শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:২৭ অপরাহ্ন

সাংবাদিকতায় ডিগ্রি-দক্ষতা দুটোই জরুরি

সাংবাদিকতায় ডিগ্রি-দক্ষতা দুটোই জরুরি

সাঈদুর রহমান রিমন: সাংবাদিকতায় ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা ডিগ্রি পাস নির্ধারণ করাটা সময়ের দাবি। সব সেক্টর উচ্চতর শিক্ষা, দক্ষতা আর পেশা সংশ্লিষ্ট নানা প্রশিক্ষণে দিন দিন এগিয়ে চলছে অথচ সাংবাদিকতা কেন মান্ধাতা আমল আঁকড়ে থাকবে? তবে শিক্ষার সঙ্গে বিশেষ দক্ষতা, মানবিক গুণাবলী আর কৌশলগত দীক্ষা গ্রহণের বিষয়াদি নিশ্চিত করা জরুরি, জরুরি দক্ষতা ভিত্তিক সনদ প্রথারও।

গুগল নিউজে ফলো করুন আরটিভি অনলাইন
যেহেতু সাংবাদিকতা আর দশটি সাধারণ পেশার মত নয়। তুলনা- মূলক অনেক বেশি দায়বোধ ও কঠিন দায়িত্বশীলতার পেশা। তাদের ভূমিকার প্রভাব পড়ে দেশ, জাতি, সমাজ তথা সকল ক্ষেত্রে। পদে পদে আছে সংবেদনশীলতা। সমাজ ও রাষ্ট্রের অনেকে যা খুশি বলতে পারেন, যা খুশি করে ফেলেন। কিন্তু একজন সাংবাদিককে সেসব ব্যাপারে অনেক হিসেব করে কলম ধরতে হয়। তার লেখা প্রতিটি শব্দ, বাক্যের যুৎসই ব্যাখ্যা থাকতে হয়, ভাবতে হয় আগামীর কথাও। সংবাদের ইতিবাচক নেতিবাচক বিষয় নিয়ে আগাম ভাবতে হয় সাংবাদিককে।

দেশ, জাতি, সমাজের বৃহত্তর স্বার্থে অনেক সত্য খবর এড়িয়ে যাওয়াও সাংবাদিকের সর্বোত্তম বিবেকবোধের পরিচয় হয়ে ওঠে। মসজিদ ভেঙে ফেলার, মন্দির জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার খবরে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে, তাই সাংবাদিককে সতর্ক, কৌশলী ভূমিকা নিতে হয়। সেখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় কি, কেমনভাবে লিখতে হয় সে যোগ্যতা অর্জন করা অত্যাবশ্যক। রাষ্ট্রের স্বাধীন, সার্বভৌম, অখন্ডতা বিরোধী সংবাদ, নিবন্ধ, সম্পাদকীয়, মতামত-কোনো কিছু প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রকাশ/ প্রচার করা যাবেই না।

একজন সাংবাদিক নিজে আইনবিদ না হয়েও এসব স্পর্শকাতর বিষয়ে সম্যক জ্ঞান রাখবেন, স্পষ্টভাবে জানবেন, বুঝবেন। সর্বোপরি একজন সাংবাদিককে মানবিক ও সুবিবেচক হওয়াটাও জরুরি।

সাংবাদিকতা হচ্ছে সবচেয়ে সচেতন, বিচক্ষণ, মেধাবী মানুষের পেশা। সকল ক্ষেত্রেই তার গঠনমূলক চিন্তা চেতনা থাকতে হবে। কোনো বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার নেই, কিন্তু সব বিষয়ে মার্জিন ধারণা থাকা আবশ্যক। তাকে সবজান্তা হতে হবে না। এ কারণে একজন সাংবাদিক প্রতিদিনই কমবেশি ভুল করতে পারেন। তাই বলে এক ভুল দ্বিতীয়বার করার কোনো সুযোগ নেই তার।

সাংবাদিকতায় দায়বোধ, সুবিবেচনা ও দায়িত্বশীলতার মূল্য সবচেয়ে বেশি। প্রতিটি বিষয়বস্তু, ব্যবহৃত শব্দ, বাক্যের ব্যাখ্যা থাকতে হবে। সাংবাদিকতায় নিজের কাছে হলেও নিজের জবাবদিহিতা থাকা বাঞ্ছনীয়। এটা পেশাদারিত্বের অন্যতম অংশ। অনেকেই আবার পেশাদারিত্ব বলতে কেবলই বেতন ভাতা, সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তি বলে ভাবেন। অথচ পেশাদারিত্ব যে দায়িত্ববোধ, কর্তব্য কাজের অঙ্গীকার, সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার শপথ সেগুলো বেমালুম ভুলে যান।

শিক্ষিত শ্রেণি সাংবাদিকতায় যুক্ত হলে আমূল বদলে যাওয়ার আশা নিয়ে কিংবা অশিক্ষিত শ্রেণিকে সাংবাদিকতায় উৎসাহী করতে এ লেখা নয়। সাংবাদিক হতে হলে শিক্ষিত তাকে হতেই হবে, আর পেশাগত কাজে পা ফেলতেই লাগবে দক্ষতা। গণমাধ্যমের ফিল্ডওয়ার্ক কিংবা টেবিল ওয়ার্ক-সর্বত্রই দায়বদ্ধতাপূর্ণ দক্ষতার বিকল্প নেই।

প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষায় অনেক বড় ডিগ্রি না থাকলেও দক্ষজনরা গণমাধ্যমে ঈর্ষণীয় নানা ভূমিকা পালন করে আসছেন, করছেনও। তারা বিশেষ মেধাবী শ্রেণির, অসীম শ্রদ্ধা তাদের প্রতি। তবে ব্যতিক্রম মেধাবীদের এ উদাহরণকে পুঁজি করে গত দুই দশকে যে হারে গণ্ডমূর্খরা দলে দলে সাংবাদিকতায় ঢুকেছে—তাতে পেশার বারোটা বেজে গেছে অনেক আগেই। সাংবাদিকতায় মূর্খদের কতটা দাপুটে বিচরণ ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে তা আশপাশে তাকালেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। অল্প শিক্ষিতদের মডেল বানিয়ে মাঝে স্বশিক্ষিতদের (নিজের নাম ঠিকানা লেখার যোগ্যতা সম্পন্ন) অনুপ্রবেশ ঘটতো, ইদানিং আগমন ঘটেছে নিরক্ষরদেরও। এর বিপরীতে শুধু টাকা কামানো চাকরির ধান্দায় আসা দায়বোধহীন শিক্ষিত শ্রেণির দ্বারাও সাংবাদিকতার অন্তহীন ক্ষতি হয়েছে। মনে রাখা উচিত স্বল্প শিক্ষিত কিংবা ভুয়ারা কখনই ইয়েলো জার্নালিজমের জন্ম দিতে পারে না। বিদ্যা-বুদ্ধির মারপ্যাঁচে নির্দিষ্ট শ্রেণিই নানা যুক্তির কুটকৌশলে ঘটনা বদলে দেন, খবর পাল্টে দেন, জন্ম দেন অপসাংবাদিকতার। এসব ভাবনায় দুটি শ্রেণিই গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতার ধ্বংসযজ্ঞে দায়ী।

তারপরও শিক্ষিত শ্রেণিকেই এগিয়ে আসতে হবে, পেশাটির জন্যও গড়ে তুলতে হবে দক্ষতা অর্জনের কাঠামো। আইন বিভাগ থেকে পাশ করেই কিন্তু আদালতে মামলা পরিচালনার সুযোগ মেলে না। প্রার্থীকে বার কাউন্সিল থেকে আলাদা সনদ অর্জন করতে হয়। একইভাবে এমবিবিএস, এফআরসিএস কিংবা আরও উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েও চিকিৎসকের দায়িত্ব পালন করতে বিএমডিসির অনুমোদন লাগে। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও ডিগ্রির সঙ্গে দক্ষতা অর্জনের সনদ প্রথা নিশ্চিত হোক। সে সনদ যেন দক্ষ বানিয়ে তবেই দেওয়া হয়।

(লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক)

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |