রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫৩ পূর্বাহ্ন

কেওয়াটখালি সেতুর নেপথ্যে ভূমি অধিগ্রহণ চক্রের কোটি কোটি টাকা লুটপাটের কারসাজি

কেওয়াটখালি সেতুর নেপথ্যে ভূমি অধিগ্রহণ চক্রের কোটি কোটি টাকা লুটপাটের কারসাজি

কেওয়াটখালি সেতু নির্মাণ প্রকল্পের সংযোগ সড়কের নকশা

খায়রুল আলম রফিক : ময়মনসিংহে নির্মাণাধীন কেওয়াটখালি সেতু নির্মাণ প্রকল্পের সংযোগ সড়কের নকশা পরিকল্পনায় ত্রুটি বিচ্যুতি রেখেই তড়িঘড়ি ভূমি অধিগ্রহণের পাঁয়তারা চলছে। এর নেপথ্যে রয়েছে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ কেন্দ্রিক সংঘবদ্ধ একটি চক্রের কারসাজি। চক্রটি সেতু প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা লুটপাট নিশ্চিত করতেই ভুল-ত্রুটি-তড়িঘড়িতে বাধ্য করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ত্রুটিপূর্ণ নকশায় ঘুরিয়ে পেচিয়ে সংযোগ সড়কটি ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকা ও শতাধিক মিল-কারখানা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নেওয়া হয়েছে। এটা ঘিরেই শুরু হয়েছে ভূমি অধিগ্রহণ কেন্দ্রিক লুটপাটের কার্যক্রম। জমির শ্রেণীর পরিবর্তন করাসহ কারো নিচু নামা চাষাবাদের ভূমিকে ভিটে বাড়ি দেখানো, টিনের বস্তি সাদৃশ্য ঘরকে বিরাট আয়তনের কারখানা হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে। লাখ টাকার সম্পদ-স্থাপনাকে কয়েক কোটি টাকা মূল্য নির্ধারণের নকশা আঁকাআঁকির অপকর্ম চলছে জোরেসোরেই। এসব কারণে কেওয়াটখালি সেতু নির্মাণ প্রকল্পের বিপুল পরিমাণ টাকা যেমন অপচয় হচ্ছে, অপরদিকে প্রকল্পটি কাঙ্খিত জনকল্যাণ নিশ্চিতকরণে ব্যর্থ হওয়ারও আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।

জানা যায়, ব্রম্মপুত্র নদীর উপর অষ্ট্রেলিয়ার সিডনী হারবার ব্রিজের আদলে কেওয়াটখালি সেতু নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। স্টিল আর্চ সেতু নির্মাণ প্রকল্পটির মোট ব্যয় তিন হাজার ২৬৩ কোটি ৬৩ লাখ ১৪ হাজার টাকা। ইতিমধ্যেই অধিদপ্তর প্রকল্প কাজের ব্যাপারে যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন ও বাংলাদেশের স্প্রেক্টা ইঞ্জিনিয়ার্সের মধ্যে চুক্তি সই সম্পাদন করেছে। এবিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে মোশাররফ হোসেন নামের এক ব্যাক্তি একটি আবেদন করেছেন। যার নং- ৬৯১ তারিখ ২৭/৬/২৪ ।

দেশে নতুন প্রযুক্তির এ স্টিল আর্চ (ধনুক) ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ৩৩ দশমিক ২ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত রয়েছে। মূলত এই অধিগ্রহণ খাতে মাত্রাতিরিক্ত টাকা ব্যয়ের অপকৌশলেই সেতু প্রকল্পের সংযোগ সড়কগুলো ঘুরিয়ে পেচিয়ে ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকা দিয়ে নির্মাণের ত্রুটিপূর্ণ নকশা করার অভিযোগ উঠেছে। অভিজ্ঞ প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, সেতুর সংযোগ সড়কটি ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাইপাস মোড় থেকে শুরু হয়ে কেওয়াটখালি এসে সেতুর পশ্চিম প্রান্তে যুক্ত হয়েছে। কিন্তু সেতুর পূর্ব প্রান্তের সংযোগ সড়কটি উত্তর-পূর্ব দিকে কিছুটা অগ্রসর হয়ে আবার পেছন ফিরে পশ্চিম দিকে দুটি রেলওয়ে ওভারপাস ফ্লাইওভার আকারে পেরিয়ে টোল প্লাজা পর্যন্ত পৌঁছে আবারও উত্তর দিকে চায়না মোড়ের দিকে অগ্রসর হয়েছে। অথচ সেখানেও সংযোগ সড়কটি যুক্ত না করে দুটি র‌্যামে বিভক্ত করা হয়।

বিভক্ত একটি র‌্যামকে পূর্ব দিকে চলমান চার লেন মহাসড়কে একশ‘ মিটার ওভারপাস দ্বারা ক্রস করে উত্তর পাশ দিয়ে রংধনুর আকৃতিতে যাওগরা স্কুলের সামনে মূল সড়কে সংযুক্তি দেখানো হয়। আরেকটি র‌্যাম চার লেন মহাসড়কের দক্ষিণ পাশ যাওগরা স্কুলের বিপরীত পাশে মূল রাস্তায় মিলিত হয়েছে। কিন্তু ফ্লাইওভারটি পেছন দিকে না ঘুরিয়ে সরাসরি নেয়া হলে অন্তত এক হাজার মিটার সংযোগ সড়ক কমে যেতো। এক্ষেত্রে শত কোটি টাকা নির্মাণ ব্যয় যেমন কমতো, তেমনি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা ভূমি অধিগ্রহণেরও প্রয়োজন হতো না। কারণ সংযোগ সড়কটি সরাসরি নেয়া হলে সেখানে বেশিরভাগই ছিল খাস ভূমি। ফলে ভূমি অধিগ্রহণ খাতে মাত্র এক তৃতীয়াংশ খরচ হতো বলেও সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা মন্তব্য করেছেন।

এ ব্যাপারে বিস্তারিত উল্লেখ করে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসকসহ কেওয়াটখালি সেতু নির্মাণ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে। সেখানে ভূমি অধিগ্রহণ চক্রের কারসাজিতে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সেতু প্রকল্পে মাত্রাতিরিক্ত অপচয় ঘটানোর অভিযোগ তুলে অবিলম্বে সংযোগ সড়কের ত্রুটিপূর্ণ নকশা সংশোধনেরও দাবি জানানো হয়। কিন্তু জেলা প্রশাসনের একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর সমন্বয়ে গড়ে ওঠা ভূমি অধিগ্রহণ চক্রের লুটপাট ও দুটি আবাসন প্রকল্পের স্বার্থে লিখিত অভিযোগটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে না। উপরন্তু অধিগ্রহণ খাতের কোটি কোটি টাকা লুটপাট নিশ্চিত করার মাধ্যমে তড়িঘড়ি ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পাঁয়তারা চলছে। এ ব্যাপারে সরেজমিন অনুসন্ধানপূর্বক জরুরি পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য উর্দ্ধতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।

কেওয়াটখালি সেতু নির্মাণ প্রকল্প ব্যবস্থাপক দিদারুল আলম তালুকদার জানান,মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর ময়মনসিংহের মোশারফ হোসেন নামের এক ব্যাক্তি একটি আবেদন করেছেন। এখন মন্ত্রনালয়ে তদন্তাধীন আছে। এবিষয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে ময়মনসিংহের এক ব্যক্তি একটি আবেদন করেছেন। আবেদনটি আমার দপ্তরে আসছে। তদন্ত চলছে, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোন কিছু বলা যাবে না।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |