শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৩০ পূর্বাহ্ন
ইবি প্রতিনিধি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ক্যাম্পাস সংলগ্ন এক ছাত্রী মেসে বিদ্যুৎ বিলকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের সাথে শিক্ষার্থীদের মারামারির ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (১৩ মে) সন্ধ্যা ৭টার দিকে ক্যাম্পাস সংলগ্ন নুরজাহান ছাত্রী মেসে এই ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ৬ জন আহত হয় বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ওই মেসে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ফারিহা খাতুন। তার গত কয়েক মাসের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ছিলো। বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের হিসাব নিয়ে মেস ম্যানেজারের কথা কাটাকাটি হয়। বিষয়টি ফারিহা তার ছেলে বন্ধু একই বিভাগের ও একই বর্ষের আবু হানিফ পিয়াসকে অবহিত করে। পরে সে হলে থাকা তার বন্ধুদের নিয়ে ওই মেসে যায়। এসময় পিয়াসের সাথে ম্যানেজারের বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। একপর্যায়ে স্থানীয়রা একত্রিত হয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেন। এতে পিয়াসসহ সমাজ কল্যাণ বিভাগের সাকিব আহমেদ, ইংরেজি বিভাগের হৃদয় আবির এবং আইসিটি বিভাগের নাঈম রেজা আহত হন বলে জানা গেছে। এদিকে মেসের ম্যানেজর ও স্থানীয় আশিক হোসেনও আহত হন বলে দাবি করেন স্থানীয়রা। পরে স্থানীয়রা কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থীকেও মারধর করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেখানে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে এক সাংবাদিকও আহত হয়। পরে শৈলকূপা থানাধীন রামচন্দ্রপুর পুলিশ ফাঁড়ি থেকে দুইজন পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে স্থানীয় মাতাব্বরকে সাথে নিয়ে উভয়পক্ষের মাঝে সমোঝোতা করে দেন।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে ফারিহা খাতুন জানান, গত জানুয়ারি মাসে আমি মেসে উঠি। ৪০৫ নাম্বার রুমে আমার উঠার কথা ছিলো, কিন্তু অন্যরুমে উঠানো হয়। আমি সে রুমে যেতে চাইলে বারবার ঘুরাতো মেনেজার। বিদ্যুৎ বিল নিয়ে মেস ম্যানেজার আমার সঙ্গে বাজে আচরণ করে। আমি আজ সন্ধ্যায় ম্যানেজারকে বিদ্যুৎ বিল দিতে গেলে তিনি আমাকে বাজে ইঙ্গিত দেন। টাকা নেয়ার সময় ম্যানেজার আমাকে স্পর্শ করার চেষ্টা করেন। আমাকে বিলের ৪১৫ টাকা দেয়ার কথা বলেছিলো, আমি পাঁচশ টাকা দিয়ে এখান থেকে নিতে বলছিলাম।
কিন্তু তখন আমার সঙ্গে বাজে ইঙ্গিত করায় আমি টাকাটা ছুড়ে দিলে তিনি আমার বাসার নাম্বার চান এবং বলেন, ‘বেয়াদব মেয়ে। তুমি আজকেই মেস ছেড়ে দিবা।’ পরে আমি আমার বিভাগের বন্ধুকে (আবু হানিফ পিয়াস) বিষয়টি জানালে সে আমার বিষয়ে মেস ম্যানেজারের সাথে কথা বলতে আসলে ম্যানেজার ও নিরাপত্তাকর্মী তার সঙ্গে বাজে আচরণ করে। পরে সে তার কিছু বন্ধুদের নিয়ে আবারও ম্যানেজারের সাথে এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে ম্যানেজার তাকে (আবু হানিফ পিয়াস) জামার কলার ধরে বের করে দেয়। তখন হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এরপর যা হয়েছে সেটার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। এই বিষয়ে তাদের ডাকা ঠিক হয়নি। বিষয়টির জন্য ক্ষমা চাচ্ছি।
তিনি আরও জানান, আমি আমার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর বরাবর নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করবো।
মেস মেনেজার বিবেক বিশ্বাস জানান, মেসে উঠার সময় জামানত হিসেবে সবার থেকে চার হাজার টাকা নেয়া হয়। ওই মেয়ে সমস্যার কথার জানালে দুই হাজার টাকা নিয়ে মেসে থাকার ব্যবস্থা করি। গত জানুয়ারি মাসে ওই মেয়ে মেসে উঠে। এরপর সে এতদিন থেকেছে কিন্তু কোন বিদ্যুৎ বিল দেয়নি। তার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া প্রায় এক হাজার টাকা। আমি কয়েকবার বিল চাইতে গেলে সে বিভিন্নরকম বাহানা দিতে থাকে। সে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে, আমি তার সঙ্গে কোন বাজে আচরণ করিনি। তাকে থাপ্পড় মারার কথাও বলিনি। বরং ওই মেয়ে আমার ওপর জোরে জোরে কথা বলে এমনকি দেখে নেয়ারও হুমকি দেয়। আমি কারোর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছি এরকম অভিযোগ কথা মেসের কেউ বলতে পারবে না।
এ বিষয়ে স্থানীয় মাতব্বর রেজাউল করিম খান বলেন, মেসের মধ্যে কোন ঝামেলা হলে মেস ম্যানেজারকে জানাতে হতো। আর মেস মেনেজারের বিরুদ্ধে যদি কোন অভিযোগ থাকে সেটা মেসের মালিকরে জানালে ব্যবস্থা নেয়া হতো। কিন্তু ওই মেয়েটা সেটা না করে তার বন্ধুদের ডেকে নিয়ে এসে একটা হুলুস্থুল কাণ্ড বাঁধিয়েছে, যেটা ঠিক হয়নি। স্থানীয়দের ওপর মারধর করা হলে তারা তো বসে থাকবে না। স্থানীয়দের সঙ্গে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের ঝামেলা হোক আমরা চাইনা। যেসব শিক্ষার্থীরা আজকে ঝামেলা করেছে তাদেরকে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহায়তায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ফারিয়ার বন্ধু আহত আবু হানিফ পিয়াস বলেন, আমাদের বান্ধবীর সাথে কিছুদিন ধরে মেস ম্যানেজার বাজে ব্যবহার করে আসছিলো। বিভিন্ন সময় মেস ম্যানেজার তাকে বাজে ইঙ্গিত প্রদান করে বলে আমাদের জানায়। এছাড়াও মেসের অন্যান্য মেয়েদের সাথেও প্রায় সময়ই খারাপ আচরণ করে। আজকেও আমার বান্ধবীর সাথে খারাপ আচরণ করলে আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করতে যাই। তখন তার সাথে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে বিবেক আমার এক বন্ধুকে চড় মারে। পরে আমরা উত্তেজিত হয়ে পড়ি। এসময় স্থানীয় লোকজন সেখানে উপস্থিত হয়ে আমাদের ওপর চড়াও হয়। এতে আমরা চার বন্ধু আহত হই। পরে আমরা সেখান থেকে চলে আসি।
নাঈম রেজা বলেন, আমি রাতে খেতে বের হইছিলাম, তখন দেখি ওখানে বন্ধু-বান্ধবরা আছে। সেখানে গিয়ে দেখি বান্ধুবীর সঙ্গে মেস মেনেজার বাজে আচরণ করেছে। পরে ওখানে হাতাহাতি মতো হয়েছিলো। এতে কয়েকজন ইঞ্জুরি হয়।
এই বিষয়ে রামচন্দ্রপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (এস আই) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ঘটনা শোনার পরপরই আমরা এখানে এসেছি। উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়েছে। তবে কেউ আইনগত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানালে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেন নি।