শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৩৮ পূর্বাহ্ন

গোয়ালন্দে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই পদ্মায় ইলিশ ধরছে জেলেরা

গোয়ালন্দে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই পদ্মায় ইলিশ ধরছে জেলেরা

নাজমুল হোসেন,গোয়ালন্দ : গোয়ালন্দের পদ্মা নদীতে নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও অবাধে চলছে ইলিশ মাছ শিকার। মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলায় নদীতে সব ধরনের মাছ ধরা, বিক্রি ও পরিবহন নিষিদ্ধ। কিন্তু এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পাংশা থেকে গোয়ালন্দ পর্যন্ত পদ্মা নদীর ৫৭ কিলোমিটার এলাকার অবাধে মা ইলিশ মাছ শিকার করছে জেলেরা দেবগ্রাম নদীর তীর এলাকায় দেখা গেছ,পদ্মা
পাড়ে অস্থায়ী হাট বসিয়ে এসব মাছ বিক্রি করা হচ্ছে প্রকাশ্যে। দূরদুরান্ত থেকে ক্রেতারা আসছেন সস্তায় ইলিশ কিনতে।

জেলেরা জানান,নিষেধাজ্ঞার সময় সরকারি সহায়তা দেয়ার কথা থাকলেও তা ঠিক মত পাচ্ছেন না অধিকাংশ জেলেরা। আবার যারা পাচ্ছেন তাও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।এ কারণে পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে মাছ শিকারে নেমেছেন তাঁরা।  দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া দেবগ্রাম এলাকায় নদীর তীরবর্তী এলাকায় পদ্মা নদীতে জেলেদের নৌকা নিয়ে মাছ শিকার করতে দেখা গেছে। আরো দেখা গেছে,দেবগ্রাম ইউনিয়ন চর কাওয়ালজানি গ্রাম সংলগ্ন নদীর তীরে ইলিশের অস্থায়ী হাট বসেছে। জেলেরা নদী থেকে ইলিশ শিকার করে এনে এই অস্থায়ী হাটে বিক্রি করছেন।
দূরদুরান্ত থেকে ক্রেতারা এসেছেন সস্তায় ইলিশ কিনতে। ১ কেজির বেশি ওজনের ইলিশ জেলেরা ১ হাজার ৫০০ টাকা ও ছোট (জাটকা) ইলিশ ৫৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন। তবে এ সময় নদীতে মৎস্য বিভাগের কাউকে অভিযান চালাতে দেখা যায়নি। মাছ কিনতে আসা এক ব্যাক্তি বলেন, স্বাভাবিক সময়ে যে মাছের দাম ২/৩ হাজার টাকা কেজি, সেই মাছ এখন জেলেরা অর্ধেক দামে বিক্রি করছেন। যে কারণে এখান থেকে সস্তায় কয়েক কেজি মাছ কিনলাম।

মাছ ধরা এক জেলে সাথে বলেল সে জানায়, তালিকাভুক্ত জেলে ১৪ হাজার। কিন্তু সরকার চাল সহায়তা দিয়েছে মাত্র ৪ হাজার জনকে। তাও আবার মাত্র ২৫ কেজি করে চাল দিয়েছে। আমরা অধিকাংশ প্রকৃত জেলেরাই এই চাল পাইনি।তাই পেটের তাগিদে বাধ্য হয়েই জাল নিয়ে নদীতে নামতে হচ্ছে।আরেক জেলে বলেন,আমার সংসারে ৭/৮ জন লোক আমি ২৫ কেজি চাল পেয়েছি।কিন্তু এই সামান্য চাল দিয়ে কয়দিন সংসার চলে। শুধু চাল দিয়ে ভাত রান্না করলে তো আর খাওয়া যায় না। আনুসঙ্গিক অনেক বাজার-সদাই লাগে। তাঁর ওপর আবার কিস্তির চাপ তো আছেই।তাই বাধ্য হয়ে মাছ ধরতে হচ্ছে।যদি মাছ না ধরি তাহলে না খেয়ে থাকতে হবে।ঐ এলাকার জেলেদের কাছে ইলিশ মাছ ধরার বিষয়ে প্রশ্ন করলে জেলেরা বলেন, আমরা যদি মাছ না ধরি আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।

জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাজবাড়ীর পাংশা থেকে গোয়ালন্দ পর্যন্ত পদ্মা নদীর ৫৭ কিলোমিটার এলাকা মা ইলিশের বিচরণ ক্ষেত্র।
এ বিষয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন,আমাদের জনবল সংকটের কারণে সবজায়গায় নজরদারি করা সম্ভব হচ্ছে না।তারপর ও আমরা সাধ্যমত মা ইলিশ রক্ষার চেষ্টা করে যাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, ১৩ অক্টোবর থেকে ২৪অক্টোবর পর্যন্ত এসব এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫৬ জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। ৫৭হাজার ৪০০ টাকা জরিমানা আদায়ের পাশাপাশি জব্দ করা হয়েছে ৬ লাখ ১৬ হাজার মিটার জাল ৬৮৭ কেজি ইলিশ। জব্দ করা ইলিশ স্থানীয় বিভিন্ন এতিম খানায় দান করে দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |