শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:২৫ অপরাহ্ন

আপডেট
বিজয়নগরে লিচুর ভালো ফলন, বিক্রির সম্ভাবনা ২০ কোটি টাকার

বিজয়নগরে লিচুর ভালো ফলন, বিক্রির সম্ভাবনা ২০ কোটি টাকার

মমিনুল হক রুবেল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় এবারও লিচুর ভালো ফলন হয়েছে। তবে তীব্র গরমের কারণে লিচু একটু ছোট হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাগান মালিকরা। একই সঙ্গে তারা অভিযোগ করেছেন, কৃষি কর্মকর্তারা কখনোই বাগানে এসে তাদের সহযোগীতা করেননি। উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে,  তীব্র গরমের কারণে এমনটি হচ্ছে। তবে যাদের বাগানে পানি দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে তাদের লিচুর সাইজ ঠিক আছে। এদিকে, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার জানিয়েছেন, উপজেলায় এবছর ৪৩০ হেক্টর জায়গায় লিচুর আবাদ হয়েছে। লিচু বাগান আছে ৯০০টির বেশি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায়  ২০ কোটি টাকার লিচু বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ভারত সীমান্ত ঘেঁষা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলা। এই উপজেলায় সব ধরনের সবজি ও ফলের ভালো উৎপাদন হয়। বিশেষ করে এখানকার সুস্বাদু লিচুর সুনাম রয়েছে পুরো বাংলাদেশ জুড়ে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় ৫০ বছর আগে এই উপজেলায় লিচুর উৎপন্ন শুরু হয়। জায়গা ও শ্রম কম হওয়াই লিচুর ব্যবসা শুরু করেন স্থানীয় কৃষকরা। বিজয়নগর উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বিষ্ণুপুর, কাঞ্চনপুর, কাশিমপুর, সিঙ্গারবিল, আদমপুর, কালাছড়া, মেরাশানী, সেজামুড়া, কামালমুড়া, হরষপুর, মুকুন্দপুর, নোয়াগাঁও, অলিপুর, কাশিনগর, ছতুরপুর, বক্তারমুড়া, রূপা, শান্তামুড়া, কামালপুর, কচুয়ামুড়া, গোয়ালনগর, ভিটিদাউপুর, পত্তন, এলাকায় লিচুর বাগান রয়েছে। এছাড়াও উপজেলার প্রায় প্রত্যেকের বাড়িতেই একটি করে লিচুর গাছ আছে। যাদের বাড়িতেই একটু জায়গা আছে, তারা প্রত্যেক বাড়িতে লিচুর গাছ লাগান। এসব গাছে পাটনাই, বম্বে, চায়না থ্রি, চায়না-২ ও এলাচি জাতীয় লিচুর ফলন হয়।
উপজেলার সবচেয়ে বড় বাজার হিসেবে পরিচিত আউলিয়া বাজার। এছাড়াও সিংগারবিল, হরষপুর, চম্পকনগর বাজারে বিক্রি হয় অধিকাংশ লিচু। এসব বাজার থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, নরসিংদী, ভৈরব, নোয়াখালী, চাঁদপুর, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, শায়েস্তাগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, ফেনী ও রাজধানী ঢাকার ব্যবসায়ীরা পায়কারি দরে লিচু কিনে নিয়ে যান।
সরেজমিনে গত বুধবার, বৃহস্পতিবার ও শুত্রুবার উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের কচুয়ামুড়া, ভিটিদাউদপুর, সেজামুড়া ও কামালমুড়ার বিভিন্ন বাগানে ঘুরে দেখা যায়, বাগান পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন বাগান মালিকরা। এসময় কথা হলে পাহাড়পুর ইউনিয়নের কচুয়ামুড়া গ্রামের বাসিন্দা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত সার্জেন্ট মো. ইকবাল হুসাইন টিটু বলেন, ‘আমার দুইটি বাগানে ৪৩টি লিচু গাছ রয়েছে। এবছর আমার গাছে খড়া ও অনাবৃষ্টির কারনে লিচুর সাইজ একটু ছোট হয়েছে। এবছর ৩ লাখ টাকার লিচু বিক্রি হবে বলে আশা করছি। তিনি বলেন, লিচুর সিজন আসলে আমি অফিস থেকে ছুটি নিয়ে বাগান পরিচর্যায় লেগে যায়। আমার অফিসের সবাই জানে আমি বাগান প্রিয়। ছুটি শেষে অফিসের সবার জন্য বাগানের লিচু নিয়ে সবাইকে দেয় সবাই খুশি হয়। তবে তিনিও আক্ষেপ করে বলেন, আমার বাগানে উপজেলা বা ইউনিয়ন কৃষি অফিসের কোন কর্মকর্তা কোনদিন আসেননি।
সেজামুড়া গ্রামের বাগান মালিক মো: আসাদ ভূইয়া বলেন, আমার ৬টি বাগানে ১২৪টি গাছ আছে। গাছে এবছর প্রচুর লিচুর ফলন হয়েছে। কিন্তু গরমের তাপে লিচু একটু ছোট হয়েছে তবে এই ছোট হওয়াতে আমাদের কোন ক্ষতি হয়নি। আমি আশাবাদী এবছর ১০ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করতে পারবো। কৃষি অফিস থেকে পরামর্শ বা সাহায্য সহযোগীতা পেয়েছেন কিনা প্রশ্ন করা হলে আসাদ আক্ষেপ করে বলেন, আমাদের বাগানে কোনদিন কৃষি অফিসের কোনো কর্মকর্তাকে বাগানে এসে একবারও খবর নিতে দেখিনি। বিজয়নগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাব্বির আহমেদ বলেন, উপজেলায় এবছর ৪৩০ হেক্টর জায়গায় লিচুর আবাদ হয়েছে। লিচু বাগান আছে ৯০০টিরও বেশি। এবছর ২০ কোটি টাকার লিচু বিক্রির লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।   উপজেলার সব বাগান কৃষি কর্মকর্তারা তদারকিতে যান না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উপজেলায় আমাদের ৩০ কর্মকর্তার প্রয়োজন। আছেন ১৮জন। জনবল কম হওয়ার কারণে সব বাগানে তদারকি করা যাচ্ছে না।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |