বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৯ অপরাহ্ন
কক্সবাজারের টেকনাফ থানায় নিয়ে থানা হাজতে দফায় দফায় অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে একপর্যায়ে গভীর রাতে ক্রসফায়ার দিতে চেয়েছিলেন ওসি প্রদীপ। কিন্তু সারাদেশে সাংবাদিকদের কাছে গ্রেফতারের খবর প্রচার করার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয় প্রতিবাদ। তারপর তাকে আর ক্রসফায়ার দেওয়া হয়নি। ওসি প্রদীপের প্রতিহিংসার শিকার কক্সবাজারের নিপীড়িত সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খানের বিরুদ্ধে দায়ের করা ছয়টি মিথ্যা মামলা এখনও প্রত্যাহার হয়নি।
ওসি প্রদীপের দায়ের করা সাজানো মামলায় টানা ১১ মাস পাঁচ দিন কারাভোগের পর জামিনে এসে প্রদীপ গংয়ের বিরুদ্ধে আদালতে দায়েরকৃত তার ফৌজদারি মামলাটিও রেকর্ড করেনি কর্তৃপক্ষ। এতে একদিকে নিজের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, অপরদিকে মামলা-হামলায় জড়িতদের শাস্তি ও ন্যায় বিচারের দাবিতে আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন আমাদের সময় মিডিয়া গ্রুপের কক্সবাজারস্থ আবাসিক সম্পাদক, দৈনিক কক্সবাজার বাণী ও জনতার বাণী সম্পাদক ফরিদুল মোস্তফা খান।
অন্যদিকে ২০১৮ সালে ২৯ নভেম্বর ময়মনসিংহে গোয়েন্দা সংস্থা (ডিবি) কর্মকর্তা এসআই আকরাম হোসেন ও তার টিম সদস্যদের বিরুদ্ধে সাংবাদিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্রাব) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ তুলে ধরেন সাংবাদিক খায়রুল আলম রফিক। দৈনিক ময়মনসিংহ প্রতিদিনের সম্পাদক।
সংবাদ সম্মেলনে খায়রুল আলম রফিক বলেন, আমার সম্পাদনায় প্রকাশিত দৈনিক ময়মনসিংহ প্রতিদিন পত্রিকায় ময়মনসিংহের সাবেক দুইজন প্রতিমন্ত্রী, তাদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিএস), কয়েকজন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আওয়ামীলীগ পন্থী ঠিকাদার হাশেম আলী বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করেন এবং হাসপাতালের নিম্নমানের খাদ্য সরবরাহ ও ওষুধ সরবরাহে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করা হয় এবং ময়মনসিংহ ডিবির অপকর্ম নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় তৎকালীন পুলিশ সুপার ও এসআই আকরাম হোসেন ক্ষুব্ধ হয়।
এর জেরে ২০১৮ সালের ২৯ নভেম্বর রাত আনুমানিক ১১টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিপরীতে নিউ মেডিকেয়ার ডায়াগনস্টিকের সামনে থেকে আমাকে আটক করা হয়। ডিবির এসআই আকরাম হোসেন বলেছিলেন পুলিশ সুপার শাহ্ আবিদ হোসেন স্যার আপনাকে ডেকেছে। তারপরই সাদা পোশাকধারী অজ্ঞাত ৭-৮ জন আমাকে চোখ বেঁধে একটি হায়েজ গাড়িতে তুলে নেন। গাড়িটি পুরাতন গোদারাঘাটের ওপারে চরাঞ্চলে যায়। তখন ডিবির এসআই আকরাম হোসেনের মোবাইল ফোনে অপর প্রান্ত থেকে একজন বলছেন, ‘রফিককে আটকের খবর সাংবাদিকরা জেনে গেছে।
তাকে এ মুহূর্তে ক্রসফায়ারে দেয়া যাবে না। তাড়াতাড়ি তাকে ডিবি অফিসে নিয়ে আসো।’ ফোন লাউড স্পিকারে ছিল। খায়রুল আলম রফিক বলেন, আমি কোনো অপরাধী না হয়েও ডিবি’র হাতে আটকের পর তিনদিন অবর্ণনীয় নির্যাতন সহ্য করেছি। ক্রসফায়ারে ব্যর্থ হয়ে আইসিটি আইনে মামলা দিয়ে আমাকে আদালতে পাঠায়। শুরু হলো আমার কারা জীবনের নতুন অধ্যায়। দুই মাস কারাভোগে আমার জীবনে আঁধার নেমে আসে।
নির্যাতনের কারণে আমি আজও চোখে ঝাপসা দেখি, শরীরে প্রচণ্ড বিদ্যুৎ শকের কারণে রক্তশূন্যতাসহ বিভিন্ন মারাত্মক শরীরিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, গত ২২ ডিসেম্বর আমার চোখ বাঁধা নির্যাতনের ছবি ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করে এসআই আকরাম হোসেন এবং এএসআই জুয়েলসহ অন্যরা।
এতে আমি সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হই এবং মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি এসআই আকরাম হোসেন এবং এএসআই জুয়েলসহ ৭-৮ জন ডিবি কর্মকর্তাকে আসামি করে ময়মনসিংহ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে একটি মামলা করি। জেলা ও দায়রা জজ হেলাল উদ্দিনের নির্দেশে কোতোয়ালি মডেল থানায় এসআই আকরাম হোসেনসহ ৭ জনের নামে হেফাজতের নির্যাতন আইনে মামলা রেকর্ড হয়।
মামলাটি রেকর্ড করেন তৎকালীন ওসি ফিরোজ তালুকদার । পুলিশের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হওয়ার পর সাংবাদিক খায়রুল আলম রফিককে মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। একপর্যায়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালি মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ ফারুক হোসেন মামলাটি মীমাংসা করার প্রস্তাব দেন। এক পর্যায়ে বাদীকে না জানিয়ে গোপনে বিজ্ঞ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। এরপর আকরামের প্রভাব বিস্তার করে মামলাটি পরিসমাপ্ত করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা আকরাম হোসেন বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে খায়রুল আলম রফিককে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছিল। তাকে নির্যাতনের অভিযোগ সঠিক নয়। ঘটনার দুই বছর পর তিনি আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তদন্তে যদি আমি দোষী হই তবে আমাকে যে শাস্তি দেওয়া হবে তা মেনে নেব। আর যদি দোষী প্রমাণিত না হই তবে রফিক আল্লাহর কাছে দায়ী থাকবেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ফারুক হোসেন জানান, হেফাজতে নির্যাতন আইনের মামলাটি তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে আমাকে নিয়োগ দেন। উর্দ্ধতন এক কর্মকর্তাদের চাপে আমি বিজ্ঞ আদালতে ফাইনাল রিপোর্ট দাখিল করি। পড়ে শুনেছি তারা আপোষ হয়ে গেছেন।