বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:৩১ অপরাহ্ন
মনসুর আলম মুন্না,কক্সবাজার: কক্সবাজার জেলার চকরিয়া থানার ওসি মঞ্জুর কাদের ভুঁইয়া। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ। এক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে মামলার ভয় দেখিয়ে এক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বড় মামলা এবং ছোট মামলার অজুহাত দেখিয়ে প্রতিদিন ওসির গোপন কক্ষে ঢুকিয়ে দালাল অর্থাৎ বিশ্বস্ত সোর্স দিয়ে অবৈধ ঘুসের লেনদেন করেন ওসি মঞ্জুর কাদের ভুঁইয়া। তবে ওসি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এমন ঘটনা কখনো হয়নি। আমাকে নিয়ে একজন ষড়যন্ত্র করছেন।
ওসি মঞ্জুর কাদের ভুঁইয়া নিজেকে আপাদমস্তক বিএনপি নেতার ভাই পরিচয় দিলেও সখ্যতা গড়ে তুলেন আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা-কর্মীদের সাথে। গোপনে রয়েছে তাদের সাথে সুসম্পর্ক। নিজের জন্য ঘুষের টাকা এবং কন্টাক্ট ক্লিয়ার করতে নিয়োগ দেন স্থানীয় এক স্থানীয় দালাল । যা প্রতিনিয়ত থানার ওসির সামনে বসে থেকে পরামর্শ দেন আসামি পক্ষের লোকদের। একটি মামলা থেকে ৩০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ওসির নিজস্ব গ্রাপিটি এবং ধাম্বিকতা দেখে চকরিয়া থানায় সেবা প্রত্যাশীরা ভয়ে কথা বলতে যেতেও অনীহা প্রকাশ করেন।
জানা যায় যে, চকরিয়ার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ থানায় ওসি হিসাবো আসতে পারাটাই আলাদিনের চেরাগ পাওয়ার শামিল। কারণ এই বৃহত্তর চকরিয়াতে সবচেয়ে বেশি অপরাধ এবং মামলা বাণিজ্য হয়ে থাকে। যেখানে প্রতিদিন শতাধিকেরও কাছাকাছি এবং তার অধিক অভিযোগ এবং এজাহার জমা পড়ে। আর এসবকে কেন্দ্র করে ওসি মঞ্জুর কাদের ভুঁইয়া নিজস্ব বাণিজ্য কেন্দ্র গড়ে তুলেছেন ।
প্রচার আছে ওসি ওসি কাদের ভুঁইয়া। তিনি একাধারে ক্ষমতার অপব্যবহারের পাশাপাশি নিরহ মানুষকেও হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে। আওয়ামী লীগের আগে সাধারণত তিনি পুলিশ পরিদর্শক থেকে ওসি হয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়ার স্বপ্নে এমন অবৈধ পন্থা বেঁচে নিচ্ছে ওসি মঞ্জুর কাদের ভুঁইয়া। মামলা না দেয়ার কথা বলে টাকা নেয়ার পরেও মামলা দিয়ে চালান দেন এই থানার অসাধু কর্মকর্তা। তিনি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে করা একটি হত্যা মামলা থেকেও আওয়ামী লীগের লোকজনের সাথে আঁতাত করে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার নথিপত্র হাতে এসেছে প্রতিবেদকের কাছে।
অনেকেই বলেছেন ওসি মঞ্জুর কাদের ভুঁইয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এপিএস সালাউদ্দিনের প্রভাব বিস্তার করে যতসব অবৈধ কর্মকান্ড আছে সবই করেন। তবে এবিষয়টি ওসি অস্বীকার করেছেন। সম্পৃতি আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয় পাওয়ার পরে এক লোককে রাতে ধরে এনে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসিয়ে ছবি তুলে মুটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর ছোট একটি মামলা দিয়েও চালান দেয়ার বক্তব্য পাওয়া যায় ভুক্তভোগীর কাছ থেকে । পাশাপাশি তার সাথে থাকা অধিকাংশ লোকদের কাছ থেকে ২ লাখ ৩ লাখ ৫ লাখ এইভাবে টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরেও কয়েকটি মামলা দেয় ওসি। পরে জামিনে বের হয়ে অধিকাংশ ভুক্তভোগী বক্তব্য দেন এই ওসির বিরুদ্ধে।
এদিকে এক ভুক্তভোগীর বক্তব্য দেয়া অডিও রেকর্ড সম্পুর্ন বক্তব্যে বলা যায় যে, আমাকে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসিয়ে মামলা দেয়ার কথা বলে ২ লাখ টাকা নিয়েছে বর্তমান চকরিয়া থানার ওসি মঞ্জুর কাদের ভুঁইয়া। আমার পাশাপাশি আরোও অনেকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। যাদের মধ্যে এসআই ইমরুল প্রথমে ২০ হাজার,পরে ওসি মঞ্জুর কাদের ভুঁইয়াকে প্রথম ধাপে ৫০ হাজার টাকা দিয়েও রেহাই পাইনি মামলা থেকে । মক্কী ইকবাল নামের এক পাঁচটি মামলার ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে আড়াই লাখ টাকা নেয়ার পরেও একটি গায়েবি হত্যা মামলা দিয়ে চালান দেয়। বর্তমানে মক্কী ইকবাল জেল হাজতে রয়েছে। এছাড়া দুলহাজারা ৭ নং ইউপি সদস্য ফরিদ মেম্বারের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা নিয়ে ৫৪ ধারা মামলা দিয়ে চালান দেয়। এর বাহিরেও নামে বেনামে মামলার অভিযোগ এজাহার বাণিজ্যেও টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে অহরহ।
গত পাঁচ আগস্ট স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ পতনের পরে ওসি মনজুর কাদের ভুঁইয়া যোগদানের পর থেকেই কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে ধারণা করেছেন স্থানীয়রা। ক্ষমতার অপব্যবহার করে এমন কান্ডে পুরো উপজেলা জুড়েই সমালোচনার ঝড় তুলেছেন এই চকরিয়া থানার ওসি মন্জুর কাদের ভুঁইয়া। তিনি একাধারে থানার অধিকাংশ সাব-ইন্সপেক্টরদেরও জিম্মি করে মামলা বাণিজ্য করেন। এসব এসআইদের অধিকাংশ ঘুষ লেনদেনের টাকার ভাগও দিতে ওসি মঞ্জুর কাদের ভুঁইয়াকে। পুরু চকরিয়া থানার অধিকাংশ কাজ নিজের হাতে জিম্মি করে নিয়েছে ওসি।
এসবকে ঘিরে তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে আসছে আরোও একেকটি লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা। ২০১৮ সালের একটি ঘটনার ২০২৪ সালে এসে একটি মামলা রুজু করে আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। তবে তবে ওসি নিজেই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার ভয় দেখিয়ে স্থানীয় দালাল তারেককে দিয়ে রফাদফা করান । এই মামলার অধিকাংশ আসামী থানা এবং ওসির নাকের ডগায় ঘুরেন বলে জানা গেছে।
এই মামলায় কোটি টাকার কাছাকাছি লেনদেন হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে অনেক বড় বড় মামলার আসমীরা গ্রেফতারী পরোয়ানাভুক্ত হওয়ার পরেও অদৃশ্য কোন কারণে গ্রেফতার করছেনা বলেও দাবী তুলেন চকরিয়ার সচেতন মহল।
অপরাধীদের সাথে আঁতাত করে চকরিয়া থানার ওসি নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মতো গভীর রাতে টাকার বস্তা নিয়ে সাপ্লাই করার কথাও শুনা যায়। তবে বিষয়টি একেবারেই সিক্রেট করে চলেন এই ওসি মন্জুর কাদের ভুঁইয়া ।
এবিষয়ে চকরিয়া থানার ওসি মঞ্জুর কাদের ভুঁইয়ার কাছে কল করে জিজ্ঞেস করা হলে তিনিই বক্তব্য না দিয়ে প্রতিবেদককে উল্টো প্রশ্ন করে এড়িয়ে যান। পাশাপাশি এই ওসির বিরুদ্ধে নিউজ করতে কয় লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছি বলে সাংবাদিককে প্রশ্ন করতে করতে মোবাইল কেটে দেন। আর চকরিয়া থানার এই ওসি মঞ্জুর কাদের ভুঁইয়া’র অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে নিউজ করতে চাইলে প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে বিগত স্বৈরাচারের দোসরদের সাজানো ষড়যন্ত্রমূলক মামলার গ্রেফতারের ছবি ওয়াটস্যাফে পাঠিয়ে ট্রেট দিল। ওসি বলেন, নিউজ করলে চাঁদাবাজি মামলা দেবো।
কক্সবাজার পুলিশ সুপার রহমত উল্লাহ’র কাছে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কোন সাঁড়া পাওয়া যায়নি। এবং ওয়াটস্যাফে খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। চট্টগ্রাম বিভাগীয় ডিআইজি রেঞ্জ আহসান হাবিব পলাশকে কল করে বিষয়ে অবগত করলে তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান।