শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫৩ পূর্বাহ্ন

আপডেট
সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়াকে আনতে পেরে আমরা গর্বিত : প্রধান উপদেষ্টা কালীগঞ্জে গড়ে উঠেছে হারিয়ে যাওয়া মৃৎশিল্প কিশোরগঞ্জের ভৈরবে স্বামীকে হত্যার দায়ে স্ত্রী ও প্রেমিকের মৃত্যুদণ্ড পুলিশের ক্যাডেট সাব-ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) নিয়োগ-২০২৫ এর লিখিত পরিক্ষা সংক্রান্তে ব্রিফিং জয়পুরহাট জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বদ্বিতায় নির্বাচিত সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে অ্যাপে নিবন্ধন করে নিতে হবে ট্রাভেল পাস মানিকছড়িতে কারিতাসের উদ্যোগে পরিবেশ সুরক্ষা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদের সাংগঠনিক কর্মশালা গণঅভ্যুত্থানে  নিহত ও আহতদের স্বরণে কেশবপুরে স্বরণ সভা শিক্ষার্থী ভর্তি ও শিক্ষক নিয়োগে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করবো – বাকৃবি উপাচার্য
এসআই আকরাম হোসেনের অবৈধ সম্পদ : অবাক দুদক কর্মকর্তারা

এসআই আকরাম হোসেনের অবৈধ সম্পদ : অবাক দুদক কর্মকর্তারা

বিশেষ প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের ডিবির সাবেক এসআই আকরাম হোসেন ২০০৩ সালে পুলিশ কনস্টেবল পদে যোগদান করেন। এরপর ২০১৩ সালে এএসআই ও ২০১৬ সালে পদোন্নতি পেয়ে উপপরিদর্শক (এসআই) হয়েছেন। পদোন্নতি পেয়েই বেপরোয়া হয়ে ওঠেন এসআই আকরাম হোসেন । জঙ্গি, মাদক, সন্ত্রাসসহ বিভিন্ন মিথ্যা ও সাজানো মামলার ভয় দেখিয়ে সমানে কামিয়ে নিয়েছেন অবৈধ টাকা। সেই টাকায় গত ৬ বছরে ময়মনসিংহ পুলিশ সামনে একটি আলিশান বাড়ি, তিনটি প্রাইভেট গাড়িসহ বিপুল ধন-সম্পদের মালিক বনে গেছেন। এক-দুই বছর নয়, টানা ৭ বছর একই ময়মনসিংহ জেলায় ডিবি ও কয়েকটি থানায় দায়িত্ব পালন করেন।

পদোন্নতির পর আলাদিনের চেরাগ পাওয়া সেই পুলিশের এসআই মো. আকরাম হোসেন ওরফে ডন আকরাম। জামালপুর নিজ গ্রামের বাড়িতে তিনি ‘ওসি আকরাম নামে পরিচিত। এসআই আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করা হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। এই অভিযোগ অনুসন্ধান করছেন দুদক। এত অভিযোগের পাহাড় মাথায় নিয়ে তিনি বর্তমানে নারায়নগঞ্জে বদলি হয়ে গুরুত্বপূর্ণ থানায় আছেন। সর্বশেষ ময়মনসিংহ ডিবিতে দায়িত্ব পালনকালে জেলায় প্রভাব বিস্তারের অভিযোগে তাঁকে বদলি করেন ঈশ্বরগনজ থানায়। তিনি সেখানে চাকরী করতে নারাজ! তারপর ময়মনসিংহ জেলায় আর চাকরী করবেন না? দুর্নীতি দমন কমিশনে করা অভিযোগ থেকে জানা যায়, এসআই আকরাম হোসেন ময়মনসিংহ শহরের পুলিশ লাইনের সামনে একটি পাঁচতলা আকিশান বাড়ি, শুশুর বাড়ি মুক্তাগাছায় জমি কিনেছেন ২ কোটি টাকার।

রাজধানীতে চাকরী কালে কোটি টাকার জমি কিনেন কয়েক জায়গায়। জামালপুর সদরে নান্দিনা বাজারে জমি কিনেন, নিজ গ্রামে জমি কিনেন, কৃষিজমি, তিনটি প্রাইভেট কার ও বিপুল নগদ অর্থের মালিক ডন আকরাম হোসেন । সব মিলিয়ে তাঁর সম্পদের মূল্য প্রায় ১২ কোটি টাকা। জানা গেছে, ময়মনসিংহ শহরের পুলিশ লাইনের সামনে পাঁচতলা বাড়িটির মালিক এসআই আকরাম হোসেন থাকলেও তার দাবি বোনদের জমিতে বাড়ি করছেন। পুলিশ লাইন এলাকাবাসি বাসিন্দা মোশাররফ হোসেন জানান, এই বাড়ির কাজ করতে বহু টাকা লেগেছে। কত টাকা লেগেছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আকরাম হোসেন স্যার ময়মনসিংহ ডিবিতে থেকে প্রায় ১২ কোটি টাকা জমি কিনেছেন। ময়মনসিংহ নগরীর মধ্যে বিলাসবহুল ও আধুনিক বাড়ি এটি। সৌন্দর্য, আভিজাত্য এবং মূল্য বিবেচনায় স্থানীয়রা বাড়িটির নাম দিয়েছে ‘স্বর্ণকমল’ ও ডন আকরাম স্যারের বাড়ি।

জানা গেছে, এসআই আকরাম হোসেনের শুশুরবাড়ি মুক্তাগাছা এলাকায় সেখানে আনুমানিক আড়াই কোটি টাকা মূলের জমি কিনেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে । ময়মনসিংহে জমি কিনে বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে এসআই আকরাম হোসেন পুলিশের প্রবিধান লঙ্ঘন করেছেন। পুলিশ প্রবিধানের ১১২(ঙ) ধারায় বলা হয়েছে, ‘পুলিশ অফিসারগণ নিজ জেলা ছাড়া অন্য কোনো স্থানে ইন্সপেক্টর জেনারেলের (আইজিপি) পূর্বানুমতি ছাড়া স্বনামে, স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, আত্মীয়-স্বজন, চাকর-বাকর বা আশ্রিত ব্যক্তির নামে বা বেনামে জমি বা অন্য কোনো স্থাবর সম্পত্তি ক্রয় করতে পারবেন না’। জামালপুরের নান্দিনায় বোনের নামে প্রায় ৫ বিঘা জমি কিনেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। আকরাম হোসেনের এক স্বজন জানান, কাগজে-কলমে বোনদের নামে দেখানো হলেও এসব জমি প্রকৃত মালিক এসআই আকরাম হোসেনের। তিনটি প্রাইভেট কারেরও মালিক তিনি। একটিতে নিজে চলেন। অপর দুটিতে ছেলেমেয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া করে।

জামালপুরের বাসিন্দা আজিজুল ইসলাম জানান, আকরাম হোসেনের বাবার আগে অর্থ-সম্পদ তেমন না থাকলেও এখন কোনো কিছুর অভাব নেই। আকরাম হোসেন গ্রামে বিস্তর কৃষিজমি কিনেছেন। ময়মনসিংহ শহরে বাড়ি ও শুশুর বাড়ি মুক্তাগাছায় , গাড়ি এবং নগদ টাকা করেছেন। সব মিলিয়ে ১২ কোটি টাকার মালিক বলে শুনেছেন।তিনি আরও বলেন, আকরাম ভাই তো ময়মনসিংহের ডিবির ওসি নাকি হয়েছে? ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চাকরি জীবনে আকরাম হোসেন ৮ বছর ধরেই ময়মনসিংহ জেলায় কর্মরত আছেন। ভালুকা ও ময়মনসিংহ ৩ নং পুলিশ ফাঁড়ীতে থাকার সময় জড়িয়ে পড়েন ইয়াবা ব্যবসায়। সেখানে তার কথা না শোনায় পুলিশের সদস্য আলামিন ও মোতালেব নামের দুজনকে ইয়াবা চালান দিয়ে ফাঁসিয়ে দেন। এই মামলা ইতিমধ্যে মিথ্যা প্রমানিত হয়েছেন।

পরবর্তী সময়ে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. মোয়াজ্জেম হোসেনকে ম্যানেজ করে যোগদান করেন আবারও ডিবিতে । সেখানে তার ভাগ্য খুলে যায়। আগের দুই ওসির সময় তার ভাগ্য খুলে যায়। ৩ নং ফাঁড়ির দায়িত্বে থাকার সময় শত শত নিরীহ মানুষকে ধরে এনে নাশকতা, জঙ্গি ও মাদক মামলায় জড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে এবং চাঁদাবাজি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এতদিন পর এবার মুখ খুলছে সাধারণ মানুষ। অনুসন্ধানে জানাগেছে, এসআই আকরাম হোসেনের নামে ৮ টি অভিযোগ আইজিপি বরাবরে জমা হয়েছে।এদিকে ক্রসফায়ারের অভিযোগে ময়মনসিংহে এসআই আকরাম হোসেনসহ ১৭ জনের নামে আদালতে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে।গত রবিবার (২০ অক্টোবর) বিকালে তার বাবা হারুন অর রশিদ (৫৪) বাদী হয়ে ময়মনসিংহ সদর ১ নম্বর আমলি আদালতে মামলার জন্য অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগ দাখিলের পর আমলে নিয়ে বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রওশন জামিল ঘটনা তদন্তপূর্বক কোতোয়ালি মডেল থানা ওসিকে রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন। তার বিরুদ্ধে এর আগেও ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা হয়। আদালতের

মামলার অপর আসামিরা হলেন- পুলিশ পরিদর্শক মোখলেছুর রহমান, এসআই ফারুক আহমেদ, এসআই পরিমল চন্দ্র দাস, এসআই আকরাম হোসেন, এএসআই আব্দুল মজিদ, এএসআই জিন্নাত হাসান মানিক, এএসআই জাকির হোসেন, এএসআই জিল্লুর রহমান, কনস্টেবল কাউসার হাবিব, কনস্টেবল গোলজার, কনস্টেবল সোহরাব আলী, কনস্টেবল সাইফুল, কনস্টেবল সেলিম, কনস্টেবল রাশেদুল, কনস্টেবল সানোয়ার ও কনস্টেবল জহিরুল ইসলাম।মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে ময়মনসিংহ কোর্টের পুলিশ পরিদর্শক মোস্তাছিনুর রহমান জানান, বাদী হারুন অর রশিদ মামলা করতে রবিবার আদালতে অভিযোগ দাখিল করেছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ঘটনা তদন্তপূর্বক কোতোয়ালি মডেল থানার ওসিকে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৮ সালের ২২ মে মঙ্গলবার রাত ১টার সময় ডিবির সাবেক ওসি আশিকুর রহমানের নেতৃত্বে এসআই আকরাম হোসেনের একটি দল পুরোহিতপাড়ায় অভিযান চালিয়ে বাদীর ছেলে রাজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায়। পরে বাদী তার ছেলেকে দেখার জন্য ডিবি কার্যালয়ে যান। কিন্তু দুই দিনেও তাকে ছাড়েনি। এরপর ২৪ মে সকালে বাদী আবারও ছেলেকে ছাড়াতে ডিবি কার্যালয়ে গেলে এসআই আকরাম হোসেন ১৫ লাখ টাকা রাতের মধ্যে দিতে হবে- এমনটা দাবি করেন। বাদী টাকা সংগ্রহের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।পরে রাত পৌনে ২টার সময় পুরোহিতপাড়া রেলওয়ে ভাঙা ওয়াল সংলগ্ন পুকুরপাড় দক্ষিণ পশ্চিম কোনায় রেনু বেগমের বাড়ির পাশে রাজনকে নিয়ে গিয়ে এসআই আকরাম হোসেনসহ সকল সদস্যরা হত্যার উদ্দেশ্যে বুকে ও পেটের নিচে কয়েক রাউন্ড গুলি করে। এরপর সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মারা যায়। তাকে উদ্ধার করে পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের হাতে লাশ তুলে দেয়। মামলার বাদী হারুন অর রশিদ দাবি করেন, ১৫ লাখ টাকা দিতে না পারায় এসআই আকরাম হোসেনসহ অন্য পুলিশ সদস্যরা আমার ছেলেকে ক্রসফায়ারে হত্যা করেছে। এই ঘটনায় দায়ীদের বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য আদালতে অভিযোগ দাখিল করেছি। এসআই আকরাম হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেন। বাড়ির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ৪ বছর ধরে জেলার বাইরে চাকরী করছি সুনামের সাথে,একটি বাড়ি করছি এটা কোন বিষয় নয়।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |