শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ০৩:৩৬ অপরাহ্ন

বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বহিরাগতদের দৌরাত্ম্যের শেষ কোথায়

বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বহিরাগতদের দৌরাত্ম্যের শেষ কোথায়

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় মানেই হাজারো শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন দেখানো এক আঁতুড়ঘরের নাম। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা ছুটে আসে সেই স্বপ্নালয়ে। যদিও কারও স্বপ্ন বুননের, আবার কারও স্বপ্নভঙ্গের কারিগর আমাদের দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। সাধারণত মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরাই পড়াশোনা করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশ টিউশনির মাধ্যমে নিজের খরচ যোগাড় করে, কেউ আবার পরিবারের খরচও বহন করে।

এবার আসল কথায় আসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া দেশের প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয়ই গ্রামীণ জনপদে অবস্থিত। হাতেগোনা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। এক্ষেত্রে খরচের ভার কমাতে শিক্ষার্থীরা সাধারণত আবাসিক হল গুলোতে অবস্থান করতে আগ্রহী থাকে। যদিও সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনও শতভাগ আবাসনের ব্যবস্থা হয়নি।

তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, প্রান্তিক পর্যায়ে এসকল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মোট আয়তনের সুষম ব্যবহার নিশ্চিতকরণ হয়না। কখনও সেটি যথার্থ পরিকল্পনার অভাব কিংবা অর্থ স্বল্পতায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু ফাঁকাস্থান, খেলার মাঠ, পুকুর পাড়, দর্শনীয় স্থান, বিশেষ কিছু স্থাপনা রয়েছে যেগুলো শিক্ষার্থীদের বিনোদন, আড্ডা কিংবা মনোরঞ্জনের সুযোগ তৈরী করে। ক্লাস, পরীক্ষা, ল্যাব, ভাইভা, প্রেজেন্টেশনের এক মহা ঝঞ্ঝাট ছিড়ে শিক্ষার্থীরা সেখানে সময় কাটিয়ে থাকে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, ক্রমাগত নিরাপত্তার দরুন ক্রমশই এই স্থানগুলো এখন বহিরাগতদের আড্ডা, নেশা, ইভটিজিংয়ের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যম প্রকাশিত সংবাদে আমরা সেটি দেখতে পাই।

গত ৫ মে গণমাধ্যমে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের দৌরাত্ম্য নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেদিন সন্ধ্যায় অভিযান চালিয়ে ৩০টি বহিরাগত মোটরসাইকেল জব্দ করে প্রক্টরিয়াল বডি।খেলার মাঠ দখল, ছিনতাই, ছাত্রী উত্যক্ত, মাদক ব্যবসা, বেপরোয়া গতিতে ক্যাম্পাসে মটরবাইক চালানোসহ একের পর এক অপকর্ম করে চলেছে বহিরাগতরা। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশে বিঘ্ন ঘটছে।এছাড়াও গত ২৯ আগস্ট মাদক সেবনকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাস থেকে চার বহিরাগতকে আটক করে প্রক্টরিয়াল টিম।গত ১৯ জুন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পেছন থেকে মাদক সেবনের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীসহ মোট ৪ জনকে আটক করে প্রক্টরিয়াল টিম।

২০২১ সালের ২৭ জুন মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে চারজন ছেলে ও একজন মেয়েকে শাহবাগ থানায় দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল টিম।অর্থাৎ শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় নয়, বরং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এমনকি রাজধানীতে অবস্থিত প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্র এমন। বিষয়টি আমাদের দেশের উচ্চশিক্ষার প্রসার এবং গুণগত মান নিশ্চিতের ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধক হিসেবে বিবেচিত। কেননা এতে মাদক সেবনে খোদ শিক্ষার্থীরা জড়িয়ে পড়ছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন,গাঁজার ধোঁয়া আর সিগারেটের আবছা আলো সর্বত্র দেখা মেলে। প্রশাসনের তেমন কোনো পদক্ষেপ লক্ষনীয় নয়। তবে শুধু প্রশাসন নয়, এমন পরিস্থিতির জন্য শিক্ষার্থীরাও কিছুটা দায়ী। কারণ, সময়ের পরিক্রমায় শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ এসকল বহিরাগতদের থেকে মাদক সংগ্রহ করে থাকে যার ফলে তাঁরা আসার সুযোগ পায়। আবার অনেক শিক্ষার্থী বহিরাগতদের টিউশন করায়। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতি বহিরাগতদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ এবং অবস্থানের অন্যতম একটি কারণ বলে মনে করেন শিক্ষার্থীরা।তবুও নতুন প্রচেষ্টায় সকলের প্রাণপণ চেষ্টায় উচ্চশিক্ষার পরিবেশ নির্বিঘ্নে হবে। দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় থাকুক বহিরাগত মুক্ত, হোক শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ আবাসস্থল। এটিই তাদের একমাত্র চাওয়া।

কী করছে/বলছে প্রশাসন

অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রশাসনের উদ্যোগ ‘অনুরোধ ও আহ্বান’ পর্যন্তই। নেই কোনো নিয়মতান্ত্রিক ও শক্ত পদক্ষেপ। বস্তুত এতে আদৌ কোনো সমাধান হবে কি না সন্দেহ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা।এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. অহিদুল আলম বলেন, ‘আমরা সার্বক্ষণিক চেষ্টা করছি, অনেককেই প্রধান গেট থেকে ফিরিয়ে দিচ্ছি। তবে আমরা তো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, নিরাপত্তা বাহিনী নই।

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের অনেক ব্যর্থতা আছে, মেনে নিচ্ছি। কিন্তু আমরা কঠোর হওয়ার চেষ্টা করছি। বিশ্ববিদ্যালয় তো শিক্ষার্থীদের জন্যই। তাদের নিরাপত্তার জন্য প্রক্টরিয়াল বডি, পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বাহিনী আছে। কোন দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিলে শিক্ষার্থীরা যেন আমাদেরকে জানায়। আর আমাদের সার্বক্ষণিক সজাগ দৃষ্টির পরেও ছাত্রীদের বলবো তারা যেন সচেতনভাবে চলে।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2025 Protidiner Kagoj |