বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৭ পূর্বাহ্ন
জাহাঙ্গীর হোসেন, কালীগঞ্জ : বাঙালির সংস্কৃতির এক অবিচ্ছিন্ন অংশ মৃৎশিল্প। চলতি শতকের সত্তরের দশক পর্যন্ত কুমার আর পালদের গণ্ডির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল মৃৎশিল্প। আর মৃৎশিল্পের ব্যবহার বলতেও বাসনকোসন, হাঁড়ি আর কলসিকেই বোঝাত। বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বাহক হিসেবে বিশ্ববাসী দেখছে এ নিদর্শন। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে কুমার আর পালদের গণ্ডি ডিঙিয়ে সর্বজনীন রূপ পেয়েছে মৃৎশিল্প। নতুন নতুন উদ্যোক্তারা মৃৎশিল্পে জড়িয়ে ব্যবসা শুরু করছেন। নানা নকশা আর কারুকাজে প্রসারিত হয়েছে মাটির পাত্রের ব্যবহার। মাটির তৈরি জিনিসপত্র এখন প্রধান তৈজসপত্রে ও সৌন্দর্যবর্ধনের উপকরণে পরিণত হয়েছে। এ শিল্পে এখন বেড়েছে বিনিয়োগ। এখন ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার চিত্রা নদীর তীরবর্তী দোঁ-আশা মাটির সহজলভ্যতা এবং পরিবহনের সুবিধার্থে এ শিল্পগুলো গড়ে ওঠেছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এই পেশায় নিয়োজিত পাল সম্প্রদায়ের ৪০ থেকে ৫০টি পরিবার তাদের পূর্বপুরুষের এই পেশাকে আকড়ে ধরে বাচার চেষ্টা করছে।
শিবনগরে দিপালি পাল, নিশ্চন্তপুরের জীবন পাল, অনুপম পুরের সৌরভরা এখনো কোনো মতে এই পেশা চালিয়ে যাচ্ছে।গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য আড়ং এবং মেলায় এই ধরণের সামগ্রীর চাহিদা ছিল ব্যাপক। মেলা থেকে মাটির খেলনা কিনেনি এমন মানুষ পাওয়াই কষ্ট। ৫ টাকা থেকে শুরু করে ১০০ টাকা মূল্যের জিনিষ পত্র পাওয়া যেত। হারিয়ে যাচ্ছে কালীগঞ্জের এই মৃৎশিল্পের ঐতিহ্যময় কারুকার্জ। আধুনিক প্রযুক্তিতে নিম্ন মানের তৈরি প্লাস্টিক, অ্যালুমিনিয়াম, মেলামাইন ও স্টিলের জিনিসপত্র তৈরির আকার বেড়ে যাওয়াই এই শিল্প আজ প্রায় ধংসের পথে।এবিষয়ে কথা হয় মৃৎ শিল্পের কাজ করা দিপালী পালের সাথে। তিনি কালীগঞ্জ উপজেলার চিত্রা নদীর কুলবর্তী গ্রাম শিবনগরের বাসিন্দা।দিপালী পাল বলেন, মায়ের পাশে বসে শখের বসে মাটি দিয়ে বানানো পাখি, ফল, খেলনা হাড়ি পাতিল দিয়েই আমার হাতে খড়ি হয়। বাবার এ ব্যাবসা মন্দ ছিল না। মা-বাবাকে দেখেছি এক সাথেই মাটির তৈরি তৈজসপত্র বানাতেন।তিনি বলেন, কালীগঞ্জের শিবনগর, নিশ্চন্তপুর, অনুপমপুর এই এলাকা গুলোতে পাল বংশের লোকের বসবাস ছিল বেশি।
পারিবারিক ভাবে আমার বিবাহ হয় সুদীপ পালের সাথে। শ্বশুরালয়ে এসেও আমি একই কাজ করছি। আমরা এখন ফুলের টব, ফুলদানি, মাটির কলস, হাড়ি-পাতিলসহ নানান রকমের খেলনা বানাচ্ছি।মৃৎশিল্পের তৈজসপত্র বিক্রেতা হাসিবুল হাসান পিকলু জানান, মৃৎশিল্পের তৈরি ব্যাবহার্য পন্যের এখন আর তেমন চাহিদা বাজারে নেই। সৈৗখিনতার বসে কেউ যদি কিছু ক্রয় করলে সেটাই তার বিক্রি। তার সংগ্রহে দেখা যায়, দোকানে ৫০টিরও বেশি মাটির পন্য দৃশ্যমান। এগুলো সংগ্রহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে।মৃৎশিল্পে কাজ করা ব্যক্তিরা জানান, তাদের সন্তানাদি কেউ আর এই পেশায় কাজ করতে আগ্রহী নন। বর্তমানে এই পেশায় কাজ করা ব্যক্তিরাই শেষ প্রজন্ম। লোকজ এই মৃৎশিল্পকে টিকিয়ে রখার জন্য সরকারি সহায়তাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহযোগীতায় বাচিয়ে রাখা সম্ভব।উল্লেখ্য, লোকজ এই মৃৎশিল্পকে টিকিয়ে রখতে হলে পূর্বপুরুষের জ্ঞানের সাথে নতুন জ্ঞানের সন্নিবেশ ঘটাতে হবে। বাজারজাত করণের নতুন আইডিয়াতে নজর দিতে হবে।