বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:২০ অপরাহ্ন

কৃষিতে আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিলুপ্ত গরুর লাঙল

কৃষিতে আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিলুপ্ত গরুর লাঙল

হারুনার রশীদ বুলবুল, কেশবপুর (যশোর): কেশবপুরে বিলুপ্তির পথে গরু দিয়ে ফসলি জমিতে হালচাষ। কালের বিবর্তনে আর আধুনিকতার ছোঁয়ার ফলে দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে এ উপজেলার কৃষকদের গরু দিয়ে জমিতে হালচাষ করা তোর মায় চইছে হাল, তোর বাবায় চইছে হাল, তোর লাইগা রাইখা গেছে লাঙল আর জোয়াল’- গ্রাম্য প্রবাদ থাকলেও কেশবপুর উপজেলায় তেমন একটা চোখে পড়ে না গরু দিয়ে হাল চাষের দৃশ্য।
একটা সময় এ অঞ্চলের ফসলি মাঠে মাঠে গরু দিয়ে হাল চাষের দৃশ্যে গ্রামবাংলার চিরচেনা রূপ ফুটে উঠত কষকদের মাঝে। সময়ের পরিক্রমায় আর আধুনিক যন্ত্রের বদৌলতে হারিয়ে যাচ্ছে প্রাচীনকাল থেকে জমি আবাদে চলে আসা গ্রামবাংলার ঐতিহ্য গরু-লাঙল দিয়ে হাল চাষের চিত্র। গরু-লাঙল দিয়ে হালচাষ বিষয়ে স্থানীয় উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, ফসল ও জমির মাটির জন্য গরু দিয়ে হালচাষ উত্তম। এ পদ্ধতিতে হাল চাষের ফলে লাঙলের ফলা মাটিতে গেঁথে গিয়ে মাটিকে ওলট-পালট করে দেয়। এতে মাটির নিচের স্তরের পুষ্টিগুণ ওপরে উঠে আসে এবং মাটির ওপরের আগাছা ও ফসলের অবশিষ্ট নিচে চাপা পড়ে জৈব সারে পরিণত হয়।
এ ছাড়া মাটিতে বায়ু চলাচলের পরিমাণ বাড়িয়ে এবং মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখতেও সাহায্য করে। তবে কৃষিকে যুগোপযোগী এবং লাভজনক করতে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার অনস্বীকার্য।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় কয়েকজন প্রবীণ কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক সময় গরু দিয়ে হাল চাষ ছাড়া ফসল আবাদের আর কোনো উপায় ছিল না। তাই প্রতিটি গৃহস্থ পরিবারে ছিল হালচাষ উপযোগী গরু, লাঙল, জোয়াল ও মই। এগুলো ছাড়া কোনো গৃহস্থ পরিবার কল্পনাই করা যেত না। অনেকেই অন্যের খেতে গরু দিয়ে হালচাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কৃষিতে আমুল পরিবর্তন ও আধুনিক চাষ যন্ত্রের ব্যবহার প্রান্তিক কৃষকদের দোরগোড়ায় পৌঁছার কারণে দিন দিন গৃহস্থ পরিবারেও এসেছে পরিবর্তন। এখন আর গৃহস্থ পরিবাবে সেই চিত্র নেই। যার ফলে এ জনপদ থেকে বিলুপ্ত হয়ে পড়ছে আবহমান বাংলার চিরচেনা ঐতিহ্য গরু-লাঙলের হালচাষ।
ভবানীপুর গ্রামের কৃষক মোসলেম উদ্দিন গরু দিয়ে জমিতে মই দেন ধান রোপণের জন্য। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এক সময় এ জনপদের ফসলি মাঠের দিকে নজর পড়তে দেখা যেত গরু-লাঙল দিয়ে হাল চাষের দৃশ্য। এখন হাল চাষের জন্য মেশিন বেরিয়েছে। যাতে অল্প সময়ে বেশি জমি চাষ করা যায়। ফলে দিন দিন গ্রামীণ ঐতিহ্য থেকে হারিয়ে যাচ্ছে হালচাষের এ পদ্ধতি। কৃষিতে সমৃদ্ধি আসায় জমি চাষে এখন কৃষকরা আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করছে। ফলে গরু দিয়ে হাল চাষের গ্রামীণ ঐতিহ্য বিলুপ্ত হয়ে পড়ছে।
এব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার দায়িত্বপ্রাপ্ত মাহমুদ আক্তার  বলেন একটা সময় গরু-লাঙল ছাড়া জমি চাষের কথা চিন্তাই করা যেত না। ফসল ও জমির মাটির জন্য গরু দিয়ে হালচাষ উত্তম। তবে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত, কৃষিকে যুগোপযোগী এবং লাভজনক করতে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের দিকে আমাদের যেতে হবে। কৃষিকে বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরিত করতে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2025 Protidiner Kagoj |