মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:১৯ পূর্বাহ্ন

আপডেট
দেবীগঞ্জে গনঅধিকার পরিষদের কর্মীসভা অনুষ্ঠিত ফ্যাসিবাদের পুনর্জীবন ঘটলে দায় অন্তর্বর্তী সরকারকে নিতে হবে: সাভারে রিজভী  কুলিয়ারচরে প্রধান শিক্ষকের সাথে বেতন বৈষম্য সহকারী শিক্ষকদের ক্লাস বর্জন সৌমিত্র শেখরের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে দুদকের চিঠি মুরাদনগরে উপজেলায় জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধে বিনামূল্যে কিশোরীদের এইচপিভি টিকা প্রদান গোপালপুরে ১৪’শ পিস ইয়াবাসহ দুই মাদক ব্যবসায়ী আটক ময়মনসিংহে বিভাগীয় উন্নয়ন সমন্বয় সভা নালিতাবাড়ীতে গারো পাহাড়ের ঢাল থেকে যুবকের মরদেহ উদ্ধার ঠাকুরগাঁওয়ে ইউপি সদস্যদের অপসারণ না করার দাবিতে মানববন্ধন ও র‍্যালি স্ত্রীর ভাইয়ের মেয়েকে বিয়ে করা হারুন মেম্বার গ্রেপ্তার
মিরসরাইয়ে ড্রেজার ডুবি: ১ শ্রমিকের লাশ উদ্ধার, নিখোঁজ ৭

মিরসরাইয়ে ড্রেজার ডুবি: ১ শ্রমিকের লাশ উদ্ধার, নিখোঁজ ৭

বঙ্গোপসাগরের মিরসরাই উপকূলে বালু তোলার ড্রেজার ডুবে ৮ শ্রমিক নিখোঁজের ঘটনায় মঙ্গলবার রাত পৌনে ৯ টার দিকে এক শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করেছে ডুবুরি দল। তার নাম জাহিদুল ফকির (২২)। সে পটুয়াখালী জেলার পটুয়াখালী সদর উপজেলার ৬ নং জৈনকাঠী ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের জৈনকাঠী গ্রামের মোল্লা বাড়ীর লোকমান ফকিরের ছেলে।

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সোমবার রাত ৮ টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের বসুন্ধরা গ্রুপের ৩ নম্বর জেটি এলাকায় ড্রেজার ডুবির ঘটনা ঘটে। নিখোঁজ শ্রমিকরা হলো আনিস মোল্লার দুই ছেলে শাহীন মোল্লা (৩৮) ও ড্রেজার চালক ইমাম মোল্লা (২৫), আব্দুল হক মোল্লার ছেলে মাহমুদ মোল্লা (২৬), মোকুমদার হাওলাদারের ছেলে আল আমিন হাওলাদার (২৫), ইউসুফ আলী হাওলাদারের ছেলে বশর হাওলাদার (৩৫), নুর সরকারের ছেলে আলম সরকার (৩৮), রহমান খানের ছেলে তারেক মোল্লা (২০)। নিখোঁজরা সবাই পটুয়াখালী জেলার পটুয়াখালী সদর উপজেলার ৬ নং জৈনকাঠী ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের জৈনকাঠী গ্রামের মোল্লা বাড়ীর বাসিন্দা। নিখোঁজ ৭ শ্রমিকের সন্ধানে উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের ডুবুরি দল।

জানা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের বসুন্ধরা এলাকায় বেড়িবাঁধ থেকে ৫০০ ফুট দূরত্বে বঙ্গোপসাগরে সৈকত এন্টারপ্রাইজ নামেরঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বালু উত্তোলনের ড্রেজার মেশিন সৈকত-২।

সোমবার রাত ৮ টার দিকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে সাগর উত্তাল থাকায় ডুবে যায়। বালু উত্তোলন কাজে নিয়োজিত এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে বালু সরবরাহের কাছ করছিল। শ্রমিক নিখোঁজের ঘটনায় মঙ্গলবার বেলা ২ টায় চট্টগ্রাম শহর থেকে আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের ৬ সদস্যের ডুবুরি দল উদ্ধার অভিযান শুরু করেন।

ড্রেজার থেকে বেঁচে ফেরা শ্রমিক আব্দুস সালাম বলেন, ‘ড্রেজারেআমিসহ ৯ জন শ্রমিক ছিলাম। দুর্যোগের কথা শুনে সন্ধ্যা ৭ টার দিকে আমি ড্রেজার থেকে নেমে নিরাপদ স্থানে চলে আসি। বাকিরা ড্রেজারেই অবস্থান করছিলেন। ড্রেজারটির মালিক সৈকত এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে নিয়োগ দিয়েছে বেপজা।’

ড্রেজার মেশিন সৈকত-২ এর ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম জানান, ঘটনাস্থলে আশেপাশে আরো ৬ টি ড্রেজার রাখা ছিল। সতর্কতা সংকেত পেয়ে অপরাপর সকল শ্রমিক নিরাপদ স্থানে চলে গেলেও সমুদ্রে ঢেউ বেশী থাকায় আমাদের শ্রমিকদের আনার জন্য নৌকা ড্রেজারের কাছে যেতে পারেনি। শ্রমিকদের উদ্ধারের জন্য ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

নিখোঁজ শাহিন মোল্লা ও ইমাম মোল্লার মেঝ ভাই এনায়েত উল্ল্যাহ বলেন, সোমবার রাত ৮ টা থেকে আমার আপন দুই ভাই ও অপর চাচাতো- জেঠাতো ৬ ভাইসহ ৮ জন বালু উত্তোলনের ড্রেজারে সাগরে আটকা পড়ে। রাতে বিষয়টি শুনার পর তাৎক্ষণিক রওনা দিয়ে সকাল ১০ টায় ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা চোখে পড়েনি দেখে আমরা হতাশ হয়েছি। উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুপুর ২ টার দিকে। আমি মনে করছি এখানে প্রশাসনের গাফিলতি রয়েছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘ঘটনার পর ড্রেজার সেকত-২-এর মালিক গাফফারকে রাতে ফোন দিলে তিনি বলেন, আমি অসুস্থ্য হাসপাতালে। তুমি যাও, আমি সকালে আসবো। সকালে এসে তাকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। এরপর তিনি তার ম্যানেজারকে বলেন, যে করে হোক লাশগুলো ড্রেজার থেকে বের করে পেট কেটে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করো।’

ডুবে যাওয়া ড্রেজারে থাকা শ্রমিকদের স্বজন খায়রুল ইসলাম ও জহুরুল ইসলাম জানান, ১ মাস আসে নিখোঁজ হওয়া ৮ শ্রমিক ওই ড্রেজারে বালু সরবরাহের কাজে যোগ দেয়। তারা সবাই এক বাড়ির ৭ পরিবারের বাসিন্দা। বালু সরবরাহের কাজ শেষ না হওয়ায় আবহাওয়া খারাফের মধ্যেও ড্রেজারে থেকে যায়। ওই ড্রেজারেই তাদের থাকা ও খাওয়া সবকিছু করতো। ড্রেজারটি বঙ্গোপসাগর উপকূলে বাঁধা থাকলেও সাগর উত্তাল থাকায় ডুবে যায়।

মিরসরাই ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড ডিফেন্স স্টেশন কর্মকর্তা ইমাম হোসেন পাটোয়ারি বলেন, ‘দুপুর ২ টা থেকে চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের একটি ডুবুরি দল উদ্ধার কাজ শুরু করেছে। উদ্ধার কাজের শুরুতে সাগরে জোয়ার থাকায় এবং ড্রেজার পানির নিচে থাকায় উদ্ধার তৎপরতা চালাতে সমস্যায় পড়তে হয়। রাত পৌনে ৯ টার দিকে এক শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করা হয়। বাকিদের সন্ধানে উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স-৩ এর উপ-সহকারি পরিচালক আব্দুল্ল্যাহ হারুন পাশা বলেন, ‘আমরা দুপুর ২ টা থেকে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করি। প্রথম অবস্থায় জোয়ার থাকার কারণে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা একটু কষ্টকর হয়ে পড়ে। ডুবে যাওয়া ড্রেজারের মধ্যে ৪ টি কমপার্টমেন্ট রয়েছে। আমাদের ডুবরিরা ১ টা কমপার্টমেন্টে ঢুকতে পারলেও বাকি ৩ টাতে রাত ৮ টা পর্যন্ত ঢুকতে পারেনি। কমপার্টমেন্টগুলো বেশি কনজাস্টেড হওয়ায় ডুবুরিদের সাথে যে সিলিন্ডার আছে তা নিয়ে ভেতরে ঢুকতে পারছে না। এখন সি ট্রাক দিয়ে ড্রেজারটিকে উপকূলে টেনে নিয়ে আসতে পারলে লাশ থাকলে সেগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হবে। আমাদের উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

মিরসরাই থানার অফিসার ইনচার্জ কবির হোসেন বলেন, সাগরে ড্রেজারসহ ৮ শ্রমিক নিখোঁজের খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। সংশ্লিষ্ট কোস্ট গার্ড কমান্ডারকে বিষয়টি মোবাইলে অবগত করেও তাদের কোন সহযোগিতা পাওয়া যায়নি।

মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিনহাজুর রহমান বলেন, ‘খারাপ আবহাওয়া দেখে নিখোঁজ ৮ শ্রমিককে ওই ড্রেজার থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসতে ৩ দফায় সেখানে বোট নিয়ে লোক যায়। কিন্তু তারা উপকূলে নিরাপদ আশ্রয়ে আসতে অসম্মতি জানায়। তারা বলেন, এটি নতুন ড্রেজার, এটি ডুববে না।

নিখোঁজ স্বজনদের তথ্যমতেসকালে তারা ওই ড্রেজারে মৃতদেহ দেখতে পায়। এরপর আমরা ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন দপ্তরে খবরটা পৌঁছাই। সকালে উদ্ধার তৎপরতা চালাতে মিরসরাই ফায়ার সার্র্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের টিম ব্যর্থ হলে পরবর্তীতে চট্টগ্রাম থেকে ডুবুরি দল এসে দুপুর ২ টা থেকে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। ডুবে যাওয়া ড্রেজারটিকে টেনে তুলে কূলে এনে উদ্ধার তৎপরতা চালানোর চেষ্টা চলছে।’

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |