বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৫৫ পূর্বাহ্ন
মনসুর আলম মুন্না ( কক্সবাজার ): এ যেন এক বিলাস বহুল আবাসিক ভবন। দেখলেই মনে হবে কোন নামীদামী ব্যয়বহুল থাকার ফ্ল্যাট বাড়ি। সামনে সিকিউরিটি আর শুনশান নিরবতা। মূল গেইট দিয়ে ঢুকে দেখা মিলে ইয়া বড় একটা রিসিপশন। ভবনের মাঝখানে সরু করে দেয়া হয় চক্ষু হাসপাতালের সাইনবোর্ড। সাইনবোর্ডটি দেখা মাত্রই ঘাবড়ে যায় যায় সাথে থাকা অনুসন্ধানী টিমের লোকজন। এরপর ঢুকা হয় ভিতরে। কথা বললাম রিসিপশনে বসে থাকা বেশকয়েকজন যুবকের সঙ্গে। তারা হাসপাতালটির দেখবাল করেন। সেই সাথে মোটা অঙ্কের টাকা নেয় প্রতিমাসের শেষে। ভিতরে বেশ কয়েকজন ডাক্তারের রুম রয়েছে সেখানে যাওয়ার কোন প্রকার অনুমতি পাওয়া যায়নি। পরে দীর্ঘ অপেক্ষা শেষে চলে আসি অনুসন্ধানী টিম নিয়ে। পাঠক এসব বলেছিলাম রামু উপজেলার রামু কলেজের একটু পশ্চিম পাশ্বে সাতগড়িয়াপাড়া এলাকার মেইন রাস্তার পাশ্বে অবৈধভাবে গড়ে উঠা হযরত শাহজালাল চক্ষু হাসপাতালের কথা।
পরের দিনের পালা অনুসন্ধানী টিম ঠিক সকাল ১০ টায় আবারও হাজির এই হাসপাতালের রহস্য উদঘাটন বের করতে। যাওয়া মাত্রই দফায় দফায় বেরিয়ে পড়ে কিছু বকাটে যুবক। হাসপাতালের বাহিরে থাকা বেশ কয়েকজন বয়স্ক রোগীও হাও মা-ও চেচামেচি করার আওয়াজ শুনতে পাই প্রতিবেদক। কেউ ফ্লোরের একেবারেই মেজেতে বসে কান্নাকাটি করছে। কেউ হাসপাতালের বাহিরের ফটকে বসে দীর্ঘ অপেক্ষা করেছে। কিন্তু তাদের বারাবার হুমকি।দিচ্ছে বকাটে কিছু ছেলে। কাউকে অভিযোগ করলে সমস্যা হবে বলে তাড়িয়ে দিতে চাইছেন।
কিন্তু হাসপাতালে প্রতিদিন এসে এই অপেক্ষ দূর থেকে এসে করতে হয় তাদের। এই পর্যন্ত কোন সোরাহা দেয়নি হাসপাতাল কতৃপক্ষ। এরপর জিজ্ঞেস করা হয় গফুর, মনির,জব্বার ও রবি আলমসহ একাধিক রুগীকে ঘটনা কী? উত্তরে সবার একটা অভিযোগ হাসপাতালটির নাম দিয়ে কমদামে ভিআইপি চিকিৎসা করা হবে। মাইকিং করা প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলসহ বিভিন্ন জায়গায়। এরপর প্রতিটি মানুষই উদ্বুদ্ধ হয়ে চোখের চিকিৎসা নিতে মরিয়া। কিন্তু চিকিৎসা নিতে গিয়ে বড় ধরণের প্রতারণা ফাঁদে পড়ে গিয়ে টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ তুলে ধরেন একাধিক বয়স্ক গরীব অসহায় রোগী।
মাইকিং করে উন্নতমানের সেবা কম দামে দেয়ার কথা বলে পুরো জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসহায় গরীব সহজসরল প্রায় দুইশত’র অধিক রোগী এবং স্বজনদের কাছ থেকে দশ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ তুলেছে ভুক্তভোগীরা। তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সেবা না দিয়ে টাকা মেরে দিয়েছে হাসপাতালটির কর্তাবাবুরা। এবিষয়ে একাধিক বয়স্ক গরীব ও অসহায় রোগীর ভিডিও বক্তব্য রয়েছে প্রতিবেদকের কাছে।
হাসপাতালটিতে দেখা যায় যে, কোন দক্ষ নার্স এবং হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার যন্ত্রপাতি কিছুই নাই। ফার্নিচার আর বকাটে যুবকদের দখলে হাসপাতালটি। নেই কোন চিকিৎসাধীন রোগী। ইতিমধ্যেই তিনমাস পার হলেও কোন চিকিৎসাসেবা দেয়নি হাসপাতালে টাকা হাতিয়ে নেয়া রোগীদের। চিকিৎসার নামে হাতিয়ে নেয়ার টাকা হাসপাতাল কতৃপক্ষের লোকজন ভাগবাটোয়ারা করে খেয়ে ফেলার পর রোগীদের সেবা না দিয়ে বিপাকে ফেলেছে বলে দাবী করেন ভুক্তভোগীরা।
হাসপাতালের প্রতিটি কক্ষে বিলাসবহুল আসবাবপত্র নিয়ে একেকটি শেয়ারহোল্ডাররা বসে থাকতে দেখা যায়। কিন্তু নেই কোন চিকিৎসা সেবা। এরমধ্যে কথা হয় হাসপাতালটির দায়িত্ব থাকা ডিডি মনিরের সাথে। মনির বিষয়টি ভুল হয়েছে বলে দাবী করেন। তাদের মেসিন নষ্ট হয়ে গেছে তাই চিকিৎসা করাতে পারছেনা বলে দাবী করেন। তবে তারা আস্তে আস্তে সবকিছু ঠিক করে চিকিৎসাসেবা চালু হবে বলে জানান। তবে তারা টাকা পয়সা নিয়ে চিকিৎসা সেবা দিতে পারছেনা বলে অকপটে স্বীকারও করেছেন। কিন্তু তাদের টাকা ফেরতের কথা জিজ্ঞেস করা হলে তারা পরে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা বলে এড়িয়ে যান। তবে হাসপাতালের কোন অনুমোদন আছে কি-না জানতে চাইলে কোন সদুত্তর দিতে পারিনি।
স্থানীয়দের মধ্যে অনেকেই বলেছেন, তিনমাস আগে এখানে একটি চক্ষু হাসপাতাল গড়ে তুলেছে। তবে প্রতিদিন অনেক রোগীরা এসে বসে থাকতে দেখা যায়। কিন্তু কোন চিকিৎসা কার্যক্রম তাদের কাছে নাই। তারা প্রতিদিন মানুষের সাথে কথা কাটাকাটি করে। মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার কথাও শুনেছি। তবে এটি যদি হয়ে থাকে তাহলে সম্পুর্ন প্রতারকের আস্তানা। এটি অচিরেই অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেয়া হোক। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কাছ থেকে চিকিৎসার নামে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগের উপর ভিত্তি করে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হোক এবিষয়ে কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডা. আসিফ আহমেদ হাওলাদারের সাথে কথা বলে জানা যায় যে, রামুতে এরকম কোন হাসপাতালের খবর নেই। তবে বিষয়টি আপনি বক্তব্য নেয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। যদি এমন অনৈতিক কান্ড ঘটিয়ে থাকে তাহলে আমি অতিশিগ্রই খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।