মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহেদ পাপুয়া নিউগিনির নাগরিক। তিনি সাবেক সংসদ-সদস্য থাকাকালে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বিপুল সম্পদ গড়ার পাশাপাশি বিদেশেও অর্থ পাচার করেছেন। রাজধানীর মোহাম্মদপুর, ময়মনসিংহ নগরী ও ভালুকা বিভিন্ন স্থানে এবং বিদেশে থাকা সম্পদ মিলিয়ে এমএ ওয়াহেদের প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকার সম্পদের অনুসন্ধান করছে দুদক। অবৈধ সম্পদের এমন পাহাড় গড়েও তিনি পালিয়ে গেছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক বরাবরে তার যাবতীয় অবৈধ সম্পদের তথ্য দিয়ে অভিযোগ করেন ভালুকার এক স্থানীয় বাসিন্দা। দুদক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে শাস্তি নিশ্চিত করলে অবৈধ সম্পদশালীদের কাছে এটি একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে এমনটাই দাবি করেছেন। দুদদ অভিযোগ সূত্রে জানাগেছে, এমএ ওয়াহেদ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ময়মনসিংহ জেলা শাখায় উপ-কর কমিশনার কার্যালয়ে (সার্কেল-২) পাঁচ লাখ ৬৩ হাজার ৯৪৬ টাকার কর দিয়েছেন। অথচ রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ১০ কাঠা জমির ওপর বহুতল ভবনসহ (বাড়ি নং-৯, রোড নং-২, চান মিয়া হাউজিং) তিনটি বাড়ি রয়েছে।
তার স্ত্রীর নামেও এই এলাকায় রয়েছে শতকোটি টাকার সম্পত্তি। ভালুকা বাজারে ২৯ শতাংশ জমির ওপর ১৪ তলা বিশিষ্ট বিশাল এক মার্কেট রয়েছে। ভালুকার আঙ্গারগাড়ায় তিন বিঘা জমির ওপর সুইমিংপুলসহ একটি বাড়ি, পাঁচ বিঘা জমির ওপর নির্মাণাধীন একটি বাড়ি, আঙ্গারগাড়া বাজারে দুটি পাঁচতলা ভবন ও একটি তিনতলা বাড়ি রয়েছে। ময়মনসিংহ শহরে কৃষ্টপুর এলাকায় পাঁচতলা ভবন,বাইপাস ১০০ একক জমি রয়েছে। এছাড়া নামে ও বেনামে প্রায় হাজার বিঘা সম্পত্তি রয়েছে। দেশ থেকে অর্থ পাচার করে এমএ ওয়াহেদ পাপুয়া নিউগিনিসহ বিভিন্ন দেশে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।
এর মধ্যে রয়েছে দেশ বেশ এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড (পি.ও. বক্স ২৬২, বোরোকো, ন্যাশনাল ক্যাডর্টাএল ডিস্ট্রিক্ট, পাপুয়া নিউগিনি)। গর্ডনস-সেন্ট্রাল সুপারমার্কেটে ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি, সার্ভিস স্টেশন, ২ এক্স বেকারি, ২ এক্স ফাস্ট ফুড। গর্ডনস-গর্ডন হোলস এবং ডেলিভারি ডিপো। দেশ দেশ পাইকারি ও খুচরা, দ্রুত খাদ্য, বেকারি এবং ফ্রিজার ডিপার্টমেন্ট স্টোর। লয়েস রোড, কোনেডোবু, পাইকারি ও খুচরা, ফাস্ট ফুড, বেকারি এবং ফ্রিজার ডিপার্টমেন্ট স্টোর। কৌরা ওয়ে, টোকাররা-ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি, ফাস্ট ফুড এবং বেকারি। টোকাররা-ফ্রিজার, কনটেইনার ইয়ার্ড, পরিবহণ, লজিস্টিক এবং কর্মশালা। সোগেরি রোডে নতুন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে পোলট্রি মাংস প্রক্রিয়াকরণ, ফিড মিল, সার প্যাকেজিং, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, এগ্রো-সুপার মার্কেট, সবজি ও ফল চাষ এবং মাছ চাষসহ কৃষিকাজ। সরকারের অনুমতি না নিয়ে অবৈধভাবে দেশ থেকে টাকা পাচার করে বিদেশে এসব সম্পদ গড়েছেন তিনি। অবৈধ নাগরিক ওয়াহিদ : অনুসন্ধানে জানা যায়, এমএ ওয়াহেদ বাংলাদেশের একজন অবৈধ নাগরিক। তবে জন্মসূত্রে তিনি একজন বাংলাদেশি। তিনি ১৯৬৬ সালের ১২ এপ্রিল ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার আঙ্গারগাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ৮৬৭২৩৬৯৫৫৩। বাংলাদেশি পাসপোর্ট নম্বর এ-০৩৩০৭৬৩২। সাবেক সাংসদ ওয়াহেদের বেপরোয়া আট খলিফা : বাংলাদেশের অন্যতম শিল্পাঞ্চল উপজেলা ভালুকা। সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল ওয়াহেদ বিজয়ী হওয়ার পর উপজেলা সকল শিল্প প্রতিষ্ঠানের ব্যাবসা নিয়ন্ত্রণের জন্য আট জন ব্যাক্তিকে নিয়োগ করেছিলেন । এই আট ব্যাক্তিকে খলিফা ক্ষেতাব দিয়েছেন সাবেক এমপি এমএ ওয়াহেদ।
সাবেক এমপির নিযুক্ত খলিফারা হলেন, ভালুকা আঞ্চলিক শ্রমিকলীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম সরকার, জেলা আওয়ামীলীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিঃ আবু সাহাদত সায়েম, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি জাকির হোসেন শিবলী, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এজাদুল হক পারুল, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক কেবিএম আসাদুজ্জামান সানা, ভালুকা আঞ্চলিক শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম খলিল, উপজেলা যুবলীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক খোকন হোসেন ঢালী ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইফতেখার আহাম্মেদ সুজন।
তারা এখনও প্রকাশ্যে ঘুরছে। এই খলিফাদের বেপরোয়া কর্মকান্ডে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল শান্তির নগরী ভালুকা। উপজেলার বেশ কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের জুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল ৮ খলিফারা। আরও বেশ কিছু শিল্প কারখানার ব্যবসা দখলে নিতে ওয়েস্টিজ ও জুট আটকে রেখেছে খলিফারা ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের দিয়ে হয়রানি করেন। শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের নানা রকম হুমকী ধমকি এবং হামলা করেছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের উপ-পরিচালক সালাউদ্দিন জানান, সাবেক এমপি ওয়াহেদের একটি অভিযোগ এসেছে। অভিযোগে প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকার তথ্য দেওয়া হয়েছে। আমরা যাচাই-বাছাই করে দ্রুত অনুমোদনের জন্য মহাপরিচালক (অনুসন্ধান)বরাবরে ফাইল পাঠানো হবে। অনুমোদন হয়ে আসলেই অনুসন্ধানী নামবো।
আপনার মতামত লিখুন :