শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১০:২৭ অপরাহ্ন

আপডেট
দুদকের নামে ভয়ঙ্কর চাঁদাবাজির ফাঁদ

দুদকের নামে ভয়ঙ্কর চাঁদাবাজির ফাঁদ

দুদকের নামে ভয়ঙ্কর চাঁদাবাজির ফাঁদ

নিজস্ব প্রতিবেদক :
একটি অপ্রচলিত দৈনিকে কিছুদিন আগে একজন নির্বাচিত সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে একটি মনগড়া ভিত্তিহীন সংবাদ পরিবেশিত হলো। সংবাদটি প্রকাশের পর এ নিয়ে তেমন কোনও হৈ চৈ হলো না। ওই সংসদ সদস্যকে কয়েকজন ফোনে অবহিত করলেন। তিনিও এই ভিত্তিহীন, অসত্য সংবাদের ওপর গুরুত্ব দিলেন না। বরং সেই সংবাদের একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবাদ পাঠালেন ওই পত্রিকা অফিসে। কথাও বললেন পত্রিকা অফিসের সঙ্গে। পত্রিকা অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা স্বীকার করলেন যে, এটি তাদের ভুল। যাচাই বাছাই না করে তারা এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।

এর পরপরই ঘটল অন্যরকম ঘটনা। ওই সংসদ সদস্য তার নির্বাচনী এলাকায় গেছেন জনসংযোগ করতে। সেখানেই একটি ক্ষুদেবার্তা এলো তার টেলিফোনে। একজন জানালেন যে, তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন সহকারী পরিচালক, তার সাথে জরুরি কথা আছে। সংসদ সদস্যকে ফোন করার জন্য অনুরোধ করলেন। কিন্তু ওই তথাকথিত দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তা অপেক্ষা করলেন না। তার পরপরই ফোন করলেন সংসদ সদস্যকে। ফোন ধরার পর ওই দুর্নীতি কমিশনের কর্মকর্তা বললেন, তাকে (সংসদ সদস্য) নিয়ে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হচ্ছে। সে সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন কি না?

সংসদ সদস্য বললেন যে, এই সংবাদগুলো ভিত্তিহীন, মিথ্যা এবং একই সংবাদের চর্বিতচর্বণ সব জায়গায় প্রকাশিত হচ্ছে। এটিকে তিনি গুরুত্ব দিতে রাজি নন। কিন্তু নাছোড় সেই দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তা। তিনি বললেন যে, স্যার আমি বিষয়টা জানি। আমি এই বিষয়টাকে সুরাহা করে দিচ্ছি। কিন্তু সংসদ সদস্য এটিকে তেমন গুরুত্ব দিলেন না। তিনি বললেন যে, আপনারা যা খুশি করতে পারেন। কিন্তু দুদিন পরে আবার ওই তথাকথিত কর্মকর্তা টেলিফোন করলেন। টেলিফোন করে জানালেন যে, তার (সংসদ সদস্য) ফাইলটি নথিতেই তিনি ঠিক করে দিয়েছেন। নথিতে লিখেছেন, এটি তদন্তের যোগ্য নয়। এই বলে নথি নিষ্পত্তি করা হয়েছে বলেও তিনি জানালেন।

যথারীতি সংসদ সদস্য খুশি হলেন। তাকে বললেন, ধন্যবাদ। কিন্তু তথাকথিত দুদক কর্মকর্তা বললেন যে, স্যার আমি যে কাজটা করলাম, আমাকে একটু সহযোগিতা করতে হবে। এবার তো অবাক সংসদ সদস্য। তিনি জানালেন যে কী ধরনের সহযোগিতা করতে হবে? দুর্নীতি কমিশনের তথাকথিত ভুয়া কর্মকর্তা রাগঢাক না দেখিয়েই বললেন যে, আমাকে কিছু টাকা দিতে হবে। দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তাকে ওই সংসদ সদস্য বললেন, আপনি আমার পরিচয় জানেন। আমি কে এটি জানেন। তখন দুর্নীতি দমন কমিশনের তথাকথিত ওই কর্মকর্তা বললেন, জানি স্যার। কিন্তু আমি একটু বিপদে পড়েছি। ধার হলেও আমাকে কিছু টাকা দেন। এরপর সংসদ সদস্য একটু রেগে গেলেন এবং তাকে সতর্ক করে দিলেন।

এই পুরো বিষয়টি নিয়ে সংসদ সদস্যের সন্দেহ হলো। তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানকে অবহিত করলেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান স্বীকার করলেন যে, দুর্নীতি দমন কমিশনের কিছু কর্মকর্তা দুর্নীতিবাজ এবং এ ধরনের তৎপরতায় লিপ্ত। তবে এটি যে দুর্নীতি দমন কমিশনের কোনো কর্মকর্তা নয়, এ ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত করলেন। এরপর ওই সংসদ সদস্য আরও কয়েক জায়গায় যোগাযোগ করলেন। ইতোমধ্যে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ওই তথাকথিত দুদক কর্মকর্তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেল। আর এভাবেই তথাকথিত দুদকের ফাঁদ এড়ালেন একজন সংসদ সদস্য।

কিন্তু এর মধ্যেই জানা গেল যে, বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য এবং ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদের কাছ থেকে এভাবেই টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই চক্রটি। এই চক্রটি প্রথমে কিছু অখ্যাত সংবাদপত্রে তথাকথিত বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও মানহানিকর সংবাদ পরিবেশন করে। তারপর দুদকের পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ফোন করা হয়। অনেকেই এই ফোনে দুর্বল হয়ে পড়েন। অনেকে মানসম্মানের ভয়ে ওই সমস্ত ভুয়া কর্মকর্তাদের কাছে যা পারেন টাকা পয়সা দেন। এভাবে একটি সংঘবদ্ধ চক্র তৈরি হয়েছে এখন। যে সময় দুর্নীতি দমন কমিশন দুর্নীতির বিরুদ্ধে তৎপর হয়েছে, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের দুর্নীতির হাড়ির খবর বের করা হচ্ছে, তখন এ ধরনের তৎপরতা উদ্বেগজনক। এর ফলে দুদকের ভাবমূর্তি নিয়ে যেমন বিতর্ক তৈরি হবে, তেমনি আতঙ্ক সৃষ্টি হবে সাধারণের মধ্যে।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |