শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৬ পূর্বাহ্ন
চট্টগ্রাম সংবাদাদাতা : শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়ে স্নাতক ডিগ্রি শেষ করেছেন সাইকা আসমা সানমুন। গত রোববার সন্ধ্যায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক সমাপনী বর্ষের ফলাফল প্রকাশিত হলে তার এ সাফল্যের কথা জানাজানি হয়। আসমা চট্টগ্রাম নগরীর সরকারি মহিলা কলেজের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী। ইচ্ছাশক্তি আর মনের জোর থাকলে যে কতদূর যাওয়া যায় তা করে দেখিয়েছেন ৩৬ ইঞ্চি উচ্চতার ২৫ বছর বয়সী আসমা।
তার সাফল্যে খুশি পরিবারের সদস্য, প্রতিবেশীসহ কলেজের শিক্ষকরাও। আসমার বাড়ি ফটিকছড়ি উপজেলা পরিষদের পূর্ব পাশে প্রফুল্ল ডাক্তার বাড়িতে। বাবা আবু সালেহ চৌধুরী পেশায় একজন ব্যবসায়ী। মা মাজেদা বেগম তার সার্বক্ষণিক সঙ্গী। মেয়ের সাফল্যের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওর এই যাত্রা মোটেও সহজ ছিল না। আর পাঁচজনের মতো স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠেনি সে। এই সবকিছুর জন্য অনেক লড়াই করতে হয়েছে আমাদের। তিনি বলেন, আগে ইচ্ছা ছিল তার পড়াশোনা শেষ করানো আর এখন একমাত্র ইচ্ছা মেয়ের একটা ভালো চাকরি হোক।
সাইকা আসমা জানান, এই অনার্স ডিগ্রি অর্জনের পেছনে আমার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন আম্মু-আব্বু। শত প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করে আম্মু-আব্বুর অনুপ্রেরণায় আমার এতদূর আসা সম্ভব হয়েছে। তারা আমার বেঁচে থাকার শক্তি। প্রচুর সমস্যাকে দূরে রেখে আব্বু-আম্মু আমার পড়াশোনাকে গুরুত্ব দিয়েছেন। সাইকা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের মত শারীরিক প্রতিবন্ধীদের সমাজে নিচু চোখে দেখা হয়।
শিক্ষিত মানুষেরা এটি আরো বেশি করে। কেন আমার মধ্যে কি এমন আছে যে এভাবে দেখতে হবে? আমরা যারা শিক্ষিত হয়েছি সরকার তাদের জন্য চাকরির ব্যবস্থা করুক এবং যারা শয্যাশায়ী শারীরিক প্রতিবন্ধী আছে তাদেরকে আমাদের দেয়া ভাতা দেয়া হোক। আমি বলছি না আমাকে ক্যাডার হতে হবে, আমার যে সীমাবদ্ধতা আছে তার ভিতরে থেকেই তো কাজ করতে পারি। তাও অনেকে বলে আপনার সাথে কাজ করতে আমাদের সমস্যা হবে। ভাবী ফারহানা বলেন, আমরা দেখেছি কি পরিমাণ কষ্ট ত্যাগ স্বীকার করে সাইকার বাবা-মা তাকে বড় করেছে। আজকে এ পর্যন্ত আসার পেছনে তাদের বড় অবদান। নিজের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তো আছে, তাকে এ সাফল্য লাভের জন্য অগ্রাহ্য করতে হয়েছে সমাজের নানা রকম প্রতিবন্ধতাকেও। সাইকা স্নাতক পাস করেছে, এখন আশা- তার যেন একটা ভালো চাকরি হয়।