নাজমুল হোসেন, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী): রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় বিভিন্ন এলাকায় কৃষিকাজে ব্যস্ত সময়ের মধ্যে দিয়ে পার করেছেন কৃষকেরা মাঠে। বছরের সব সময়ই কৃষকরা ব্যস্ত থাকলেও এ সময়ে মুড়িকাটা পেঁয়াজ ও রসুনের আবাদ নিয়ে একটু বেশি ব্যস্ত রয়েছেন তাঁরা। শীতের বাজারে পেঁয়াজের চাহিদা পূরণ করতে দিন রাত খেতে কাজ করছেন গোয়ালন্দের চাষিরা। তবে তাঁরা বলছেন, এ বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরিসহ সব উপকরণের দাম বেড়েছে। যার কারণে পেঁয়াজ ও রসুন আবাদে খরচ বেড়ে যাবে আগের বছরের চেয়ে কয়েক গুণ। তবে তাঁরা আরো বলছেন, আবাদে বাড়তি খরচ হলেও উচ্চফলন হলে এবং ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি না হলে তাঁরা ভালো দাম পাবেন। উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের কৃষক আইজল গায়ান বলেন,গত বছরের চেয়ে চলতি বছরে বাজারের সার, কীটনাশক, গুটি পেঁয়াজের (বীজ) দাম বেড়ে যাওয়ায় এবার উৎপাদন খরচ তুলনামূলক বেড়েছে। তাই আমাদের দাবি, সরকার বিদেশি পেঁয়াজ আমদানি কমিয়ে দিক। এতে চাষিদের পুঁজি উঠবে। তিনি আরও বলেন, আবহাওয়া ভালো থাকলে পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো হবে।
দেবগ্রাম ইউনিয়নের কৃষক মো. শুকুর প্রামাণিক বলেন, ‘আমার তিন বিঘা জমিতে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার পেঁয়াজ কিনতে হয়েছে। এরপর সার, কীটনাশক, শ্রমিক খরচ দিয়ে সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ২ লাখ টাকার উপরে খরচ হয়েছে।উপজেলার কাউলজানি এলাকার কৃষক হামেদ মোল্লা বলেন,গত বছরও বিঘা প্রতি এই পেঁয়াজ উৎপাদনের ব্যয় হতো ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু এবারে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ থেকে ৬৫ হাজার টাকায়। বাজারে যদি ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ না ঢোকে তাহলে আমরা বিঘা প্রতি পেঁয়াজ ঘরে তোলা পর্যন্ত আরও ১ লাখ টাকার ওপরে খরচ হবে। ফলন ভালো হলে তিন বিঘা জমিতে ২৫০ মণ পেঁয়াজ হবে। লক্ষাধিক টাকায় বিক্রি করতে পারব। ছালাম শেখ নামের আরেক পেঁয়াজ চাষি বলেন, এবার তিনি ৭ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ ও ২ বিঘা জমিতে রসুন চাষ করবেন। তবে লোকসানের বিষয়টি মাথায় নিয়েই তাঁরা চাষ করছেন।
গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খোকন উজ্জামান বলেন, বর্তমানে চাষিরা মুড়িকাটা পেঁয়াজের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। চলতি মৌসুমে উপজেলার ২ হাজার ২২০ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ ও ১ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে রসুন আবাদ হবে বলে আমরা আশা করছি। মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ খরচ তুলনামূলক একটু বেশি হলেও অল্প সময়ে এই ফসল ঘরে তোলা যায়। বছরের এই সময়ে (শীত মৌসুমে) সারা দেশেই পেঁয়াজের ঘাটতি থাকায় মুড়িকাটার চাহিদা থাকে বেশ। এ সময় ভালো দামও পায় চাষিরা। আর এই জন্যই চাষিরা বর্ষা মৌসুমের পরপরই চাষাবাদ শুরু করে মুড়িকাটা পেঁয়াজের।’
চলতি মৌসুমে উপজেলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ২২০ হেক্টর জমিতে ‘মুড়িকাটা’ পেঁয়াজ ও ১ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে রসুন আবাদ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি অফিস।