বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:২৮ অপরাহ্ন

সীমান্ত আইন লংঘন করে মিয়ানমারের হেলিকপ্টার, জনমনে আতঙ্ক

সীমান্ত আইন লংঘন করে মিয়ানমারের হেলিকপ্টার, জনমনে আতঙ্ক

মিয়ানমার সামরিক জান্তা আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন ও মানবাধিকার লংঘন করে বাংলাদেশ সীমান্তের অভ্যন্তরে সামরিক হেলিকপ্টার গানশিপ থেকে গোলাবারুদ নিক্ষেপের ঘটনা ঘটিয়েছে মিয়ানমার। মিয়ানমারের এধরনের উস্কানিমূলক আচরণে বাংলাদেশের তুমব্রু এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, গত ৩১ আগষ্ট রাখাইনের সশস্ত্র বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মি (এএ) মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) একটি বিওপি দখল করে নেয়। ঐদিন দিনভর মিয়ানমার আর্মি ও বিজিপির সঙ্গে এএ এর তুমুল লড়াইয়ে পর সন্ধ্যার দিকে মাই তাই বিওপির দখল নেয় বিদ্রোহী বাহিনী। এঘটনায় ১৯ জন সরকারী বাহিনীর সদস্য নিহত ও ৬ জনকে বন্দী পূর্বক বিপুল পরিমাণের অস্ত্র গোলাবারুদ জব্দের কথা জানায় এএ। আক্রান্ত বিওপিটি বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্তের ৪০নং পিলারের বিপরীতে বলে জানা গেছে।

১ সেপ্টম্বর মিয়ানমার সামরিক কাউন্সিলের নিয়ন্ত্রিত মিয়ানমার নিউ লাইট পত্রিকা আরাকান আর্মি (এএ) দ্বারা অধিকৃত উত্তর মংডুর মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে মাইল ৪০ এর কাছে সীমান্তরক্ষী পুলিশ স্টেশনটি পুনরুদ্ধারে নিরাপত্তা বাহিনীর শক্তি বৃদ্ধিসহ প্রয়োজনীয় সবধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানায়। মূলত মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর সেই সংকল্পের অংশ হিসেবে গতকাল শনিবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৯ টা সন্ধ্যা পর্যন্ত এএ বিদ্রোহী বাহিনীকে লক্ষ্য করে আকাশপথে আক্রমণের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় বলে একাধিক সূত্রে জানা যায়।

সূত্র মতে, গতকাল সকাল সাড়ে ৯ টা দিকে সীমান্তের ৩৮-৪০ নং বিপি (বর্ডার পিলার) অংশে ৩ টি সামরিক হেলিকপ্টার থেকে গানশিপ নিক্ষেপ করা হয়। এসময় দুটো গোলা বিপি ৩৯ ও ৪০ এর মাঝামাঝি বাংলাদেশের চালিদং অংশের নো ম্যান্স ল্যান্ডের গহীন পাহাড়ি এলাকায় বিস্ফোরিত হয় বলে স্হানীয় লোকজন জানান।

গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মিয়ানমার সামরিক বাহিনী ৩ টি হেলিকপ্টার নিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে উল্লেখিত অংশে হামলা চালায়। এসময় সামরিক হেলিকপ্টারগুলোর নিরাপত্তায় অদূরে দুটো সামরিক জেট প্লেন প্রহরায় ছিল বলেও জানা গেছে। তবে সীমান্তের ঐ এলাকার নিরাপত্তায় নিয়োজিত বিজিবি কক্সবাজার -৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মোঃ মেহেদী হোসাইন কবির এর সাথে একাধিকবার চেষ্টা করেও বিষয়টি সম্পর্কে জানা সম্ভব হয়নি।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তের গ্রাম ডাক্তার খাইরুল বশর সহ অনেকে জানান, আমরা প্রতিনিয়ত প্রচন্ড নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। গত প্রায় এক মাস ধরে সীমান্ত জুড়ে ভারী অস্ত্রের বিস্ফোরণের বিকট শব্দে সাধারণ মানুষরা বটে ঘরের মহিলা ও শিশুরা চরম আতঙ্কে দিনাতিপাত করছে। সীমান্ত এলাকার অনেকে একটু দূরে আত্মীয় স্বজনের বাড়ীতে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছে।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজা মিয়া জানান, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু এরপরও মিয়ানমার যা করছে তা মানবাধিকার লংঘন। তাদের বিদ্রোহীদের কিভাবে মোকাবিলা করবে সেটা তাদের ব্যাপার। তবে সেক্ষেত্রে মিয়ানমার আন্তর্জাতিক ও দু-দেশের মধ্যকার বিদ্যমান সীমান্ত আইন লংঘনের সামিল। এতে সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের প্রতিনিয়ত আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে।

সীমান্তের ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, পুরো ঘুমধুম ইউনিয়নের সীমান্ত জুড়ে বেশ কিছুদিন ধরে মিয়ানমার অংশে এধরনের হালকা থেকে ভারী গোলাগুলির শব্দ শুনা যাচ্ছে। অনেক সময় আমাদের অংশের ভূমিও প্রকম্পিত হয়। বিশেষ করে গতকাল সীমান্তের খুব কাছ দিয়ে হেলিকপ্টার হতে গোলাবর্ষণের খবর পাওয়া গেছে। এর আগে গত ২৮ আগস্ট মিয়ানমারের নিক্ষিপ্ত দুটো মর্টার শেল তুমব্রু উত্তর পাড়া মসজিদের পাশে পড়ে। ভাগ্যিস এগুলো অবিস্ফোরিত ছিল।

তিনি জানান, স্বভাবতই এধরনের পরিস্থিতিতে যে কোন মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করে। বিষয়টি নিয়ে বিজিবির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে। সীমান্ত এলাকায় আগের চেয়ে অনেক শক্তি, জনবল বৃদ্ধি করে নিরাপত্তা জোরদার করার কথা জানান তিনি।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |