বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২০ অপরাহ্ন

আপডেট
একাত্তরের ভুল প্রমাণিত হলে জাতির কাছে ক্ষমা চাইব: জামায়াত আমির রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের বিধান থাকছে না সংসদ ও স্থানীয় নির্বাচনে একবারে ভোটগ্রহণের প্রস্তাব সাবেক সিইসি রউফের দুর্যোগে সশস্ত্র বাহিনী দুর্গত জনগণের শেষ ভরসার স্থান জাতি গঠনমূলক কাজে সশস্ত্র বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে শিখা অনির্বাণে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা ঢাকার সড়কে অটোরিকশা চালকরা, বন্ধ যান চলাচল জেনারেল ওয়াকারের সঠিক সিদ্ধান্তে সশস্ত্র বাহিনী আবারও আস্থার প্রতীক ময়মনসিংহে ট্যুরিস্ট পুলিশের “National Integrity Strategies” বিষয়ক কোর্স এর সমাপনী অনুষ্ঠানে রেঞ্জ ডিআইজি বিভাগের শিক্ষার্থীদের ১১ দফা: জাবি ক্যাম্পাসে মোটরচালিত যানবাহন বন্ধ
ডা. সাবিরা হত্যা মামলার তিন বছরেও মেলেনি খুনির পরিচয়

ডা. সাবিরা হত্যা মামলার তিন বছরেও মেলেনি খুনির পরিচয়

ফয়সাল হাওলাদার :

ফয়সাল হাওলাদার : তিন বছর আগে রাজধানীর কলাবাগানের একটি বাসা থেকে গ্রিন লাইফ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক সাবিরা রহমান লিপির রক্তাক্ত ও দগ্ধ মরদেহ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। প্রথম দিকে এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত পুলিশ করলেও পরবর্তী সময়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে তদন্তভার দেওয়া হয়। কিন্তু ঘটনার তিন বছরেও রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি পিবিআই।

পিবিআই বলছে, ডা. সাবিরা হত্যা মামলার তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। তবে এ ঘটনায় নিহতের দ্বিতীয় স্বামী এ কে এম শামসুদ্দিন আজাদকে সামনে রেখে তদন্ত অনেক দূর এগিয়েছে। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে মিলেছে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃক্তার অনেক তথ্য পাওয়া যাওয়া গেছে। আরও কিছু তথ্য পেলে এ তদন্ত শেষ করা যাবে। প্রয়োজনে আবারও শামসুদ্দিনকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।

নিহত ডা. সাবিরা রহমান লিপি গ্রিন লাইফ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কনসালটেন্ট (সনোলজিস্ট) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কলাবাগানের প্রথম লেনের ৫০/১ তারেস ডি ক্যাসল অ্যাপার্টমেন্টের তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে তিনি একাই থাকতেন। ২০২১ সালের ৩১ মে সকালে ওই ফ্ল্যাট থেকে সাবিরার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তার বুক থেকে পা পর্যন্ত দগ্ধ ছিল। এছাড়া তার গলায় একটি ও পিঠে দুটি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিল। ওই ঘটনায় সাবিরার মামাতো ভাই মো. রেজাউল হাসান মজুমদার বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

সাবিরা যে ফ্ল্যাটে থাকতেন, সেখানে তিনটি কক্ষ ছিল। একটিতে সাবিরা, বাকি দুটিতে দুই তরুণী সাবলেট থাকতেন। এর মধ্যে কানিজ সুবর্ণা মডেলিং করতেন। নূরজাহান নামে আরেক তরুণী সাবিরাকে কোরআন শরিফ পড়াতেন। ওই বছরের ঈদুল ফিতরের আগে বাড়িতে গিয়ে নূরজাহান আর ফিরে আসেননি।

মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ডা. সাবিরা রহমান দুটি বিয়ে করেছিলেন। তার প্রথম স্বামী চিকিৎসক ছিলেন। তিনি ২০০৬ সালে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। পরে সাবিরা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। তার দ্বিতীয় স্বামী এ কে এম শামসুদ্দিন আজাদ ন্যাশনাল ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে অবসরে যান। তবে শামসুদ্দিনের আগের দুটি বিয়ে ছিল। একটি বিয়ের তথ্য গোপন করেছেন তিনি। এ নিয়ে তার সঙ্গে বনিবনা ছিল না সাবিরার। তাই বিয়ের পর থেকে সাবিরা পৃথক থাকতে শুরু করেন। তার আগের স্বামীর ঘরের ছেলেটি বিবিএ-তে অধ্যয়নরত। দ্বিতীয় স্বামীর ঘরে ৯ বছরের মেয়েকে নিয়ে কলাবাগানের ভাড়া করা ফ্ল্যাটে থাকতেন সাবিরা। ঘটনার আগের রাতে মেয়েকে গ্রিন রোডে মায়ের বাসায় রেখে এসেছিলেন তিনি। ঘটনার দিন রাতে বাসায় একাই ছিলেন সাবিরা।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, খুনি নিহত সাবিরার কাছের কেউ। কেননা, সাবিরার বাসায় ঢুকে তাকে খুন করে দরজা অটোলক করে পালিয়ে যায়। তাকে হত্যা করে বিছানার তোষক দিয়ে লাশ চাপা দেয় এবং তোষকে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে সাবিরাকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে আঘাতের কারণে মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক, গৃহকর্মী, অন্য ভাড়াটে ও পাশের কক্ষের বাসিন্দাসহ তার সহকর্মী-স্বজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই ঢাকা মেট্রো উত্তরের পরিদর্শক জুয়েল দেওয়ান বলেন, ‘এই হত্যার এখনও প্রকৃত কারণ বের করা
সম্ভব হয়নি। ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত সন্দেহ অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে নিহতের স্বামী এ কে এম শামসুদ্দিনকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। তার কাছ থেকে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।’

তদন্ত কর্মকর্তা আরও বলেন, বিয়ের পর থেকে শামসুদ্দিনের সঙ্গে সাবিরার সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। তবে সাবিরার ভাড়া বাসায় তার যাতায়াত ছিল। লাশ উদ্ধারের পর পুলিশের কাছে শামসুদ্দিন জানিয়েছিলেন যে, তার স্ত্রীর সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই। পরে সাবিরার মোবাইল ফোনের কললিস্ট চেক করে পুলিশ জানতে পারে, কাউকে না জানিয়েই সাবিরার বাসায় যাতায়াত করতেন তার স্বামী। এমনকি ঘটনার আগের রাত ১০টা ৩৮ মিনিট থেকে টানা ২৬ মিনিট ১০ সেকেন্ড মেসেঞ্জারে সাবিরার সঙ্গে কথা বলেছিলেন শামছুদ্দিন। পর দিন সকালে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

পিবিআই পরিদর্শক জুয়েল দেওয়ান বলেন, ‘হত্যার বিষয়ে শামছুদ্দিন এখনও সরাসরি মুখ না খুললেও তার নানা অ্যাক্টিভিটিসের অনেক প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাকে আবারও রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আরও কিছু তথ্য পেলে এ মামলার তদন্ত শেষ করা যাবে। পিবিআই ঢাকা মেট্রো উত্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ডা. সাবিরা হত্যার প্রকৃত রহস্য এখনও উদঘাটন করা যায়নি। তবে এঘটনার সঙ্গে তার দ্বিতীয় স্বামী এ কে এম শামসুদ্দিন আজাদের সম্পৃক্তার বেশকিছু তথ্য পাওয়া গেছে।’ মামলার তদন্ত দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |