* ভুয়া দোকান দেখিয়ে ডিলার লাইসেন্স নিয়েছে ওমর ফারুক, আসাদুল ইসলাম।
* এমকে স্টোর ও এম এ সুপার শপের নামীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে টিসিবিতে দেয়া তথ্যর কোন মিল নেই।
* আওয়ামী লীগের আমলে সাবেক এমপি জাফরের সুপারিশে একই পরিবারের দুজন মিলেই পুরো উপজেলার ১৮ টি ইউনিয়ন ১টি পৌরসভার ডিলার নিয়ন্ত্রণ করতেন।
''কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় টিসিবি পণ্য বিতরণে নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে স্থানীয়সহ কয়েকটি ইউনিয়নের বাসিন্দারা। টিসিবি পণ্য বিতরণ না করে নিজেদের ব্যক্তিগত ব্যবসা করতে এসব পণ্যগুলো নানা কৌশলে লুটপাট করে সরিয়ে নেয় বলে জানা যায়। বিভিন্নভাবে ফিরিস্তি দেখিয়ে প্রতারণার দায়সারা করার অভিযোগ তুলেছে অহরহ হয়রানি হওয়া মানুষ। তবে কী পরিমাণ অনিয়ম হচ্ছে তা আপনি না দেখলে বুঝতে পারবেননা। নিয়ম বহির্ভূত কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে এমন অনিয়মকে প্রশ্রয় দেয়ায় সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের দায়ী করেছেন সুবিধা বঞ্চিত নিরীহ মানুষ। আসাদুল ইসলাম ও ওমর ফারুক মিলে আসল কোন মুদি দোকানি না হয়ে একতরফাভাবে তারা আওয়ামী লীগের প্রভাব কাটিয়ে ডিলার নিয়েছে বলেও জানাযায়। গত স্বৈরাচার সরকারের আমলে সাবেক এমপি বাটি জাফরের সুপারিশে এই দুজনের নামে ডিলার নিয়োগ হয়। তবে সরকার লাপাত্তা হলেও এসব অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া ডিলার কেন বাতিল হয়নি তা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে জনমনে। আওয়ামী লীগের আমলে যেমন লুটপাট ছিল তাদরে দুজনের নেতৃত্বে, এখনও এসব থামেনি। জানা নাই যে, আওয়ামী দোসরদের নেতৃত্ব এখনও বহাল তবিয়তে থাকার অদৃশ্য শক্তির কারণ কী?
* ডিলার দ্বী-খন্ডিত হওয়ার পরে দীর্ঘদিন ধরে লুটপাট করে খাওয়ার গোমর ফাঁস হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে।
* বর্তমানে তাদের নিয়ন্ত্রণে ১০ ইউনিয়নে টিসিবি পণ্য বিতরণ চললেও স্বস্তি নেই সাধারণ উপকার ভোগীদের।
* গ্রামের এসব অসহায় সাধারণ মানুষকে ফাঁক দিয়ে টিসিবি পণ্য থেকে সুবিধা বঞ্চিত করেছে তারা।
* পণ্য বিতরণের সময় নারী এবং অসহায় বয়স্ক মানুষের সাথে অসদাচরণ মারধর ও নারীদের শ্লীলতাহানির অভিযোগ রয়েছে।
অসহায় দিনমজুর রবি আলমের স্ত্রী তাসনিম আক্তার , সংসারের হাল টানতে নিয়মিত টানাপোড়েনে থাকেন। সরকারি টিসিবি পণ্য নিয়ে আগে চললেও এখন পুরাতন কার্ড বাতিল করে নতুন স্মার্ট কার্ডের বাহনা ধরে টিসিবি পণ্য দিচ্ছেনা বলে আকুতি জানান তাসনিম। তাসনিম আরও বলেন আমাদের পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়ন পরিষদে টিসিবি পণ্য বিতরণকারীরা প্রতিমাসে পণ্য বিতরণ করতে আসে। কিন্তু যাদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তাদের অধিকাংশ মানুষকে পণ্য না দিয়ে বিভিন্নজনকে পাঁচ বস্তা দশ বস্তা করে দিয়ে দেন। আমাদের কার্ড নবায়নের কথা বলে বলে ৫ মাস পর্যন্ত কোন টিসিবি পণ্য পাচ্ছিনা। সংসার চালাতে বর্তমানে হিমশিম খাচ্ছি। আমরা ইতিমধ্যে অনেকবার গেলেও আমাদেরকে লাঞ্ছিত করে তাড়িয়ে দেয়া হয় এম কে ষ্টোরের ও এম এ সুপার শপ নামের দুই টিসিবি ডিলার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলেন ভুক্তভোগী তাসনিম । তাসনিমের দাবী তারা সরকারের আগেও যেভাবে লুটপাট করেছে সরকার পরিবর্তনের পরেও সেইম। এসব থেকে আমরা পরিত্রাণ চাই। এবং আমরা নিয়মিত অসহায় মানুষ হিসেবে টিসিবি পণ্য চাই। আমাদেরকে না দিয়ে তারা প্রতিনিয়ত আজকে দিবে কালকে দিবে বলে বলে লোলুপ দেখাচ্ছে।
একইভাবে লৈক্যাচর ইউনিয়নেও এ টিসিবির নির্দেশনা মোতাবেক স্মার্ট কার্ডএ পণ্য বিক্রির পর বাকিরা পণ্য পাইনি বলে দাবী করেন টিসিবির পুরাতন কার্ডধারী সাধারণ জনগণ । এই ইউনিয়নের লোকজনও টিসিবির পণ্য বিক্রিতে নয় ছয় করার অভিযোগ তুলেছেন ওমর ফারুক ও আসাদুল আলম নামের দুই ডিলার মালিকের বিরুদ্ধে । এসব অভিযোগ করছেন সবচেয়ে বেশি যারা, তারা হলেন, স্থানীয় টিসিবি পণ্য থেকে সুবিধা বঞ্চিত প্রতিবন্ধী আবুল কালাম ও জাফর এবং কায়সার, কাসেম, রহমত উল্লাহ । তারা বলেন যে, লৈক্যারছর ইউনিয়নে পাঁচ হাজারেরও অধিক জনগণের বসবাস,এদের মধ্যে ছয়শত পরিবারকে কার্ড অনুযায়ী টিসিবির এসব পণ্য বিতরণের নিয়ম থাকলেও তা মানছেনা কতৃপক্ষ। তবে তারা দীর্ঘবছর ধরে এসব জালিয়াতি করে আসছে বলেও অভিযোগ তুলেন ভুক্তভোগীরা।
* স্মার্ট কার্ড থাকার পরেও নানা অজুহাতে পণ্য না দিয়ে দীর্ঘ অপেক্ষার পর তাড়িয়ে দেন পণ্য বিতরণে থাকা দায়িত্বরত লোকজন। তবে এসব পণ্য হঠাৎ গায়েব হওয়ার একটি অলৌকিক দৃশ্য বলে মনে করছেন অনেকেই।
* এক পরিবারে ১০, ২০ বস্তাও দখলে রেখে পণ্যগুলো নয়ছয় হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
সুত্র বলেছে, টিসিবি অফিস থেকে জানা যায় যে, জানুয়ারী মাসের বরাদ্দে যারা ৫০% পণ্য স্মার্ট কার্ড দিয়ে বিতরণ করেছেন তারা বাকী পণ্য পুরাতন টিসিবি কার্ড দিয়ে বিতরণ করবেন পুরাতন টিসিবি কার্ড না পাওয়া গেলে তাদের এনআইডি কার্ড দিয়ে পণ্য বিতরণ করতে বলা হয়েছে। কিন্তু লৈক্কারছর,হারবাং এলাকায় জনসাধারণরা বলছ ভিন্ন কথা ।স্মার্ট কার্ড দিয়ে পণ্য বিতরণের পর বাকি পণ্য সর্বোচ্চ ২০/৩০ জন কে দিয়ে বাকী পণ্য তারা বাহিরে বিক্রি করে দেয় ।যাহার ভিডিও বক্তব্যের ভিডিওফোটেজ রয়েছে প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত।
জানা যায় যে, দীর্ঘদিন ধরে হারবাং বাজার এলাকার একটি আওয়ামী লীগ পরিবারের দুজনের নেতৃত্বে ভুয়া দোকান দেখিয়ে টিসিবি ডিলার হাতিয়ে নেয়। এদের মধ্যে একটির নাম এম কে স্টোর এবং অপরটি এম এ সুপার শপ এর মালিক আসাদুল আলম ও ওমর ফারুক। এই দুজনের বিরুদ্ধে এতদিন আওয়ামীলীগের বিভিন্ন নেতার প্রভাব বিস্তারের ভয়ে কেউ মুখ না খুললেও কিন্তু সরকার পরিবর্তন হওয়ার পরে একের পর এক গুমর ফাঁস হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন মনিটরিং নেই বলে এমন বাজে একটি অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে জানান। তবে টিসিবির ডিলার এম এ সুপার শপ ও এমকে ষ্টোর এর মালিক ওমর ফারুক ও আসাদুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণের অভিযোগের যেন শেষ হচ্ছেনা বললেই চলে । এসব প্রতারণার আশ্রয় নেয়ার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কী দেখার কেউ নেই বলেও দাবী করেন স্থানীয় সুবিধা বঞ্চিত জনগণ।
স্থানীয় সুত্রে যায় যে, চকরিয়ায় হারবাং এলাকায় নিজদের নামে মুদির দোকান দেখিয়ে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ তথ্য জালিয়াতির মাধ্যমে টিসিবির ডিলারশীপ হাতিয়ে নেন একই পরিবারের দুজন। যাদের মধ্যে এমকে স্টোর বলে যে দোকান দেখানো হয়েছে সেটি একটি কাপড়ের দোকান, আর এম এ সুপার শপ বলে যে দোকানের কথা বলা হয়েছে সেটি পরিত্যাক্ত একটি গোডাউন। গোডাউনের সামনে একটি অকেজো ব্যানার টাঙানো রয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে একাধিক লোকের সাথে কথা বলে জানা যায় যে, ওমর ফারুকরা সবাই চট্টগ্রামে বসবাস করে। কিন্তু তারা মাঝে মাঝে এলাকায় এসে টিসিবি পণ্য বিতরণ করতে দেখা যায়। এসব টিসিবি পণ্য বিতরণ করতে গিয়ে বহু জালিয়াতির কারণে নিরীহ মানুষের সাথে নানা বিপত্তিও ঘটে । এরই প্রেক্ষিতে ১৩ মার্চ পণ্য বিতরণকালে সন্ধ্যায় এক বয়স্ক নারীকে পণ্য না দিয়ে মারধর করে তাড়িয়ে দেয়ারও অভিযোগ তুলেছে স্থানীয়রা। তবে এসব বিষয়ে ভয়ে প্রতিবেকের ক্যামরায় সাক্ষাৎ দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন পাশ্ববর্তী লোকজন।
এক পরিবারের দুজন ব্যক্তি টিসিবির ডিলার দখলে রেখে এমন নজিরবিহীন প্রতারনার আশ্রয় নিয়েছে কর্পেরেশন অব বাংলাদেশ ( টিসিবি) কর্তৃপক্ষের কাছে। এবং নানাবিধ জালিয়াতি করে কাগজ পত্র জমা দিয়ে লাইসেন্স নিয়ে ডিলার হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে এই দু'জনের বিরুদ্ধে।
জালিয়াতির এমন ভয়াবহ ঘটনাটি জানাজানি হলে হারবং,লৈককারছর, সুরাজপুর,মানিকপুর ও পশ্চিম বড় ভেওলা, দোলহাজারা ইউনিয়নের পণ্য সুবিধা বঞ্চিত জনগণ মিলেই জেলা প্রশাসক, উপজেলা প্রশাসন, টিসিবি অধিদপ্তরে অভিযোগ জমা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই ওমর ফারুক আসাদুল ইসলামের বিরুদ্ধে। তাদের দাবী যে গত স্বৈরাচারের আমলে ফারুক এবং আসাদুল ইসলাম মিলে পণ্যগুলো কয়েকজনকে বিতরণ করার পর বাকি সবগুলো লুটপাট করার সত্যতা পেয়েছি। নানাভাবে হয়রানি হওয়ার পরেও উপজেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কোন সঠিক তদারকি না থাকায় তারা সাধারণ মানুষের রক্ত চুষে খাচ্ছে।
উল্যেখিত বিষয়ে সাংবাদিকদে সাথে একাধিক ভিডিও সাক্ষাৎ দিয়েছে সাধারণ মানুষ। রহিমা বেগমন নামে ভুক্তভোগী বলেন, ওমর ফারুক ও আসাদুল ইসলাম নামের এই দুইজনের বিরুদ্ধে, ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ঢাকাস্থ চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ জমা দিবেন বলেও জানান। এবং পাশাপাশি এই দুইজন দোসর ডিলারদের বাতিল করার জন্যেও আবেদন করার কথা জানান। আসাদুল ইসলাম ও ওমর ফারুকে বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে লিখিত অভিযোগ ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসক বরাবর দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট টিসিবি অধিদপ্তরসহ কতৃপক্ষেরও দ্বারস্থ হবে বলে জানিয়েছেন এই রহিমা বেগম।
লিখিত অভিযোগটিতে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত এই দুজনের মালিকানাধীন ডিলারের নামীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে তাদের নাম স্থান ঠিক আছে কিনা, এবং দুই ব্যক্তি কর্তৃক টিসিবির ডিলারশীপ পেতে দাখিল করা যাবতীয় ডকুমেন্টস ও দেখানো দুটি নামের সাথে মিল আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে পুনরায় তদন্তের মাধ্যমে যাছাই করতে টিসিবির চেয়ারম্যানের জরুরি হস্তক্ষেপ চেয়েও আবেদনটি করেন । তবে হারবাঙ বাজারের তাদের দেয়া তথ্য মতে এসব দোকানের কোন অস্তিত্ব নেই। পাশাপাশি তারা বিভিন্ন জায়গায় পরিত্যক্ত গোডাউন থেকে মালামালগুলো সাপ্লাই দেন। এবং প্রকৃত কোন মুদি দোকানি ব্যবসায়ী নই বলেও দাবী করেন এই অভিযোগে।
ভুয়া তথ্যে এবং তাদের জালিয়াতির গোমর ফাঁস হওয়ায় ইতিমধ্যে নতুন নিয়োগ পাওয়া স্থানীয় আরেক ডিলারের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছেও বলেও জানা যায়। তবে প্রতিবেদক সরেজমিনে গিয়ে টানা অনুসন্ধানে একের পর এক লোমহর্ষক তথ্য পাই এস কে স্টোর এবং এস এ সুপার শপের নামীয় দুই টিসিবি ডিলার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। তারা দীর্ঘদিন যাবৎ এমন জাল জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের আমল থেকেই এমপি জাফরের প্রভাব বিস্তার করে সাধারণ জনগণকে হয়রানি ও টিসিবি পণ্য প্রাপ্তি থেকে জিম্মি করে রেখে। তারা সাবেক এমপি জাফরের হাত ধরে চকরিয়ায় টিসিবির ডিলারশীপ হাতিয়ে নিতে কাগজ পত্র এবং লাইসেন্স নিতে নজিরবিহীন এমন জালিয়াতির কান্ড ঘটিয়েছে। তবে এসব কেউ না জানলেও সাধারণ মানুষ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পর থেকেই তাদের এমন জালিয়াতির চিত্র উঠে এসেছে।
অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে এসকে স্টোর নামীয় প্রতিষ্ঠান ও এস এ সুপার শপের সত্তাধীকারী আসাদুল ইসলাম ও ওমর ফারুক সাথে যোগাযোগ করতে হারবাং বাজারে তথা তাদের দেয়া যেসব প্রতিষ্ঠানে টিসিবির ডিলার স্থান, সেখান গিয়েও তাদের খুঁজ পাওয়া যায়নি। পরে তাদের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে বিষয়টি জানার জন্য কল করা হলেও কল রিসিভ না করায় কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি তাদের হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠিয়েও কোন উত্তর আসেনি।
এবিষয়ে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ( ইউএনও) আতিকুর রহমানের নিকট অবগত করা হলে বলেন, এসব বিষয়ে জানা নাই, তবে কেউ যদি অভিযোগ করে,তাহলে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :