শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:২৪ পূর্বাহ্ন

আপডেট
কুলিয়ারচরের সুস্বাদু দেশি কচু যাচ্ছে দেশ-বিদেশে

কুলিয়ারচরের সুস্বাদু দেশি কচু যাচ্ছে দেশ-বিদেশে

মোঃ নাঈমুজ্জামান নাঈম
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার “কচু” চাষে লাভবান চাষীরা । কচু চাষ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে বহু চাষী। জানা যায়, উপজেলার ৩শ হেক্টর জমিতে কচু চাষ হচ্ছে । যা গত বছরের তুলনায় ১৫ হেক্টর বেশি। সাদা কচু, বারি কচু, লতিরাজ ও নারকেলি কচু এ এলাকায় প্রচুর পরিমাণে চাষ হয়। এক বিঘা জমিতে কচু চাষে খরচ হয় প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকা, তা বিক্রি করা যায় কমপক্ষে দেড়লক্ষ টাকা। কুলিয়ারচরের কচু খেতে সুস্বাধু হওয়ায় এ কচু দেশের রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ-সহ দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশের সৌদি আরব, দুবাই, কুয়েত, কাতার, মিশর, ইরাক, ইরান, ইতালি, তুরস্ক, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলসহ মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের প্রায় ২০টি দেশে রপ্তানী করা হচ্ছে। রামদী ইউনিয়নের মনোহরপুর গ্রামের কচু চাষী মোঃ বকুল মিয়া (৫৩) বলেন, ছোটকাল থেকেই বাবার সাথে কচু ক্ষেতে কাজ করে বেড়ে উঠা ।

 

তিনি বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় এ বছর ৫৩ শতাংশ জমিতে ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে বারি পানিকচু চাষ করে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন । এতে ধানের তুলনায় প্রায় তিনগুন বেশি লাভবান হয়েছেন। এর মাধ্যমে পরিবারসহ চার ছেলে-মেয়ের পড়ালেখার খরচ এবং বিয়ে দিয়ে সুখেই আছেন। সালুয়া ইউনিয়নের চরকামালপুর গ্রামের কচু চাষী মোঃ গোলাপ জানান, অগ্রহায়ণ থেকে শ্রাবণ পর্যন্ত কচু চাষ ও বিক্রির মৌসুম। তিনি এ মৌসুমে প্রতি বছরই কচু চাষ করে থাকেন। তিনি বলেন, ১ কানি জমিতে নারকেলি কচু চাষ করতে খরচ হয় ১০/১৫ হাজার টাকা, তা বিক্রি করতে পারেন ৭০-৮০ হাজার টাকা এদিকে সাদা কচু চাষ করতে খরচ হয় ১০/১২ হাজার টাকা তা বিক্রি করতে পারেন প্রায় ৪৫-৫৫ হাজার টাকা। বছরে প্রায় ছয়গুণ লাভে কচু বিক্রি করে থাকেন। তার অন্যান্য ব্যবসা থেকে এটি সবচেয়ে বেশি লাভজনক ব্যবসা।

চরকামালপুরের কচু ব্যবসায়ী মোঃ হোসেন মিয়া জানান, ২০-২৫ বৎসর যাবত এ ব্যবসা করে আসছেন। তিনি চাষীদের কাছ থেকে কচু ক্রয় করে ঢাকা কারওয়ান বাজার ও গাজীপুর বাজারের পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন । তিনি বলেন, বৃষ্টি বেশি হলে কচুর মূল্যায়ন বেশি এবং লাভও বেশি হয়। গতবছরের তুলনায় এবছর কচুর চাহিদা বেশি থাকায় কচু ব্যবসা করে লাভবান । মনোহরপুর এলাকার কচু ব্যবসায়ী ইমরান ও সানাউল্লাহ জানান, ১০/১৫ বছর যাবত এ কচু ব্যবসার সাথে জড়িত। তারা জানান, কুলিয়ারচরের বিভিন্ন এলাকা থেকে কচু ক্রয় করে ঢাকা কারওয়ান বাজারের আড়তে পাঠান। তারা বলেন, শুরুতে বৃষ্টির পরিমাণ কম হলেও শেষ দিকে বৃষ্টি বেশি হওয়ায় ব্যবসা ভালো। তারাও কুলিয়ারচরের কচু ব্যবসা করে লাভবান বলে জানান। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দিলীপ কুমার সূত্রধর জানান, কচু চাষে উদ্বুদ্ধ করতে এ উপজেলার বøক ভিত্তিক (যে বøকে কচু চাষ হয়) ১/২ জন কচু চাষীদের প্রদর্শনী দেন। যার মাধ্যমে চাষীগণ কচুর চারার দাম (আর্থিক মূল্য) পায়। রাসায়নিক ও জৈব সার পায়। কচুর লেডা পোকা দমনের জন্য চাষিকে ফেরোমন সেক্স দেন। কচুর পাতা ও কান্ড পচন দমনে ছত্রাকনাশক নাটিবো/স্ট্রমিন দেন।

এছাড়া কচু চাষীসহ অন্যান্য চাষীদের কচু চাষের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেন।উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ জসীম উদ্দিন জানান, কীটনাশক ব্যতীত ও বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, প্রযুক্তির দ্বারা কন্দাল ফসল উৎপাদনের পরামর্শ দেন। চাষিরা কীটনাশক মুক্ত সবজি চাষ করলে খরচ কম হবে এবং মানুষের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, কুলিয়ারচরের কচু বিখ্যাত কচু। এ উপজেলায় দেশের সবচেয়ে বেশি কচু চাষ করা হয়। তিনি বলেন, এ উপজেলার কচু দেশের চাহিদা মিটিয়ে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে রপ্তানি হচ্ছে। বিশেষ করে নারকেলি কচুর খুবই চাহিদা। ধানের চেয়ে কয়েকগুন অধিক লাভবান হওয়ায় কচু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে চাষীরা। তিনি বলেন, কন্দাল ফসল উৎপাদন প্রকল্পের মাধ্যমে বিষমুক্ত কচু উৎপন্ন করার পরামর্শ দেন । এতে করে কচু চাষে ন্যায্য মুল্যও পাচ্ছে চাষীরা ।উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাদিয়া ইসলাম লুনা বলেন, এ উপজেলায় কচু চাষের জন্য মাটি খুবই উপযোগী হওয়ায় কচু ও লতি অত্যান্ত সুস্বাদু ও বিখ্যাত। এ জন্য কচুর উৎপাদন বেশি এবং চাষিরাও লাভবান হয়। আর এ কচু সুস্বাদু হওয়ায় বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। এখানকার স্থানীয় বাজার ও ঢাকার কারওয়ান বাজার এবং গাজীপুরের পাইকাররা এসে কচু কিনে নিয়ে যায়। এখান থেকে সরাসরি রপ্তানি করা যায়না। যদি কুলিয়ারচর থেকে বিদেশে রপ্তানি করতে পারতো তাহলে এখানকার কচু চাষীরা আরো বেশি লাভবান হতো। সেদিকে আমরা চেষ্টা করছি স্থানীয়ভাবে কচু সংগ্রহ করে যেনো তারা সরাসরি বিদেশে রপ্তানি করতে পারে।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |