শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৯ পূর্বাহ্ন
মো: আল-আমিন, শ্রীমঙ্গল : হাইল হাওর, প্রকৃতির এক অপার সম্ভার। ভোরের এই শান্ত পরিবেশ প্রতিদিন বদলে যায় প্রাণচঞ্চলতায়, যখন এখানে শুরু হয় মির্জাপুরের ঐতিহ্যবাহী মাছের বাজার। যা ঘাটের বাজার মাছের আড়ৎ নামে পরিচিত। মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই বাজার।
প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকেই মির্জাপুরের এই বাজারে প্রাণচাঞ্চল্য শুরু হয়। হবিগঞ্জ, নবীগঞ্জ, বাহুবল, চুনারুঘাটসহ আশেপাশের অঞ্চল থেকে ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা এখানে ভিড় জমায়। সকাল ৯টা পর্যন্ত চলে মাছের নিলাম। একেকজন নিলাম ডাকছেন, আর ক্রেতারা নিজেদের প্রস্তাবিত দাম বলছেন। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকার মাছ কেনাবেচা হয় এখানে।
নিলামের মাধ্যমে এই বাজার পেয়েছে ভিন্ন এক বৈশিষ্ট্য। ব্যবসায়ীরা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কিনে নেন বড় বড় মাছসহ পছন্দের মাছ। হাইল হাওরের মাছ এখানকার প্রধান আকর্ষণ। কার্প জাতীয় দেশীয় মাছ, বোয়াল, রুই, কাতলাসহ দেশীয় প্রজাতির সবই পাওয়া যায় এখানে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, এই বাজারের সূচনা বহু বছর আগে। আকাশ উদ্দিন নামে এক ব্যবসায়ী গ্রামের মানুষের সুবিধার কথা ভেবে এই বাজার প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সময় এটি ছিল একটি ছোট আকারের স্থানীয় বাজার। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি পরিণত হয়েছে বৃহৎ একটি বাণিজ্যকেন্দ্রে। হাওর এলাকার মানুষের জীবিকার অন্যতম কেন্দ্রস্থল এটি।
এই বাজার শুধু একটি ব্যবসায়িক হাব নয়, এটি স্থানীয় অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি। মির্জাপুরের মানুষের জীবিকা যেমন এই বাজারের সঙ্গে জড়িত, তেমনি এখানকার মাছ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ হয়ে জাতীয় অর্থনীতিতেও অবদান রাখে। তবে হাওরে মাছের পরিমাণ কমে আসা এবং বাজারের অবকাঠামোগত উন্নয়নের অভাব একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
জেলে ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, হাওরের মাছের পরিমাণ দিন দিন কমছে। জলবায়ু পরিবর্তন, অব্যবস্থাপনা এবং আধুনিক প্রযুক্তির অভাব এই সমস্যাগুলোকে আরও জটিল করে তুলেছে। যদি সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসন এগিয়ে আসে, এই বাজারের পরিধি আরও বাড়ানো সম্ভব। সঠিক ব্যবস্থাপনায় এই বাজার হতে পারে দেশীয় মাছ রপ্তানির একটি কেন্দ্র।
মির্জাপুরের ঐতিহ্যবাহী মাছের বাজার শুধু একটি স্থান নয় এটি গ্রামীণ মানুষের সংগ্রাম, সফলতা এবং স্বপ্নের এক প্রতীক। যুগ যুগ ধরে এই বাজার হাওর এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার অংশ হয়ে আছে এবং ভবিষ্যতেও এটি হাওরবাসীর জন্য আশীর্বাদ হয়ে থাকবে।