রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২৬ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক :
কলকাতার আলিসান অ্যাপার্টমেন্ট সঞ্জীবা গার্ডেনে গত ১৩ মে প্রবেশ করেন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন আরও দুজন। জীবিত অবস্থায় আনার ফ্ল্যাটে প্রবেশ করলেও তাকে আর বের হতে দেখা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি আর বেঁচে নেই। ঘাতকরা তাকে হত্যা করে মরদেহ খণ্ড-বিখণ্ড করেছে। পরে তা ট্রলি ব্যাগ আর পলিথিনে কিছু নিয়ে ওই ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়া যায়। ঘটনার সময়ের সিসিটিভি ফুটেজ ও গ্রেপ্তার একাধিক ব্যক্তির জবানে এসব তথ্য মিলেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, পুরো কিলিং মিশনে সবার সামনে ছিলেন শিমুল ভুঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহ আমান। হত্যার পর হাত-পাসহ শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আলাদা করে হত্যাকারীরা। এতে মুম্বাইয়ের এই শীর্ষ কসাইকে ভাড়া করা হয়। তার নাম জিহাদ। এরইমধ্যে জিহাদকে আটক করে আদালতে তুলেছে দেশটির পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দশদিনের রিমাণ্ড পেয়েছে তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া সিআইডি।
৫৮ সেকেন্ডের একটি সিসিটিভি ফুটেজ এসেছে। তাতে দেখা যায়, ভারতীয় সময় ১৪ মে বিকেল ৫টা ১১ মিনিটের দিকে দুজন একটি পেস্ট কালারের ট্রলি ব্যাগ ও তিন থেকে চারটি পলিথিন ব্যাগে আনারের মরদেহ গুম করার জন্য লিফটে উঠছেন। ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, সঞ্জীবা গার্ডেনের ফ্ল্যাট থেকে যে দুজন বের হয়েছেন তারা হলেন- আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভুঁইয়া ও জিহাদ ওরফে জাহিদ। সিসি ক্যামেরায় যা দেখা গেছে তা স্বীকারও করেছেন ডিবির হাতে গ্রেপ্তার আমান। অন্যদিকে জিহাদ ওরফে জাহিদ ভারতীয় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার রয়েছেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট ডিবির একজন কর্মকর্তারা জানান, এমপি আনারকে হত্যার বিস্তারিত বর্ণনা শুনে তারা নিজেরাই আঁতকে উঠেছেন। তার পুলিশি ক্যারিয়ারে অনেক খুনের ঘটনার বর্ণনা শুনেছেন, কিন্তু এত নৃশংস বর্ণনা কখনোই শোনেননি জিজ্ঞাসাবাদে আমান ওরফে শিমুল ভুঁইয়া জানিয়েছে, কীভাবে এমপি আনারকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যার পর হাত-পাসহ শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আলাদা করা হয়। যেন কোনোভাবেই এমপি আনারের চেহারা দেখে কেউ পরিচয় শনাক্ত করতে না পারে। এরপর ট্রলি ও ব্যাগে করে খণ্ড খণ্ড লাশ ফেলা দেওয়া হয়।
শিমুল ভুঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহ আমান নামে সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া আসামি ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, আনোয়ারুল আজীম আনারকে সঞ্জীবা গার্ডেনের ফ্ল্যাটে হত্যা করা হয়। হত্যার পর শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আলাদা করা হয়। এরপর একটি ট্রলি ও তিন-চারটি পলিথিন ব্যাগে করে ১৪ মে বিকেল ৫টা ১১ মিনিটের দিকে লাশ বের করা হয়। এরপর কলকাতার হাতিশালা বর্জ্য খালে ফেলে দেওয়া হয়।
আমানুল্লাহ আমানের স্বীকারোক্তির পরে ভারতীয় পুলিশ ২৩ মে রাতে হাতিশালা বর্জ্য খালে গিয়ে তল্লাশি চালায়। তবে অন্ধকারচ্ছ হওয়ায় রাতে সন্ধায় পায় না পুলিশ। পরে শুক্রবার (২৪ মে) আবারও খণ্ড লাশের সন্ধান শুরু করে ভারতীয় পুলিশ। ডিবির দাবি, যেহেতু হত্যাকাণ্ডে সরাসরি বেশ কয়েকজন আসামি গ্রেপ্তার রয়েছেন এবং তথ্য দিয়েছেন সেহেতু লাশের সন্ধান মিলবে।
এমপি আনারকে হত্যার জন্য ভাড়া করা হয় খুলনা অঞ্চলের কুখ্যাত সন্ত্রাসী শিমুল ভূঁইয়াকে। তিনি চরমপন্থি সংগঠন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম শীর্ষ নেতা। এ ঘটনায় ঢাকায় ধরা পড়ার পর পুলিশের কাছে শিমুল ভূঁইয়া নিজেকে সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান নামে পরিচয় দেয় এবং তিনি এমপি হতাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নয় বলে দাবি করে। তবে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের মুখে এক পর্যায়ে আমান স্বীকার করেন তিনিই আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভুঁইয়া।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি আমানুল্লাহ নামেই পাসপোর্ট বানিয়েছেন। সেই পাসপোর্টে তিনি কলকাতায় গিয়েছিলেন। ২০১৯ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকা থেকে পাসপোর্টটি করা হয়েছিল। পাসপোর্ট করতে একই নামে তিনি জাতীয় পরিচয়পত্রও (এনআইডি) তৈরি করেন। কীভাবে তিনি শিমুল ভূঁইয়া থেকে আমানুল্লাহ হলেন এবং ভুয়া পাসপোর্ট ও এনআইডি তৈরি করলেন, এখন সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন গোয়েন্দারা।ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তারের পর জিহাদ জিজ্ঞাসাবাদের মুখে এমপি আনার হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন।
এদিকে আনার ঝিনাইদহ-৪ আসন থেকে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে টানা তিনবার আওয়ামী লীগ থেকে তিনি এমপি নির্বাচিত হন। তাকে খুনের ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেছেন তার ছোট মেয়ে। এই মামলায় দেশে এখন পর্যন্ত একনারীসহ তিনজন গ্রেপ্তার আছেন। আর ঘটনার প্রধান মাস্টারমাইন্ড এমপি আনারের দীর্ঘদিনের পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন। তবে তিনি একটি গণমাধ্যমে নিজের সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।