বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৬ অপরাহ্ন

আপডেট
একাত্তরের ভুল প্রমাণিত হলে জাতির কাছে ক্ষমা চাইব: জামায়াত আমির রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের বিধান থাকছে না সংসদ ও স্থানীয় নির্বাচনে একবারে ভোটগ্রহণের প্রস্তাব সাবেক সিইসি রউফের দুর্যোগে সশস্ত্র বাহিনী দুর্গত জনগণের শেষ ভরসার স্থান জাতি গঠনমূলক কাজে সশস্ত্র বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে শিখা অনির্বাণে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা ঢাকার সড়কে অটোরিকশা চালকরা, বন্ধ যান চলাচল জেনারেল ওয়াকারের সঠিক সিদ্ধান্তে সশস্ত্র বাহিনী আবারও আস্থার প্রতীক ময়মনসিংহে ট্যুরিস্ট পুলিশের “National Integrity Strategies” বিষয়ক কোর্স এর সমাপনী অনুষ্ঠানে রেঞ্জ ডিআইজি বিভাগের শিক্ষার্থীদের ১১ দফা: জাবি ক্যাম্পাসে মোটরচালিত যানবাহন বন্ধ
সাংবাদিকতাই হচ্ছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পেশা

সাংবাদিকতাই হচ্ছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পেশা

সাংবাদিকদের মাঠপর্যায়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে হয় সবসময়। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ঝুঁকি আরও বেশি থাকে। অনেকেই করতে চায় না। অনেকেই করেন। করলে বিভিন্ন সমস্যায় পড়েন। দুর্নীতি-অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ করলে অনেক চাপ পড়ে। দুর্নীতিবাজরা টাকার বিনিময়ে দালালদের দিয়ে হয়রানি করান। অনেক সময় একজন ভাল সাংবাদিকের নামে অপপ্রচার চালান। এই কারনে অনেক সাংবাদিকরা সমাজের দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করতে চায় না সবসময় এরিয়ে চলে। আবার সংবাদ প্রকাশ না করলে বলে দালাল-হলুদ সাংবাদিক। সাংবাদিক যাবে কোথায় ? একটি ঘটনা আমাদের কষ্ট দেয়। বরগুনা দুনীৃতির তথ্য চাওয়ায় সাংবাদিক রাশেদুল ইসলামকে হয়রানি করেন ইউএনও।

রয়েছে আরও কত কাহিনী। অনেক সময় দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করলে সাংবাদিকের নামে করা হয় পোষ্টারিং। এমনি একটি ঘটনার শিকার নাগরিক সাংবাদিক মোঃ খায়রুল আলম রফিক। অপরাধীরা তার বিরুদ্ধে পোষ্টারিং করে লাগানো হয় সারা উপজেলায়। ব্যক্তিক, সামাজিক ও দুর্নীতিবাজদের আক্রোশের শিকার হতে হয়, অনেকের জীবনও চলে যায়, আবারও অনেকেই আহত হয়। সন্ত্রাসীরা সাংবাদিকদের খুন করে কখনও হুমকিও দেয়। রাজনীতিবিদ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, আমলারা সুযোগ পেলে সাংবাদিকদের নামে মামলা ঠুকে দেয়, বিভিন্ন সময় হয়রানি করে। আবার কথায় কথায় রাজপথে সাংবাদিক পেটায় । সাংবাদিকদের মূল্যায়ন সমাজ ও রাষ্ট্রে নেই বললেই চলে। আশা করা যায় এবার ন্যায় বিচার হবে। একজন সাংবাদিকের নিষ্ঠা, শ্রম, সততা ও জীবন-ঝুঁকি ঢাকা পড়ে যায়। কেউ দেখে না, শোনে না তাদের আজাহারি।

সাংবাদিকতা বিষয়ে দেশের অধিকাংশ মানুষেরই স্বচ্ছ ধারণা নেই। সংবাদপত্রকে কেউ কেউ ধর্মগ্রন্থের কাছাকাছি মনে করেন, সাংবাদিকতা কোনো পেশা নয়, চুক্তিভিত্তিক কোনো বাড়তি খন্ডকালীন কাজ- যার বিনিময়ে কেবল সামান্য কিছু সম্মানী জোটে, আর সাংবাদিক মানেই ধান্ধাবাজ, প্রতারক, ব্য্যাকমেইলার ও ভীতিকর কোনো প্রাণী- এমন ধারণাই পোষণ করেন দেশের কিছু মানুষ। তারা সময়ে-অসমে বিভিন্ন রং বদলায়। এমন ধরনের বদ্ধমূল ধারণা সৃষ্টি হওয়ার পেছনে ওই ত্রয়ী শব্দ যত না দায়ী তার চেয়ে বেশি দায়ী বর্তমান আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি এবং শিক্ষা ও সংস্কৃতি। আমাদের বড় ব্যর্থতা হচ্ছে সকল সাংবাদিকরা এক নয়। সাংবাদিকদের মধ্যে রয়েছে দন্দ। কাকে কিভাবে বিপদে ফেলানো যায় এমন চিন্তা অনেকের। কোন এক সাংবাদিক বিপদে পড়লে আরেকজন তাকে নিয়ে অপপ্রচার করে। এই হলো রং বদলানো সাংবাদিকতা। কোন সাংবাদিক যদি ভাল কাজ করে তাকে কিভাবে টেনে নিচে নামানো যায় এই চিন্তা অনেক সাংবাদিকদের। কাক কখনও কাকের মাংস খায় না। সংবাদপত্রের পাঠক কি এমনি এমনি বাড়বে? পৃথিবীতে এমনি এমনি কোনো কাজই হয় না। সংবাদপত্র শিল্পটি দেশের কোনো টাঁকশাল নয়, এ শিল্পের খুঁটিনাটি জানা যাবে না। পাঠক সকালবেলা একটি নতুন ঝকঝকে তকতকে পত্রিকা হাতে পায়- কিন্তু উৎপাদনের পেছনের ইতিহাস জানে না। এর সঙ্গে সারা দেশের শত শত মানুষের ঘাম-শ্রম ও জীবন-ঝুঁকি জড়িত। গভীর রাত পর্যন্ত ঘুমহীন কাজ করতে হয় সংবাদকর্মীদের।

 

অনেকটা নিশাচরের ভূমিকা তাদের। সাংবাদিকদের মাঠপর্যায়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে হয়। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ঝুঁকি আরও বেশি। ব্যক্তিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় আক্রোশের শিকার হতে হয়, অনেকের জীবনও চলে যায়। সন্ত্রাসীরা সাংবাদিকদের খুন করে। রাজনীতিবিদ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, আমলা সুযোগ পেলে সাংবাদিকদের নামে মামলা ঠুকে দেয়, হয়রানি করে। আবার কথায় কথায় রাজপথে সাংবাদিক পেটায়। সাংবাদিকদের মূল্যায়ন সমাজ ও রাষ্ট্রে নেই বললেই চলে। একজন সাংবাদিকের নিষ্ঠা, শ্রম, সততা, আদর্শবাদিতা ও জীবন-ঝুঁকি অবলীলায় ঢাকা পড়ে যায়। এ দেশে বরাবরই নানাভাবে হামলা মামলার শিকার হচ্ছেন গণমাধ্যম কর্মীরা। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কাউকে ছাড় না দিয়ে একজন সাংবাদিককে ঘুষ-দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে লিখতে হয়। আর তাতেই ক্ষেপে যান দুনীৃতিবাজ ও তাদের দালালরা। কখনো জীবন কেড়ে নেওয়া, কখনো শারীরিকভাবে হামলা, আবার প্রায়ই মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে সাংবাদিকদের। সাংবাদিকদের ওপর হামলা, মামলা, নির্যাতন, নিপীড়ন এখন শুধু রাজধানী ঢাকায় সীমাবদ্ধ নেই। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও কারণে-অকারণে সাংবাদিকদের ওপর হামলা করা হচ্ছে, সাংবাদিক খুন হচ্ছে। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার ঘটনা থেকে শুরু করে সাংবাদিক হত্যাকান্ডের একটি ঘটনার সঠিক বিচার হয়নি।

 

খবর সংগ্রহকারী সাংবাদিকরা নিজেরাই খবর হচ্ছেন। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৯৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ২২ বছরে বাংলাদেশে অন্তত ৫০ জন সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছেন। আর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন টেকনাফের বাসিন্দা সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তাফা। তাকে ঢাকা থেকে ধরে টেকনাফ থানায় খুনি ওসি প্রদীপ কুমার দাশ অমানষিক নির্যাতন চালিয়েছেন। আমি নিজে যত্রতত্র সাংবাদিক পরিচয় দিতে লজ্জিতবোধ করি। পেশাগত কাজে কিংবা নিতান্ত প্রয়োজনে যদি কোথাও এই পরিচয়টা দিই তখন মানুষ সম্মান করে। কিন্তু আমার ধারণা, ওই সম্মানটা ভেতর থেকে হয় না। আমি সাংবাদিক হলেও হয়তো ব্যতিক্রম কেউ, এই ধারণা আমি তাদের ভেতরে জন্মাতে ব্যর্থ হই।

 

তবুও আমি মনে করি, এই ব্যর্থতা আমার নিজের নয়, গোটা সাংবাদিক সমাজের। কারণ পেশাটাকে আমরা কেবল ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করছি এবং ওই ব্যর্থতার জায়গায় নিয়ে গেছি। যার কারণে পুলিশের পাশাপাশি এখন সাংবাদিকদের নামও উচ্চারিত হয়। পুলিশ কিংবা সাংবাদিকরাই (সবাই নয়) যে ওই দোষে দুষ্ট তা নয়, যে কোনো পেশার দিকে আপনি তাকাবেন প্রায় একই দোষের মানুষ পাবেন। ধরুন শিক্ষকতা পেশার কথা। শিক্ষকদের এক সময় আদর্শবান বলা হতো। কিন্তু এখন ওই অভিধায় তাদের আর অভিহিত করা হয় না। দেখা হয় না শ্রদ্ধার চোখেও। আদর্শের ওই জায়গা থেকে অনেক শিক্ষকই এখন সরে এসেছেন। শিক্ষকদের বিরুদ্ধে তহবিল তসরুফের অভিযোগ থেকে শুরু করে ছাত্রী ধর্ষণ, যৌন নিপীড়নসহ এন্তার অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে নকল পরিবেশন করারও। খোদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও ঠিকমতো ক্লাস না নিয়ে এনজিওর কনসালটেন্সি করেন, গোপনে পড়ান অন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও। সুতরাং নীতি-আদর্শের জায়গাটা সব পেশাতেই হয় খোয়া গিয়েছে, না হয় টলটলায়মান। বর্তমান সমাজ বাস্তবতায় নীতি-আদর্শে টিকে থাকা হচ্ছে চব্বিশ ঘণ্টা আগুনে হাত রাখার মতো।

 

লোভ-স্বার্থান্ধতা সবসময়ই আমাদের মধ্যে কাজ করে। তাই নীতি-আদর্শে টিকে থাকা খুবই কঠিন ব্যাপার। নীতি-আদর্শ ত্যাগ করার নাম আধুনিকতা কিংবা উত্তর-আধুনিকতা নয়। তাই শিক্ষক, সাংবাদিক, লেখক, বুদ্ধিজীবী, ডাক্তার, প্রকৌশলী, আইনজীবী কেউই নীতি-আদর্শে পুরোপুরি টিকে থাকতে পারেন না। সেক্ষেত্রে কেবল পুলিশ কিংবা সাংবাদিকের দোষ কী? ডাক্তার মিথ্যা সার্টিফিকেট দেন, সুযোগ বুঝে রোগীর শ্লীলতাহানি ঘটান, ভুল চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীর মৃত্যুও ঘটান। কি খেলাধুলা, কি শিল্প-সাহিত্য, কি ব্যবসা-বাণিজ্য, কি চিকিৎসা যে কোনো একটি সেক্টরের দিকে তাকালেই বাংলাদেশের প্রকৃত চিত্র বোঝা যায়। আমরা কোনো কাজই মনোযোগ দিয়ে নিষ্ঠার সঙ্গে করি না।

 

করলেও সততার চেয়ে দুর্নীতি ও ফাঁকিই সেখানে প্রাধান্য পায়। এর জন্য মূলত রাজনৈতিক দলগুলোই দায়ী। তারা সবাই মিলে দেশ ঠিক করলে দেশের প্রতিটি সেক্টরের এমন করুণদশা হতো না। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নই দেশকে এমন অস্থিতিশীল, আদর্শহীন, দুর্নীতিপ্রবণ জায়গায় দাঁড় করিয়েছে। তাই বাংলাদেশ পরপর পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্বের শীর্ষে অবস্থান করে। যদিও বর্তমানে দুর্নীতির সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ভালো। পুলিশ দুই টাকা, একটি সিগারেট অথবা এক খিলি পান পর্যন্ত ঘুষ খায় এমন অপপ্রচার সামাজিক যোযাযোগ মাধ্যমে দেখা যায়। সাংবাদিকরা অবলীলায় তার আদর্শের জায়গা থেকে সরে যায়, আর শিক্ষক, বিচারকরাও অভিযুক্ত হন ঘুষ-দুর্নীতিতে। এই দেশ, দেশের মানুষ একদিন ঠিক হবে। সাংবাদিকদের দুর্নাম কুড়াতে হবে না, বাংলাদেশেও সাংবাদিকতা শ্রেষ্ঠ পেশা হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। সৎ, মেধাবী, যোগ্য, তথ্যপ্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ উচ্চশিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা এখন সংবাদপত্রে ঢুকছে। পরিস্থিতি একদিন পাল্টাবেই। তখন বাংলাদেশে বসে আমিই মার্কেসের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলব, সাংবাদিকতাই হচ্ছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পেশা। আমরা নিঃস্বের কাতারে নেই, আমরাই শ্রেষ্ঠ।

লেখক :
মোঃ খায়রুল আলম রফিক
সভাপতি, বাংবাদেশ অনলাইন সংবাদপত্র সম্পাদক পরিষদ (বনেক),কেন্দ্রীয় কমিটি।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |