শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৫৭ পূর্বাহ্ন

আপডেট
বিশ্ব নার্স দিবস শহরের তুলনায় গ্রামে নার্সসংকট বেশি

বিশ্ব নার্স দিবস শহরের তুলনায় গ্রামে নার্সসংকট বেশি

নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বাস্থ্যসেবা একটি দলগত প্রচেষ্টা। এই দলের প্রধান চিকিৎসক এবং দ্বিতীয় ব্যক্তি নার্স। একজন চিকিৎসক রোগের ধরন বুঝে চিকিৎসা কী হবে, তা নির্ধারণ করেন। এরপর রোগীর সুস্থতায় ওষুধ দেওয়া থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সব কাজ করেন নার্সরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা অনুযায়ী, যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে একজন চিকিৎসকের বিপরীতে তিনজন নার্স থাকতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশে একজন চিকিৎসকের জন্য নার্স একজনেরও কম। অন্যদিকে দেশের শহরাঞ্চলে প্রতি ১০ হাজার মানুষের জন্য ৫.৮ জন নার্স থাকলেও গ্রামাঞ্চলে তা রয়েছে মাত্র ০.৮ জন।

অর্থাৎ শহরের তুলনায় গ্রামে নার্সসংকট সাত গুণের বেশি। এমন পরিস্থিতির মধ্যে আজ রবিবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব নার্স দিবস। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে। ১৮২০ সালের ১২ মে ইতালির অভিজাত এক পরিবারে জন্ম নিয়েছিলেন আধুনিক নার্সিং পেশার রূপকার ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল। তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ১২ মে আন্তর্জাতিক নার্স দিবস পালিত হয়। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘আমাদের নার্স, আমাদের ভবিষ্যৎ, অর্থনৈতিক শক্তি নার্সিং সেবার ভিত্তি’।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) মানদণ্ড অনুযায়ী, প্রতি ১০ হাজার জনসংখ্যার বিপরীতে ২৩ জন নার্স থাকার কথা। সে হিসাবে বাংলাদেশে নার্স প্রয়োজন তিন লাখ ৯১ হাজার।নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, নিবন্ধিত নার্স আছেন ৯৫ হাজার। অর্থাৎ প্রয়োজনের তুলনায় মাত্র ২৪ শতাংশ নার্স আছেন। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চিকিৎসক ও নার্সের একটি অনুপাত করে দিয়েছে। সেটি না হলে কোনো সময়ে প্রত্যাশিত সেবা হবে না। আমাদের পর্যাপ্ত নার্স না থাকায় দায়িত্ব বুঝে নেওয়া এবং দায়িত্ব বুঝে পাওয়ার মধ্যে সময় চলে যায়। ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেন না। এর উন্নতি হওয়া দরকার।তিনি বলেন, শহর ও গ্রামে আনুপাতিক হারে নার্স বাড়তে হবে। এটা করা না গেলে স্বাস্থ্য খাতে যতই বিনিয়োগ করা হোক, কোনো কাজে আসবে না।

ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) সেবা তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কর্মরত সাবিত্রী রানী। চাকরির ৩৪ বছরে তাঁর একটি পদোন্নতি হয়েছে। সিনিয়র নার্স থেকে হয়েছেন সেবা তত্ত্বাবধায়ক। তবে বেতন একই রয়ে গেছে।সাবিত্রী রানী বলেন, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ব্যাপক ঘাটতি নিয়ে তৈরি হচ্ছে নতুন নার্স। এ ছাড়া নার্সসংকটের কারণে দিনে কয়েক ঘণ্টা বেশি কাজ করতে হচ্ছে।বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খান মো. গোলাম মোরশেদ বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তরে যাঁরা আছেন, তাঁরা প্রশাসন ক্যাডার। আমাদের দীর্ঘ দিনের দাবি, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর পরিচালনায় নার্সদের রাখা হোক। বদলির প্রক্রিয়া সহজ করা হোক। এ ছাড়া দ্রুত সব ধরনের সংযুক্তি বাতিল করে সিনিয়র স্টাফ নার্সদের মূল কর্মস্থল হাসপাতালে রোগীর সেবায় সম্কৃক্ত করা হোক।

কিন্তু এ দাবি কেউ শুনছে না। নার্সদের অধিকার রক্ষায় গঠিত সংগঠন সোসাইটি ফর নার্স সেফটি অ্যান্ড রাইটসের মহাসচিব সাব্বির মাহমুদ তিহান বলেন, একজন নার্স অসুস্থ মানুষকে সুস্থ করার মধ্য দিয়ে পরোক্ষভাবে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছেন। কিন্তু নার্সদের দক্ষতা ও মানোন্নয়নে সরকারের বাজেট তেমন নেই, যে কারণে আমাদের দাবিগুলো পূরণ হচ্ছে না। এ ছাড়া স্বাস্থ্যব্যবস্থা শহরকেন্দ্রিক হওয়ায় বেশির ভাগ নার্স শহরে থাকছেন। তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালে একজন নার্সের বেতন স্কেল যা ছিল, বর্তমানে ২০২৪ সালে এসেও একই রয়ে গেছে। অথচ এই সময়ে দব্যমূল্য বেড়েছে কয়েক দফা। আশা করব, বাজেট বাড়ানোর পাশাপাশি সরকার আমাদের দাবিগুলো দেখবে।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |