শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১৯ পূর্বাহ্ন
শহিদুল্লাহ মনসুর, জাবি প্রতিনিধি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে কুরবানির ইদের ছুটি। পুরো ক্যাম্পস যখন জনমানব শূন্য। সূযোগ লুটে নিতে মোটেও দেরি করছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের বর্ধিতাংশ ও চারুকলা বিভাগের ভবন নির্মাণের জন্য ছোট বড় সবমিলিয়ে প্রায় ৫০০ গাছ কেটে ফেলেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। রবিবার (২ রা জুন) ভোরবেলা থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে আল বেরুনী হলের এক্সটেনশন অংশে কতিপয় শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রত্যক্ষ উপস্থিতিতে চলছে বৃক্ষ নিধনের এই মহোৎসব।
এ বিষয়ে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদে সভাপতি আলিফ মাহমুদ বলেন, ছুটি হলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের গাছ কাটার নতুন সংস্কৃতি শুরু হয়েছে। এবারেও এর ব্যতিক্রম হয় নি। শিক্ষার্থীরা হলে নেই এই সুযোগে গাছ কাটার উৎসবে মেতেছে তারা। আজকে চারুকলা ভবন নির্মাণে তারা নিজেদের বিভাগের শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে গাছ কাটার সময়। ভবন নির্মাণে আমাদের আপত্তি নেই, আপত্তি সঠিক মাস্টার প্ল্যান ছাড়া ভবন নির্মাণে। প্রশাসন বার বার ছুটি বা বন্ধে গাছ কেটে নিজেদের মধ্যকার ক্রুটিগুলোকেই সামনে নিয়ে আসছে। সঠিক সিদ্ধান্ত ছাড়া ভবন নির্মাণ সামগ্রিকভাবেই আমাদের পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এছাড়াও ভবন নির্মাণে অতিরিক্ত জায়গার গাছ কাটা হয়েছে।
এ বিষয়ে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক খো: লুৎফুল এলাহী বলেন, এভাবে ছুটির মধ্যে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির সুযোগে ভবন নির্মাণ করা অত্যন্ত দৃষ্টিকটু। তারা বারবার একাজ করছে। কলা ও মানবিকী অনুষদের আমাদের চাওয়া ছিল ভবনটি আমাদের বর্তমান ভবন সংলগ্ন স্থানে করার। এতে ভবন কিছুটা ছোট হলেও পরিবেশ ও প্রাণ প্রকৃতিতে ক্ষতি তেমন ক্ষতি হতো না। কিন্তু তারা সে কথায় কর্ণপাত না করে লেকের পাশে যে স্থান নির্ধারণ করেছে তাতে অনেক গাছ কাটা পড়বে বলে আমরা আশংকা করেছি। এবং সেই আশংকা সত্যি হয়েছে। পরিকল্পনা ছাড়া এ ধরনের ভবন নির্মাণ অত্যন্ত ক্ষতিকর পরিবেশের জন্য। এই ভবনটি নির্মানের মাধ্যমে তারা তাদের তৃতীয় প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের পথকে সুগম করল।
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক ও চারুকলা ভবনের সহোযোগী অধ্যাপক এম এম ময়েজ উদ্দিন বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের নির্ধারিত জায়গাতেই ভবন নির্মাণ করছি। পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো কিছুই আমরা করছি না। এছাড়া যে গাছগুলো কাটা হয়েছে সেই গাছগুলো আমরা নিজেরাই রোপন করে পরিচর্যা করব। সকল অংশীজনদের সুপারিশকে গ্রহণ করে এবং তাদের নিয়ে আমরা একটা টিম তৈরি করব যাতে তারা আমাদের অগ্রগতিতে লক্ষ্য রাখতে পারেন।৷ অতিরিক্ত অংশের গাছ কাটা নিয়ে তিনি বলেন, প্রো ভিসি স্যার কি বলেছেন সে সম্পর্কে আমি জানি না। তবে সিন্ডিকেট নির্ধারিত স্থানেই ভবন নির্মাণ হচ্ছে এবং সে অনুযায়ী গাছ কাটা হচ্ছে। এই অংশে মূলত কন্সট্রাকশন সামগ্রী ও শ্রমিকদের থাকার স্থান তৈরি করা হবে। গাছ কাটার সময় রাজনৈতিক দলের শিক্ষার্থীদের অবস্থান করার বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগকে অনুষদে রূপান্তরিত করতে চান বিভাগীয় শিক্ষকরা। এ লক্ষ্যে ভারত-বাংলাদেশের যৌথ অর্থায়নে অনুষদ ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। যার জন্য আল বেরুণী হলের বর্ধিতাংশের স্থানটি নির্ধারণ করা হয়েছে। ভবন নির্মাণের জন্য ৯৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যার ৪৭ কোটি ৮৯ লাখ ১৭ হাজার টাকা বাংলাদেশ সরকার ও বাকী ৫০ কোটি টাকা ভারত সরকার অর্থায়ন করবে।