শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৯ পূর্বাহ্ন
গাজী রুবেল, কুমিল্লা: কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় সবজি চাষের পরিবেশবান্ধব মালচিং পদ্ধতির ব্যবহার বেড়েছে। কম খরচে অধিক উৎপাদন ও বিষমুক্ত সবজি চাষ হওয়ায় সবজি উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে উঠছেন কৃষক কৃষানীরা। এতে সবজি উৎপাদন আগের চেয়ে বেড়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। পরিবেশবান্ধব কৌশলের কারণে নিরাপদ ফসল উৎপাদনে কৃষকরা এ প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন। মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে লাভবান হওয়া উপজেলার শিদলাই ইউনিয়নের পোমকাড়া এলাকার কৃষক জহিরুল আলম আবুল বাশার মুন্সি। তিনি বলেন, মালচিং পদ্ধতি কাজ লাগিয়ে সুফল পেয়েছি। চারা রোপণের পর থেকে শুধুমাত্র দেখভাল করা ছাড়া আর তেমন কোনও পরিচর্যা করতে হয় না।এই পদ্ধতিতে চাষ করে গত বছর লাভবান হয়েছি। এবার এই পদ্ধতিতে লম্বা বেগুন, টমেটো, করলা, সিম চাষ করছি আশা করি এবারও ভালো ফল পাবো।
একই এলাকার কৃষানী বিউটি আক্তার বলেন, এবার আমি মালচিং পদ্ধতিতে আমার ১০ শতক জমিতে টমেটো, ২৫ শতক জমিতে লম্বা বেগুন, ১০ শতক জমিতে শাশা ও করলা, ১০ শতক জমিতে টমেটো, ৪ শতক জমিতে ফুলকপি ও ১ শতক জমিতে সিম চাষ করেছি। মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ দেখতে অনেকেই আমার জমিতে আসেন। এ পদ্ধতিতে প্রথম দিকে একটু বেশি খরচ হলেও, পরে আর তেমন খরচ নেই। দুলালপুর ইউনিয়নের বালিনা এলাকার কৃষক মহিউদ্দিন সরকার বলেন, আমি এই প্রথম মালচিং পদ্ধতিতে ৪০ শতক জমিতে টমেটো চাষ করেছি। আশা করছি পোকার আক্রমন ও রোগ বালাই তেমন ক্ষতি করতে পারবে না। আগাছা কম হওয়ায়, তাতে শ্রম ও খরচ বাঁচে। সার কম দেওয়া লাগে। কিন্তু ফলন হয় সাধারণ চাষের চেয়ে বেশি। মালচিং একটি আধুনিক ও সময়োপযোগী চাষ পদ্ধতি।
উপজেলার দুলালপুর ব্লকের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা আকলিমা আক্তার আখি জানিয়েছেন, মালচিং পদ্ধতিতে চাষের সবচেয়ে বড় ভালো দিক হলো জমি চাষ করলে পানি কম লাগছে। এতে কৃষককের সার, সেচ কম ও খরচ কমে লাগে পাশাপাশি ফসলগুলো অনেকদিন টেকসই হয়। এই পদ্ধতিতে সবজি চাষ করলে গ্রামের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের আর্থিক লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ৫উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মাসুদ রানা বলেন, মালচিং যুগান্তকারী ও মালচিং পদ্ধতি কৃষি কাজের অন্যতম আধুনিক পদ্ধতি। আর মালচিং অত্যন্ত সহজলভ্য, লাভজনক ও বিষমুক্ত সবজি চাষের একটি অন্যতম পদ্ধতি। ফসলের ক্ষেতে আর্দ্রতা সংরক্ষণে মালচিং বিশেষভাবে উপকারী।
কারণ মালচিং সীট ব্যবহারের ফলে মাটির রসের বাষ্পায়ন প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফলে মাটির উপরিতল থেকে যে পরিমাণ পানি বাষ্পীভূত হয়, তা ওই প্লাস্টিকের আবরণে বাধা পেয়ে ঘনীভূত হয়। যা বিন্দু বিন্দু জলকণায় পরিণত হয়ে আবার মাটিতেই ফিরে আসে। এতে জমিতে দু’টি সেচ পর্বের ব্যবধান বাড়ানো সম্ভব হয়। ফলে সেচ কম লাগে অর্থাৎ সেচের খরচ কম হয়। তিনি আরও বলেন, সবুজ কৃষির জন্য ওই পদ্ধতিগুলো অত্যন্ত কার্যকর। এর মাধ্যমে সেচ খরচ কমবে, নিড়ানি খরচ কমবে, দমন হবে কীটপতঙ্গের উৎপাত। উৎপাদন খরচ কমলে কৃষকেরাই লাভবান হবেন। আমরা এ পদ্ধতিটি কৃষকের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কাজ করছি।