রবিবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২২ অপরাহ্ন

পার্লারের আড়ালে শতাধিক পুরুষকে হিজড়া-নারী বানিয়েছেন তারা!

পার্লারের আড়ালে শতাধিক পুরুষকে হিজড়া-নারী বানিয়েছেন তারা!

বিউটি পার্লারের আড়ালে পুরুষদের অস্ত্রোপচার করে আসছিল একটি চক্র। দীর্ঘ পাঁচ বছরে শতাধিক রূপান্তরকামী পুরুষের অস্ত্রোপচার করেছে তারা। প্রতিষ্ঠানে পুরুষদের লিঙ্গ রূপান্তর, ব্রেস্ট ইমপ্লান্ট ও উচ্চমাত্রার হরমোন ইনজেকশন প্রয়োগ করে নারী-পুরুষের কণ্ঠসহ অন্যান্য অবয়ব বদলে দেওয়ার মতো কর্মকাণ্ড চলত।

চক্রের মূল হোতা হাদিউজ্জামান। একসময় খুলনার এক চিকিৎসকের সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন। রাজধানীর মালিবাগে মাহি হাসান টাওয়ারের চতুর্থ তলায় স্ত্রীর নামে ‘লেজার বিউটি পারলার’ খুলে শুরু করেন লিঙ্গ রূপান্তরের কারবার। নিজেই সার্জন বনে যান। গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, সমাজের একটি অংশ সাধারণত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারির বাইরে থাকে। ফলে অপরাধী চক্র এরই রূপান্তরকামীদের ব্যবহার করে মাদক কারবারসহ নানা ধরনের অপকর্ম করায়।

শুক্রবার রাতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে চক্রের মূল হোতা হাদিউজ্জামান রহমান, তাঁর স্ত্রী সোনিয়া আক্তারসহ দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। । গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন প্রধান সার্জন পরিচয় দেওয়া হাদিউজ্জামান, তাঁর স্ত্রী ও পারলারের মালিক সোনিয়া আক্তার এবং এই দম্পতির সহযোগী নুর ইসলাম ও জনি আহম্মদ। এ সময় পার্লারের বিশেষ একটি কক্ষে অভিযান চালিয়ে অপারেশনের বিভিন্ন সরঞ্জাম এবং হরমোন পরিবর্তনের ওষুধ উদ্ধার করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার এইচ এম আজিমুল হক, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিশেষ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য দেখে রূপান্তরকামী পুরুষদের টার্গেট করে ঘনিষ্ঠতা বাড়াত হিজড়াদের ‘গুরুমা’কেন্দ্রিক চক্রের সদস্যরা। এরপর ওই পুরুষদের নিজেদের ডেরায় নিয়ে আদর-আপ্যায়নের মাধ্যমে আস্থা অর্জন করে দলে রেখে দেওয়া হতো। এরপর তাদের শরীরে বিশেষ হরমন প্রবেশ করানো শুরু হতো। একপর্যায়ে পুরুষ থেকে নারীতে রূপান্তরের প্রলোভন দেখানো হতো। বিভিন্ন কৌশলে এই রূপান্তরকামী পুরুষদের হাদিউজ্জামানের পার্লারে এনে অপারেশন করে কেটে ফেলা হতো পুরুষাঙ্গ। স্তন বৃদ্ধির জন্য শরীরে স্ত্রী হরমোন ইনজেকশন দেওয়া হতো। রূপান্তরের কাজে ব্যবহৃত সব ধরনের ওষুধ বিদেশ থেকে আনা হতো।

হাদিউজ্জামানের পরিচয় সম্পর্কে পুলিশ কর্মকর্তা আজিমুল হক বলেন, একসময় খুলনায় এক সার্জনের সহকারী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে কৌশল রপ্ত করে ফেলেন হাদিউজ্জামান। পরে ঢাকায় এসে নিজেই বনে যান সার্জন। খুলে বসেন লেজার বিউটি পারলার। সেখানে রূপান্তরকারী পুরুষদের অস্ত্রোপচার ও লিঙ্গ পরিবর্তনের কাজ করা হতো। প্রতিটি সার্জারির আগে হাদিউজ্জামান ১ লাখ করে টাকা নিতেন। চিকিৎসক হিসেবে তাঁর কোনো সনদ নেই। নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে শতাধিক পুরুষের অস্ত্রোপচার ও হরমোন চিকিৎসা করেছেন।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |