শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:২৭ পূর্বাহ্ন

আপডেট
রাজবাড়ির সাবেক সিভিল সার্জন ও তার স্ত্রীর নামে দুদকে অভিযোগ

রাজবাড়ির সাবেক সিভিল সার্জন ও তার স্ত্রীর নামে দুদকে অভিযোগ

রাজবাড়ির সাবেক সিভিল সার্জন ও তার স্ত্রীর নামে দুদকে অভিযোগ

রেজাউল করিম রেজা,ময়মনসিংহ : সরকারি নজরুল কলেজ ত্রিশালের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জয়নব রেখা ও তার স্বামী রাজবাড়ির সাবেক সিভিল সার্জনসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। দুদকের ঢাকার সেগুনবাগিচার প্রধান কার্যালয়ে (২১ মে) দুদকের চেয়ারম্যান,শিক্ষা সচিব ও মাউশি‘র ডিজির কাছে অভিযোগ করেন নাগরিক সাংবাদিক মোঃ খায়রুল আলম রফিক। দুইপাতার লিখিত অভিযোগের সঙ্গে ১৪ পাতার প্রমাণপত্র চেয়ারম্যানের কাছে দাখিল করেছেন তিনি। উক্ত অভিযোগের আলোকে মাউশি‘র কর্মকর্তারা তদন্ত শুরু করেছেন।

সরকারী নজরুল কলেজ ত্রিশালের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জয়নব রেখা ও তার স্বামী রাজবাড়ির সাবেক সিভিল সার্জন ডাঃ মাহাবুবুল হক অবৈধ পথে দুর্নীতি করে প্রায় ২৫ কোটি টাকার সম্পদ করেছেন। ময়মনসিংহ নগরীর দিগারকান্দা এলাকায় ৩০ শতাংশ জমি ক্রয় করে ৬ তলা আলীশান একটি বাড়ি নির্মান করেছেন। যা আধুনিক বিলাসবহুল বাড়ি হিসাবে এলাকায় পরিচিতি রয়েছে। দুদকে অভিযোগ দেওয়ার পর জয়নব রেখা তার নিজ কার্যালয়ে স্থানীয় দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির এক নেতাকে নিয়ে গোপনে বৈঠক করেন। যা এখন ত্রিশালে আলোচনায়। এরই মধ্যে তাদের গোপন আলোচনার একটি ভিডিও প্রতিদিনের কাগজের হাতে এসেছে।

এছাড়াও ত্রিশালসহ বিভিন্ন জায়গায় নামে-বেনামে প্রায় আরও ২০ কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন। অভিযোগ আছে, ময়মনসিংহের ত্রিশালের ঐতিহ্যবাহী সরকারি নজরুল কলেজের মার্কেট বরাদ্দের নামে লাখ লাখ টাকা হরিলুট ও কলেজের বেনসন সিগারেট ও পান সুপারির বদলে বিল হয় ডিম রুটির। এ ঘটনা জানাজানির পর থেকে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। কলেজের বিভিন্ন অনিয়ম-দূর্নীতির মূলে রয়েছেন স্টাফ কাউন্সিলের সেক্রেটারি ও মার্কেট কমিটির আহবায়ক প্রভাষক আজিজুর রহমান এবং একাডেমিক কমিটির আহবায়ক প্রভাষক দিলীপ কুমার সরকার। তাদের নামসহ ৬ জনের নামে অভিযোগ করা হয়েছে।

 

কলেজের প্রভাষক আজিজুর রহমান ও প্রভাষক দিলীপ কুমারসহ তাদের পছন্দের কয়েকজন শিক্ষকের স্বাক্ষর ছাড়া কোন বিল/ভাউচার পাশ হয়না। ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কয়েকজন কর্মচারি অভিযোগ করেন সরকারি কোষাগারের অর্থ ব্যয় করে স্টাফ কাউন্সিল এর সেক্রেটারি প্রভাষক আজিজুর রহমান, প্রভাষক (ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি) ও একাডেমিক কমিটির আহবায়ক প্রভাষক দিলীপ কুমার সরকার, প্রভাষক (পদার্থবিজ্ঞান) বেনসন সিগারেট ও পান সুপারি খান কিন্তু বিল উত্তোলন করেন ডিম ও রুটির ভাউচারে আবার সেই ভাউচার তাদের গ্রুপের কয়েকজনের স্বাক্ষর ও অধ্যক্ষের স্বাক্ষরেই পাশ হয়।

অভিযোগ রয়েছে অনেক সময় চাপ সৃষ্টি করে অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী শফিকুল ইসলাম দুলাল এর কাছ থেকে ভাউচার ছাড়াই অগ্রিম টাকা নিয়ে নেন। পরে তা ভাউচারের মাধ্যমে পাশ করিয়ে নেন। প্রভাষক আজিজুর রহমান প্রভাব বিস্তার করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সরকারি আইন অমান্য করে বার বার কলেজের অভ্যন্তরীণ প্রায় সকল কমিটিতেই থাকেন এবং সস্মানি ভাতাসহ কলেজের বিভিন্ন খাত থেকে নামে বেনামে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

কলেজে ৩ জন এমপিওভুক্ত অফিস সহকারী থাকলেও তাদের কেউ কম্পিউটার কম্পোজসহ অনলাইনে ডাটা এন্ট্রির কাজ করতে পারেন না। তাদের দায়িত্ব পালনে অক্ষমতার কারণে বিগত অধ্যক্ষ মোঃ ফয়জুর রহমান এর সময় কম্পিউটরে পারদর্শী একজন কম্পিউটার অপারেটর মাস্টাররোলে নিয়োগ দেন। ২০১৪ সাল থেকে কম্পিউটার সংক্রান্ত সকল কাজ কলেজের ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট মোঃ হারুন অর রশিদকে দিয়ে করানো হচ্ছে। স্টাফ কাউন্সিল এর সেক্রেটারি প্রভাষক আজিজুর রহমান ও একাডেমিক কাউন্সিল এর আহবায়ক প্রভাষক দিলীপ কুমার সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে রসায়নের প্রভাষক মোঃ রকিবুল হাসান ও পদার্থ বিজ্ঞানের প্রভাষক এ.কে.এম. ইয়াহিয়া দীর্ঘদিন ধরে এমন কর্মকান্ড করে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে খায়রুল আলম রফিক জানান, রাজবাড়ির সাবেক সিভিল সার্জন ডাঃ মাহাবুবুর রহমান ও তার স্ত্রী সরকারী নজরুল কলেজ ত্রিশালের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জয়নব রেখা অবৈধ পথে কোটি কোটি টাকা অর্জন করেছেন। আমি দুদক ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দায়ের করেছ্।ি এরপর থেকেই অভিযোগ তুলে নিতে আমাকে বিভিন্নভাবে প্রাননাশের হুমকি দিচ্ছে। আমি এবিষয়ে শিক্ষা সচিবের সাথে সাক্ষাৎ করে আরেকটি অভিযোগ দিয়েছি। এখানে সঠিক তদন্ত না হলে প্রয়োজনে আমি উচ্চ আদালতে যাবো।

কলেজটি জাতীয়করণের পরিদর্শনের পত্রে ব্যাংকে জমা টাকা উত্তোলন ও উন্নয়নমূলক কাজের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় । সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্বেও যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কলেজ কর্তৃপক্ষ অধ্যক্ষের কক্ষ সংলগ্ন টয়লেট,একটি কক্ষ ও ওযুখানা নির্মাণ করেছেন এবং কলেজের অভ্যন্তরীণ অডিট কার্য সম্পাদনের ক্ষেত্রে স্টাফ কাউন্সিলের সেক্রেটারি প্রভাষক আজিজুর রহমান ও একাডেমিক কমিটির আহবায়ক প্রভাষক দিলীপ কুমার সরকার তাদের সিন্ডিকেটকে অডিট কমিটিতে রাখেন এবং অডিট কার্য সম্পন্ন করেন। কলেজের অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী শফিকুল ইসলাম (দুলাল) বিগত কয়েক বছর আগে বাসা থেকে কলেজে আসার পথে সরকারি কোষাগারের ১,০০,০০০/- (এক লক্ষ) টাকা হারানো হয়েছে মর্মে তৎকালীন অধ্যক্ষ মজিবুর রহমানকে মৌখিকভাবে জানান। অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত), জয়নব রেখা জানান, কোচিং বাণিজ্য বন্ধ থাকবে কিন্তু প্রাইভেট পড়াতে পারবে।

তিনি আরও বলেন কলেজের মার্কেটটি একটি বিষফোড়া এটা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। মার্কেট কমিটির আহবায়ক প্রভাষক আজিজুর রহমান তিনি দায়িত্বে আছেন। কলেজ সরকারিকরণের পরিদর্শনের পত্রে উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড ও ব্যাংকে থাকা অর্থ উত্তোলন এর নিষেধাজ্ঞা থাকাসত্ত্বেও সরকারি আদেশ অমান্য করে কিভাবে ভবনের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয় এর তথ্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে অবহিত করেননি কলেজ কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বর্তমান অধ্যক্ষ(ভারপ্রাপ্ত) জয়নব রেখা বলেন আমি সে সময় দায়িত্বে ছিলাম না।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |