়োজনে কর্মী সম্মেলন প্রায় ১৫ বছর পর খোলা ময়দানে প্রকাশ্যে হওয়ায় দশ হাজারের বেশী কর্মীর জমায়েত দেখা গেছে। এ সময় দুই শতাধিক অমুসলিম নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহন করেন। জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে আমন্ত্রণ পেয়ে দ্বায়ীত্বশীলদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে প্রধান শিক্ষক কামিনী সূরা আল আলাক এর প্রথম আয়াত ‘ইকরা বিসমি রব্বিকাল্লাজি খলাক’ তেলাওয়াত করে সেটা উপর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য প্রদান করেন।

এ সময় তিনি বলেন, আমি একটি পেশাদার ডিগ্রি কোর্স ‘ব্যাচেলর অফ এডুকেশন-(বিএড) করার সময় ইসলামের ইতিহাস পড়ার পাশাপাশি কিছু আয়াত শিখেছি। এই আয়াতটির বাংলা অর্থ- ‘পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমাকে এক বিন্দু রক্ত থেকে সৃষ্টি করেছেন।’ আমাদের প্রভু সৃষ্টি করেছে কিন্তু আমাদের এই শরীর টা পৃথিবীতে এসেছে মা বাবার মধ্য দিয়ে। আমরা মানুষ এক সৃষ্টার সৃষ্টি এখানে ভেদাভেদ আমরা নিজেরাই করি। আমাদের মতভেদের পার্থক্য থাকতে পারে, নিজ ভাইদের মধ্যেও মনমালিন্য থাকতে পারে কিন্তু ভাইয়েরা কখনো বিচ্ছিন্ন হয়না। তেমনিভাবে আমরাও একে অপরের পরিপুরক, তাই আমরা একে অপরকে সহযোগীতা করে শান্তি, সম্প্রীতি এবং সৌহার্দ্য বজায় রাখি।

ডিমলা উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি রুকনুজ্জামান বকুলের সঞ্চালনায় ও উপজেলা আমীর অধ্যাপক মাওলানা মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন দলের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল। এ সময় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের টিম সদস্য ও নীলফামারী জেলা জামায়াতের আমীর মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আলহাজ্ব হযরত মাওলানা ফরিদুল ইসলাম, নীলফামারী জেলা নায়েবে আমীর ড. খাইরুল আনাম, জেলা নায়েবে আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সাত্তার, জেলা সেক্রেটারি অধ্যাপক মাওলানা আন্তাজুল ইসলাম সহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে ইসলামী সঙ্গীত পরিবেশন করে নীলফামারীর নীলাচল শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীবৃন্দ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাহবুবুর রহমান বেলাল বলেন, এখনো মৃত্যুর মিছিল চলছে। হাসপাতালে এখনো আহতরা কাতরাচ্ছে। ২২ হাজারের মতো মানুষ এই গণ আন্দোলনে আহত ও পঙ্গু হয়েছেন। দীর্ঘ ১৫ বছর নির্যাতনের পর এই মুক্তি অনেক মূল্যে কেনা। নেতাদের একেকজন নেতার বাড়ি থেকে যে পরিমাণে অবৈধ টাকা পাওয়া যাচ্ছে তা দিয়ে একটা পদ্মা ব্রিজ তৈরি করা যেত। তারা এদেশের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচার করেছে। যারা দেশকে এভাবে জাহান্নামের টুকরা বানিয়েছে এবং গনহত্যা চালিয়েছে অন্তবর্তী কালীন সরকারের কাছে এদের বিচারের দাবী জানান। অধ্যাপক বেলাল বলেন, যারা ক্রসফায়ার করেছে, যারা গুম করেছে এবং যারা আয়না ঘর তৈরি করে বিচার করেছে তাদেরকে কোন ছাড় দেয়া যাবে না। তাদের বিচার বাংলাদেশে হতে হবে, শেখ হাসিনাকে যে কোন মূল্যে বাংলাদেশে নিয়ে আসতে হবে। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে শুধু গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকলে হবে না গ্রেফতার করে দেশে এনে বিচার করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, শতশত হত্যাকান্ড যার হাতে হয়েছে তার হাতে এখনো রক্ত লেগে আছে। নিরাপরাধ আলেম-ওলামাদের রক্ত কোনদিন বৃথা যেতে দেওয়া হবে না ইনশাআল্লাহ। আমরা চাইনা এই বাংলাদেশে আরেকজন শেখ হাসিনা পয়দা হোক। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার। যে বাংলাদেশে সকল ধর্মের মানুষ মানবাধিকার নিয়ে শান্তিতে থাকবে। সেই বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি কাজ করছে। দুইজন জামায়াতের মন্ত্রী ছিলো চার দলীয় ঐক্য জোটে তারা এক টাকাও দুর্নীতি করে নাই। কাজেই আমাদের পক্ষেই দুর্নীতিমুক্ত এই সুন্দর সমাজ উপহার দেওয়া সম্ভব। এখন আমাদের কাজ হবে সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধি করা।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও নীলফামারী জেলা আমীর বলেন, যারা আমাদের উপর জুলুম নির্যাতন করেছে তাদের উদ্দেশ্য সফল হয়নি বরং দিন দিন সংখ্যাটা আমাদের বেড়েছে। আল্লাহ তায়ালার গোলামি করার জন্য জামায়াতে ইসলামের আমাদের ট্রেনিং দিয়েছেন। আমরা আখিরাতে নাজাত পাওয়ার জন্য জামায়াতে ইসলামী করি। আমরা বিশ্বাস করি দুনিয়ার পরে একটি অনন্ত জীবন আছে সেটার নাম আখেরাত আমরা সেই আখেরাতে নাজাত পেতে চাই।

জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে অনুষ্ঠান শেষে মন্তব্য প্রকাশ করেন উপস্থিত হিন্দু ধর্মাবলম্বী প্রতিনিধিরা। এ সময় ডিমলা শালহাটি এলাকার দেবরঞ্জন জানান, জামায়াত সম্পর্কে ইতিপূর্বে যা শুনেছি তা ভুল, এখন যা দেখছি তাই ঠিক। জামায়াত ঐক্যের কথাবাত্রা বলতেছে, কিছু নিহত পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করে আর্থিক সহযোগিতা করেছে তার জন্য আমরা জামায়াতে ইসলামীকে ধন্যবাদ জানাই। নাউতারা এলাকার জ্যোতিষ চন্দ্র রায় জানান, জামায়াতকে আমরা সমর্থন করি। তাদের কথাবার্তা, ভাষা ও জ্ঞানে এবং হিন্দুদের নিরাপত্তা সহ সার্বিক সহযোগীতা সব কিছুই ভালো। জামায়াত যাতে ক্ষমতায় গিয়ে ধর্মীয় আলোয় যেন দেশ শাসন করে এতে সকল ধর্মের জন্য ভালো হবে। এতে সকল ধর্মের জন্য মঙ্গল হবে, জামায়াতকেই আমরা চাই।ডিমলা সদরের উত্তম কুমার জানান, জামায়াতের দলের মধ্যে কখনো বিশৃঙ্খলা দেখিনি। অন্যদলের মতো লুটপাটের রাজনীতি করে না। তারা শান্তিতে বিশ্বাসী, এতো দিনে তাদের কাছে আমাদের আসতে দেয়নি। তাই তাদের প্রতি আমাদের ভূল ধারণা ছিলো সেটি আর নেই। তারা(জামায়াত) সু-সংগঠিত একটা সংগঠন। এজন্য জামায়াতকে সাধুবাদ জানাই।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |