বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৮ পূর্বাহ্ন
মোঃ পারভেজ মিয়া, সালথা (ফরিদপুর) : ঋতু বৈচিত্রে এখন রাতের শেষে কুয়াশা জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। আবহমান গ্রাম বাংলায় খেজুর রস ছাড়া যেন শীতের আমেজই পাওয়া যায় না। শীতের সকালে মিষ্টি রোদে বসে বসে সুস্বাদু খেজুর গাছের রস খাওয়ার মজাই আলাদা। তাই শীতের শুরু থেকেই গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য খেজুর রস সংগ্রহের জন্য নওগাঁর আত্রাই উপজেলার প্রতিটি গ্রামে গ্রামে এখন গাছিরা খেজুর গাছ কাটার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কে কত আগে খেজুর রস সংগ্রহ করতে পারে সেই প্রতিযোগিতাই চলছে সালথার গাছিদের মাঝে।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গাছিরা খেজুর গাছ বিশেষভাবে কাটার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ কেউ ইতোমধ্যেই রস সংগ্রহ শুরু করেছেন। এছাড়া আগের মতো খেজুর গাছও নেই। প্রতিদিন ইটভাটায় জ্বালানির কাজে নিধন হচ্ছে এলাকার শতশত খেজুর গাছ। ফলে এ অঞ্চলের গ্রামীণ অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তারপরও গাছিরা তাদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহ করা যদুনন্দী ইউনিয়নের গাছি হারুন অর রশিদ বলেন, “শীতকাল শুরু হলেই গাছ পরিষ্কার করে রস বের করার কাজ শুরু হয়। প্রতিদিন বিকেলে মাটির হাঁড়ি লাগাই, আর সকালে সেগুলো থেকে রস সংগ্রহ করি”।
খেজুরগাছ পরিচর্যার গুরুত্ব তুলে ধরে গাছি রুকমান মোল্যা বলেন, “রসের মান ঠিক রাখতে হলে গাছ ভালোভাবে পরিচর্যা করতে হয়। এটি আমাদের পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য।”
গাছিরা বলেন,শীত মৌসুমে রস-গুড় উৎপাদন করে কয়েকমাস স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেন তারা। এ থেকে তারা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হন। তবে গাছ সংকটের কারণে চলতি বছরও চাহিদা অনুযায়ী রস পাওয়া যাবে না বলে আশঙ্কা করছেন অনেক গাছি।
স্থানীয়রা বলছেন, প্রতিবছর শীতকালে গ্রামীণ জনপদে রস উৎসব হয়। পরিবার-পরিজন নিয়ে রস পান করেন, আর রস দিয়ে পিঠা-পুলি তৈরি করে জামাই আপ্যায়ন করেন।
সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান বালী বলেন, ‘সালথায় এবার অন্তত তিন হাজার খেজুরের গাছ থেকে রস সংগ্রহের কাজ চলছে। আমরা গাছিদের একত্রিত করার ব্যবস্থা করছি। আমরা তাদের মানসম্মত গুড় তৈরি করে বাজারজাত করার পরামর্শ দিব। পাশাপাশি কেউ যাতে রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করে গুড় তৈরি না করে সে বিষয় সকলকে সতর্ক করবো।